ইন্টারনেট এবং তথ্যপ্রযুক্তির যুগে গুগ্লের অবদান অনস্বীকার্য। বর্তমানে ইন্টারনেট ব্যবহারকে নতুন রূপ দিয়েছে আমেরিকার তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থা। তবে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন অভিযোগের সম্মুখীনও হতে হয়েছে এই সংস্থাকে। দিতে হয়েছে জরিমানা।
অনুমান করা হয়, গত ১০ বছরে বিবিধ অভিযোগের ভিত্তিতে গুগ্লকে প্রায় ১৪০০ কোটি ডলার জরিমানা করা হয়েছে।
তবে এখানেই শেষ নয়। শোনা যাচ্ছে আমেরিকার তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থার থেকে রাশিয়া এত টাকা জরিমানা করেছে, যা গোটা বিশ্বের মোট সম্পত্তির থেকেও বেশি!
অবিশ্বাস্য মনে হলেও ঘটেছে এমনটাই। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সূত্রকে উদ্ধৃত করে রাশিয়ার রাষ্ট্রায়ত্ত সংবাদমাধ্যম আরবিসি নিউজ়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে যে, জরিমানা বাবদ গুগ্লের থেকে ২ আনডিসিলিয়ন রুবল (রাশিয়ার মুদ্রা) বা ২.৫ ডেসিলিয়ন ডলার পায় রাশিয়া। এক ডেসিলিয়নের অর্থ ১০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০।
এক আনডিসিলিয়ন হল একের পর ৬৬টি শূন্য। অন্য দিকে, বিশ্বব্যাঙ্কের তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বব্যাপী জিডিপি ১০০ লক্ষ কোটি ডলারের। যার অর্থ রাশিয়া যে পরিমাণ অর্থ গুগ্লকে দিতে বলছে, সেই অর্থ পৃথিবীতে বিদ্যমান মোট অর্থের চেয়েও বেশি।
কিন্তু কেন গুগ্লের থেকে জরিমানা বাবদ এত টাকা দাবি করেছে রাশিয়া? ঘটনার সূত্রপাত চার বছর আগে, ২০২০ সালে। আরবিসি নিউজ়ের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে, প্রায় চার বছর আগে ‘নিষেধাজ্ঞা আইন এবং বাণিজ্য লঙ্ঘন’-এর অভিযোগে ক্রেমলিনপন্থী এবং রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত রুশ সংবাদমাধ্যম সারগ্রাদ টিভি এবং আরআইএ ফ্যানের ইউটিউব অ্যাকাউন্ট বাতিল করে গুগ্ল।
এর পরেই পদক্ষেপ করে রাশিয়া। মামলা করা হয় গুগ্লের বিরুদ্ধে। এর পরে মস্কো আদালত গুগল্কে অ্যাকাউন্টগুলি পুনরায় চালু করার নির্দেশ দেয়। পাশাপাশি, জরিমানাও করা হয়।
আদালত এ-ও জানিয়ে দেয় তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থা যদি আদালতের নির্দেশ বাস্তবায়নে ব্যর্থ হয়, তা হলে তাদের জরিমানার পরিমাণ ক্রমবর্ধমান হারে বাড়বে।
রায়ে বলা হয়েছিল, জরিমানা প্রয়োগের তারিখ থেকে নয় মাসের মধ্যে গুগ্লকে সেই টাকা রাশিয়ার হাতে তুলে দিতে হবে। ওই সময়ের মধ্যে জরিমানা না দিলে দৈনিক এক লক্ষ রুবল করে জরিমানা দিতে হবে তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থাকে।
তখন সেই জরিমানার টাকা দেওয়া গুগ্লের সাধ্যের মধ্যে ছিল। তবে ২০২২ সালে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর পরিস্থিতি বিগড়ে যায় আরও।
সারগ্রাদ টিভি এবং আরআইএ ফ্যানের ইউটিউব চ্যানেল ছাড়াও এনটিভি, রাশিয়া ২৪, আরটি, স্পুটনিক-সহ রাশিয়ার মোট ১৭টি রাষ্ট্রায়ত্ত্ব সংবাদমাধ্যমের ইউটিউব অ্যাকাউন্ট ব্লক করে দেয়। এর পর আরও মামলা চাপে গুগ্লের ঘাড়ে। বৃদ্ধি পায় জরিমানার অঙ্ক।
ব্রিটিশ কারিগরি সংবাদপত্র ‘দ্য রেজিস্টার’ জানিয়েছে, ২০২০ থেকে শুরু করে গত চার বছরে সব মিলিয়ে জরিমানার অঙ্ক গিয়ে দাঁড়িয়েছে ২ আনডিসিলিয়ন রুবল।
রাশিয়ার সংবাদমাধ্যম ‘তাস’কে ‘এইচএসই ইনস্টিটিউট অফ এডুকেশন’-এর বিশেষজ্ঞ রোমান ইয়ানকোভস্কি বলেছেন, ‘‘স্পষ্টতই গুগ্ল এই জরিমানা দিতে পারবে না। সংস্থার থেকে এই টাকা পুনরুদ্ধার করা সম্ভব নয় রাশিয়ার পক্ষে।’’
রাশিয়ায় থাকা গুগ্লের আইনি শাখা গুগ্ল এলএলসি ২০২২ সালেই নিজেদের দেউলিয়া বলে দাবি করেছিল। রাশিয়ার গুগ্লের সম্পত্তির পরিমাণ ৩৫০ কোটি রুবল হলেও ঋণের পরিমাণ তখনই ১৯০০ কোটি রুবলের বেশি হয়ে গিয়েছিল।
বিশ্বের মোট জিডিপির হিসাব বলছে, গুগ্লের পক্ষে রাশিয়ার হাতে জরিমানার ওই টাকা তুলে দেওয়া সম্ভব নয়। তাই রাশিয়া এখন আমেরিকার তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থার বিরুদ্ধে কী পদক্ষেপ করে, সেটাই দেখার।
উল্লেখ্য, কয়েক দিন আগেই ১৫ বছর ধরে চলা আইনি লড়াইয়ে হেরে গিয়ে জরিমানা নিয়ে অস্বস্তিতে পড়েছিল গুগ্ল। তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থার পক্ষ থেকে ব্রিটিশ দম্পতিকে জরিমানা হিসাবে ২৪০ কোটি পাউন্ড (২৬,১৭২ কোটি টাকা) দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিল আদালত।
ব্রিটিশ ওই দম্পতির অভিযোগ ছিল, নিজেদের আধিপত্যের অপব্যবহার করেছে গুগল। বাজারকে প্রভাবিত করে নির্দিষ্ট পণ্য কিনতে ক্রেতাকে বাধ্য করেছে ওই তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থা। ১৫ বছর আগে দম্পতি মামলাটি করেন।
২০১৭ সালে ইউরোপীয় কমিশন গুগ্লকে জরিমানাস্বরূপ ওই টাকা মেটানোর নির্দেশ দিয়েছিল। সেই নির্দেশ খারিজের আর্জি জানিয়ে ‘ইউরোপিয়ান কোর্ট অফ জাস্টিস’-এর দ্বারস্থ হয়েছিল গুগ্ল।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির প্রতিবেদন অনুযায়ী, সেপ্টেম্বরে তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থার ওই আর্জি খারিজ করে দিয়েছে ইউরোপের শীর্ষ আদালত। জানিয়ে দিয়েছে, ইউরোপীয় কমিশনের নির্দেশ মতো জরিমানার টাকা দম্পতির হাতে তুলে দিতেই হবে গুগ্লকে। গুগ্লের তরফে জানানো হয়েছে, তারা ওই রায়ে হতাশ।