নতুন দেশ, নতুন জায়গায় বিলাসবহুল জীবনযাপন, নতুন মানুষের সঙ্গ, নানা আকর্ষণীয় স্থানে ভ্রমণের স্বপ্ন। এ সবের হাতছানি এড়াতে না পেরে ইউরোপের ছোট ছোট দেশে সংসার পাতছেন ভারতীয় দম্পতিরা।
উচ্চ আয়ের সুযোগ ভারতে বেশি থাকা সত্ত্বেও ইউরোপের দেশগুলিতে চাকরি করতে যাওয়ার ঝোঁক বাড়ছে ভারতীয়দের। এর প্রধান কারণ হল, বেশি টাকা আয় করলেও ভারতে যে ধরনের সুযোগ-সুবিধা পাওয়া যায়, সেই তুলনায় ইউরোপের ছোট দেশের জীবনযাত্রার মান অনেকটাই উন্নত।
২০২০ সালে বেঙ্গালুরুর প্রতীক গুপ্ত এবং নেহা মহেশ্বরী চলে আসেন ইউরোপের ছোট্ট দেশ লুক্সেমবার্গে। মাথাপিছু আয়ের নিরিখে বিশ্বের বহু তাবড় দেশকে পিছনে ঠেলে দিয়েছে লুক্সেমবার্গ।
জিডিপির ওপর ভিত্তি করে আন্তর্জাতিক অর্থ ভান্ডার (আইএমএফ) চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে বিশ্বের শীর্ষ ১০টি ধনী দেশের তালিকা প্রকাশ করেছে।
তালিকা বলছে, পৃথিবীর সবচেয়ে ধনী দেশ লুক্সেমবার্গ। সমৃদ্ধির দিক থেকে আমেরিকা ও চিনকে পিছনে ফেলেছে আয়তনে ক্ষুদ্র এই দেশটি।
ছোট্ট দেশ হলেও লুক্সেমবার্গের মোট অভ্যন্তরীণ আয় (জিডিপি) প্রায় ১ কোটি ১৮ লক্ষ ৭০ হাজার টাকা। ইউরোপের সবচেয়ে শক্তিশালী অর্থনীতিও লুক্সেমবার্গেরই। ভাল বেতনের জন্য চাকরিসূত্রে এ দেশে বসবাস করছেন বহু বিদেশিও।
ছবির মতো সাজানো এই দেশ। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর। পর্যটকদের স্বপ্নের দেশ। তাই প্রতীক ও নেহা সে দেশে গিয়ে এমন জীবনযাপন করতে শুরু করেছেন যার স্বপ্ন অনেক ভারতীয়ই দেখেন।
এখানে আসার কয়েক বছরের মধ্যেই প্রতীক ও নেহা ইউরোপীয় ধাঁচে নিজেদের জীবন সাজিয়ে-গুছিয়ে নিতে পেরেছেন। বিলাসবহুল গাড়ি, ইউরোপের নানা দেশ ঘুরে দেখার মতো সব স্বপ্নই পূরণ করে ফেলছেন এই দম্পতি।
এই দম্পতি স্বীকার করেছেন যে, ভারত, আমিরশাহি কিংবা আমেরিকার যে কোনও শহরে বসবাস করলে তাঁরা অনেক বেশি আয় করার সুযোগ পেতেন। কিন্তু উচ্চ মানের জীবনের স্বাদ পেতে হলে ইউরোপের দেশগুলির মধ্যে লুক্সেমবার্গকেই তালিকার সবচেয়ে উপরে রেখেছেন তাঁরা।
লুক্সেমবার্গে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা অন্যান্য দেশের তুলনায় অনেক বেশি। এখানকার শিক্ষা এবং স্বাস্থ্য পরিষেবার তুলনা হয় না। সম্পূর্ণ বিনামূল্যে গণপরিবহণ ব্যবহার করেন নাগরিকেরা।
জনসংখ্যা মোটে ৬ লক্ষ ৬০ হাজার। সরকারি পরিসংখ্যান বলছে, লুক্সেমবার্গের একজন বাসিন্দার মাসে সর্বনিম্ন মজুরি ভারতীয় মুদ্রায় ২ লক্ষ ২৫ হাজার টাকা।
২০২২ সালে ইউরোপীয় ইউনিয়ন একটি সমীক্ষা চালায়। সেই পরিসংখ্যান অনুযায়ী সে দেশের এক জন শ্রমিকের গড় বার্ষিক আয় ছিল ৪১ লক্ষ ২০ হাজার টাকার বেশি। মাথাপিছু মজুরির নিরিখে ইউরোপীয় ইউনিয়নে এটিই সর্বোচ্চ।
অপেক্ষাকৃত স্বল্প হারের কর্পোরেট কর, সুবিধাজনক স্বাস্থ্য পরিষেবার জন্য এখানকার বাসিন্দাদের মাথাপিছু আয় বেশি। সেই নিরিখে ২০২৪ সালে বিশ্বের সবচেয়ে ধনী দেশ হয়ে উঠেছে লুক্সেমবার্গ।
আয়ের প্রায় ২৮ শতাংশ করের জন্য ব্যয় করতে হয় নাগরিকদের। তাঁদের ব্যক্তিগত উপার্জনের ৩ শতাংশ সরকারি স্বাস্থ্য বিমা তহবিলে জমা করা বাধ্যতামূলক হলেও এর বিনিময়ে তাঁরা যে ধরনের পরিষেবা পান তা অন্য কোথাও পাওয়া যায় না বলেই সংবাদমাধ্যমে জানিয়েছেন ওই ভারতীয় দম্পতি।
দাঁতের চিকিৎসা বাদ দিয়ে স্বাস্থ্যসেবা একেবারে বিনামূল্যে পাওয়া যায় এই দেশে।
প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের নিরিখেও লুক্সেমবার্গের জুড়ি মেলা ভার। আধুনিক নগরায়নের পরেও লুক্সেমবার্গে সবুজের সমারোহ। সেই সঙ্গে রয়েছে অসংখ্য ঐতিহাসিক নিদর্শন।
রাজধানী লুক্সেমবার্গ সিটির আনাচকানাচে থাকা স্থাপত্যশিল্পের নানা নিদর্শন দেখতে প্রতি বছর ঢল নামে দেশ-বিদেশের পর্যটকদের।
কম খরচে উন্নত উচ্চশিক্ষা ও নানা সুযোগ-সুবিধার কারণে মেধাবী শিক্ষার্থীদের পছন্দের তালিকায় রয়েছে দেশটি।
লুক্সেমবার্গে বিদেশি গাড়ির দামও ভারতের তুলনায় বেশ কম। বিশেষত জার্মান সংস্থার গাড়িগুলির।