India US Relation

আমেরিকার উপর কি বেশি ভরসা করে ফেলছে ভারত? বন্ধুর ৯০ বছরের পুরনো নীতিই কি নয়াদিল্লির ভবিষ্যৎ?

বিভিন্ন দেশের ক্রমাগত শক্তিবৃদ্ধির ফলে বিশ্ব ক্রমে দ্বিমেরুকেন্দ্রিক কাঠামোর দিকে এগিয়ে চলেছে। আমেরিকা এখন আর একা নয়, শক্তি বৃদ্ধি করে তার প্রায় কাছাকাছি পৌঁছে গিয়েছে চিন।

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
কলকাতা শেষ আপডেট: ২২ জুন ২০২৪ ০৮:০১
Share:
০১ ২৬

নব্বইয়ের দশকে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর বিশ্ব এক মেরুকেন্দ্রিক হয়ে পড়েছে। সবচেয়ে শক্তিশালী দেশ আমেরিকা। গোটা বিশ্বের উপর কার্যত ছড়ি ঘোরায় তারা। তারাই বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী অর্থনীতির অধিকারী।

০২ ২৬

সব দেশ অবশ্য আমেরিকার এই ‘একার রাজত্ব’ মানতে রাজি নয়। নিজেদের মতো করে শক্তি বৃদ্ধি করে চলেছে তারা। আমেরিকার সমান না হলেও শক্তিশালী হিসাবে বর্তমানে একাধিক দেশের নাম উঠে এসেছে।

Advertisement
০৩ ২৬

অনেকের মতে, বিভিন্ন দেশের ক্রমাগত শক্তিবৃদ্ধির ফলে বিশ্ব ক্রমে দ্বিমেরুকেন্দ্রিক কাঠামোর দিকে এগিয়ে চলেছে। আমেরিকা এখন আর একা নয়, শক্তি বৃদ্ধি করে তার প্রায় কাছাকাছি পৌঁছে গিয়েছে চিন। ভারত, ফ্রান্স, ইটালি, জাপান, জার্মানি, রাশিয়ার মতো দেশগুলিও খুব পিছিয়ে নেই।

০৪ ২৬

আন্তর্জাতিক এই রাজনীতির ক্ষেত্রে ভারতের নীতি বরাবরই নিরপেক্ষ। যে কোনও বিতর্কেই ভারত এই অবস্থান নিয়ে থাকে। কোনও একটি দেশের প্রতি একতরফা সমর্থন বা একতরফা বিরোধিতা ভারত করে না।

০৫ ২৬

গত কয়েক দশকে আমেরিকার পাশাপাশি শক্তিশালী দেশ হিসাবে একাধিক নাম উঠে এলেও অনেকেই এ ক্ষেত্রে চিনকে একক ভাবে আমেরিকার প্রতিদ্বন্দ্বী মেনে নিয়েছে। এই মুহূর্তে বিশ্বের দ্বিতীয় শক্তিশালী অর্থনীতির অধিকারী তারা। আমেরিকার ঠিক পরেই।

০৬ ২৬

কয়েকটি সমীক্ষায় উঠে এসেছে, বহু মেরু নয়, আগামী দিনে বিশ্ব আসলে আবার দ্বিমেরুকেন্দ্রিক হিসাবে মাথা তুলতে চলেছে। যার এক দিকে থাকবে আমেরিকা, অন্য দিকে চিন। সে ক্ষেত্রে আবার এই দুই শক্তির মধ্যে ঠান্ডা লড়াইয়ের পরিস্থিতিও তৈরি হতে পারে বলে মনে করছেন অনেকে।

০৭ ২৬

প্রশ্ন হল, আমেরিকা এবং চিনের নেতৃত্বে বিশ্ব যদি সত্যিই আবার দ্বিমেরুতে বিভাজিত হয়, সে ক্ষেত্রে ভারতের অবস্থান কী হবে? কী করা উচিত হবে ভারতের? আসন্ন পরিস্থিতিতে নয়াদিল্লির বর্তমান নীতি কি আদৌ কাজে লাগবে?

০৮ ২৬

চিন ভারতের পড়শি হলেও তাদের সঙ্গে নয়াদিল্লির সম্পর্ক আদায়-কাঁচকলায়। সীমান্ত এলাকায় বার বার চিন এবং ভারতের সেনাবাহিনীর মধ্যে সংঘর্ষের খবর পাওয়া যায়। তুলনায় আমেরিকার সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক অনেক বেশি ঘনিষ্ঠ।

০৯ ২৬

বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গোষ্ঠীর সঙ্গে ভারতের যোগ আসলে নয়াদিল্লির আন্তর্জাতিক নীতি স্পষ্ট করে। যেমন, ভারত কোয়াডের অন্যতম সদস্য। আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া এবং জাপানের সঙ্গে কোয়াডে ইন্দো-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের হিতাহিত প্রসঙ্গে আলোচনা করে নয়াদিল্লি।

১০ ২৬

একই ভাবে ভারত আবার আমেরিকার প্রতিদ্বন্দ্বী চিন, রাশিয়ার সঙ্গে ব্রিকস নামক সংগঠনেও শামিল। ব্রিকসের সদস্য দেশের মধ্যে দক্ষিণ আফ্রিকা এবং ব্রাজিলও রয়েছে। ২০২৪ সালে এই সংগঠনে মিশর, ইরান, ইথিওপিয়া, সৌদি আরব এবং সংযুক্ত আরব আমিরশাহিকেও আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।

১১ ২৬

অর্থাৎ, আমেরিকার পক্ষে এবং বিপক্ষে থাকা বিভিন্ন দেশের সঙ্গেই বিভিন্ন রকম সহযোগিতায় আবদ্ধ ভারত। আন্তর্জাতিক নীতির ক্ষেত্রে তারা কোনও এক পক্ষের দিকে ঝুঁকে নেই।

১২ ২৬

এই প্রেক্ষাপটে ১৯৬২ সালের ইতিহাস ফিরে দেখা দরকার। ভারত এবং চিন সে বছর যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েছিল। চিনের সঙ্গে যুদ্ধ চলাকালীন ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু আমেরিকার সাহায্য চেয়েছিলেন।

১৩ ২৬

চিনের মোকাবিলার জন্য আমেরিকার কাছ থেকে আকাশপথে সাহায্য চেয়েছিল ভারত। কিন্তু আমেরিকা নেহরুকে ‘না’ করে দিয়েছিল। ওয়াশিংটনের যুক্তি ছিল, ভারতের সঙ্গে আমেরিকার কোনও আনুষ্ঠানিক প্রতিরক্ষামূলক সম্পর্ক নেই। তাই এই যুদ্ধে তারা নাক গলাতে চায় না।

১৪ ২৬

অর্থাৎ, প্রয়োজনের সময়ে মুখ ফিরিয়ে নেওয়ার প্রবণতা রয়েছে আমেরিকার। অতীতে তার সাক্ষীও থেকেছে ভারত। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময়ে আমেরিকা ভারতের পাশে থাকেনি। বরং তারা পাকিস্তানকে সাহায্য করেছিল।

১৫ ২৬

শুধু ভারত নয়, অন্যান্য দেশের ক্ষেত্রেও আমেরিকার এই মুখ ফিরিয়ে নেওয়ার প্রবণতা লক্ষ করা গিয়েছে বার বার। আন্তর্জাতিক ঘটনাপ্রবাহের দিকে নজর রাখলে দেখা যায়, কোনও শক্তিশালী প্রতিদ্বন্দ্বীর বিরুদ্ধেই সরাসরি অস্ত্র ধরেনি ওয়াশিংটন। বরং তাদের প্রবণতা, অন্য দেশকে দিয়ে যুদ্ধ করানো এবং পরোক্ষে সেই দেশকে সাহায্য করা।

১৬ ২৬

মেরুকেন্দ্রিক বিশ্বে ক্ষমতায়নের সূচক কিন্তু শুধু অর্থনীতি নয়। শক্তিশালী অর্থনীতির পাশাপাশি কোনও দেশ আশপাশের কতগুলি দেশের সমর্থন পাচ্ছে, সমর্থনকারী বন্ধু দেশগুলির সামর্থ্য কতটা, বিশ্বের উপর ওই দেশের প্রভাব কতটা— ইত্যাদি নানা বিষয় ক্ষমতাকে সুনিশ্চিত করে।

১৭ ২৬

চিন যদি আমেরিকাকে ছাপিয়ে বিশ্বের এক নম্বর হতে চায়, তাদের প্রাথমিক প্রবণতা হওয়া উচিত আশপাশের এলাকাকে নিজেদের পক্ষে রাখা। সেই কারণেই গত কয়েক দশকে ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলে প্রতিপত্তি বৃদ্ধি করেছে বেজিং।

১৮ ২৬

আমেরিকা যে সময়ে সোভিয়েত ইউনিয়নের সঙ্গে ঠান্ডা লড়াইয়ে লিপ্ত ছিল, তখন ভারতের পক্ষে নিরপেক্ষ নীতি গ্রহণ করা এবং তা মেনে চলা অপেক্ষাকৃত সহজ ছিল। কারণ দু’টি দেশই ভারত থেকে অনেক দূরে।

১৯ ২৬

পর্যবেক্ষকেরা বলছেন, সাম্প্রতিক পরিস্থিতিতে আমেরিকা এবং চিনের মধ্যে বিশ্বশক্তি কেন্দ্রীভূত হলে ভারতের পক্ষে নিরপেক্ষ থাকা কঠিন হবে। কারণ চিন তার পড়শি। চিনের সঙ্গে দীর্ঘ সীমান্ত রয়েছে ভারতের। দূরের দেশ আমেরিকার কাছ থেকে সে ক্ষেত্রে সাহায্যের প্রত্যাশা না করাই শ্রেয়।

২০ ২৬

পর্যবেক্ষকেরা কেউ কেউ আবার এ-ও বলছেন, আমেরিকা নির্ভরশীলতা কমিয়ে ভারতের উচিত বাস্তব পরিস্থিতি বিবেচনা করা এবং সন্তর্পণে আন্তর্জাতিক নীতি স্থির করা। প্রয়োজনে চিনকেও হাতে রাখতে হতে পারে নয়াদিল্লির।

২১ ২৬

বর্তমান পরিস্থিতিতে ভারতের সমস্যা না হলেও আগামী দিনের নিশ্চয়তা দিতে পারছেন না কেউ। আমেরিকায় নির্বাচন আসন্ন। সেখানে ডোনাল্ড ট্রাম্প আবার ক্ষমতায় এলে তাঁর নীতি ভিন্ন হতে পারে।

২২ ২৬

বর্তমানে আমেরিকা-সহ দেশগুলি ইন্দো-প্রশান্ত মহাসাগরীয় এলাকায় বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে। ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত হচ্ছে এই অঞ্চলের উন্নয়নশীল দেশগুলির হাতে। ট্রাম্প ক্ষমতায় এলে এই অঞ্চলকে এতটা গুরুত্ব না-ও দিতে পারেন।

২৩ ২৬

ট্রাম্পের আমেরিকা ইন্দো-প্রশান্ত মহাসাগরীয় এলাকা থেকে সরে গেলে চিন ছাড়া ভারতের সামনে অন্য কোনও বিকল্প থাকবে না। তখন নতুন করে ঘুঁটি সাজাতে হবে নয়াদিল্লিকে।

২৪ ২৬

বিশেষজ্ঞদের মতে, এই ধরনের পরিস্থিতিতে আমেরিকার ৯০ বছরের পুরনো নীতি আপন করে নেওয়া ভারতের জন্য আদর্শ হতে পারে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তী সময়ে আমেরিকা যে নীতি নিয়েছিল, তা ভারতের জন্য হতে পারে সবচেয়ে নিরাপদ।

২৫ ২৬

আমেরিকা সে সময়ে জোট-নিরপেক্ষ নীতি (এনএএম) অনুসরণ করেছিল। তাদের লক্ষ্য ছিল শুধুমাত্র নিজেদের উন্নতি। কোনও দেশের সঙ্গে বন্ধুত্ব বা শত্রুতা তারা করেনি। শুধু নিজেদের উন্নতিকে অগ্রাধিকার দিয়েছে। তার প্রয়োজনে যে দিকে ঝুঁকতে হয়েছে, আমেরিকা সে দিকে ঝুঁকেছে।

২৬ ২৬

চিন-আমেরিকার দ্বিমেরু বিভাজনে ৯০ বছরের পুরনো সেই নীতিই ভারতের পক্ষে উপযোগী হতে পারে বলে মত অনেকের। আমেরিকা এবং তার বন্ধু দেশগুলির সঙ্গে বেশি ঘনিষ্ঠতা বা চিন এবং তার বন্ধু দেশগুলির সঙ্গে বেশি দূরত্ব— কোনওটাই নয়াদিল্লির পক্ষে স্বস্তির হবে না। পরিস্থিতি অনুযায়ী, সব দিক বিবেচনা করে তাদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

সব ছবি: সংগৃহীত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on:
আরও গ্যালারি
Advertisement