একের পর এক রকেট এবং বিমান হামলা চালালেও এখনও পর্যন্ত গাজ়া ভূখণ্ডে ঢুকে ‘গ্রাউন্ড অপারেশন’ চালায়নি ইজ়রায়েল। গাজ়ায় এ বার স্থলপথে ঢুকে হামলা চালানো হবে হামাসের ডেরায়, বার বার এমনই হুঁশিয়ারি দিচ্ছেন ইজ়রায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু। কিন্তু ৭ অক্টোবর হামাসের হামলার পর কেটে গিয়েছে প্রায় দু’সপ্তাহ। তার পরেও কেন এখনও গাজ়ায় স্থলপথে হামলা চালাচ্ছে না ইজ়রায়েল?
বেশ কয়েকটি রিপোর্ট বলছে, গাজ়ায় ঢুকে ‘গ্রাউন্ড অপারেশন’ চালানো ইজ়রায়েলের পক্ষে বেশ চ্যালেঞ্জিং হয়ে উঠতে পারে। কোথায় এই চ্যালেঞ্জ? ওই রিপোর্টগুলিতে দাবি করা হচ্ছে, গাজ়া উপর থেকে একটি সাজানো গোছানো শহর (বর্তমানে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে) হলেও, এই শহরের নীচে মৃত্যুফাঁদ তৈরি করে রেখেছে হামাস। গোটা শহরটিই সুড়ঙ্গের জালের উপর দাঁড়িয়ে। আর এই সুড়ঙ্গগুলিই ইজ়রায়েলি সেনাদের পক্ষে ঘাতক হয়ে উঠতে পারে।
এই সুড়ঙ্গগুলি বিস্ফোরক মজুত করা, সুড়ঙ্গগুলি থেকে লুকিয়ে হামলা চালানো হামাসের বাঁহাতের কাজ। সুড়ঙ্গগুলি কোথায় শুরু, কোথায় শেষ, তার হদিস পাওয়া খুবই মুশকিল। আর এই সব কারণই গাজ়া ইজ়রায়েলি সেনাদের কাছে অন্যতম চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠতে পারে।
তবে শুধু এই কারণেই যে ‘গ্রাউন্ড অপারেশন’ চালানো হচ্ছে না, এমনটা নয়। এর নেপথ্যে আরও কারণ রয়েছে বলেও মনে করা হচ্ছে।
ইজ়রায়েল বার বার হুঁশিয়ারি দিয়েছে, অপহৃতদের না ছাড়লে সমূলে খতম করে দেওয়া হবে হামাসকে। সেইসঙ্গে গাজ়ায় হামলার তেজ আরও বাড়ানো হবে। হামাসও পাল্টা হুঁশিয়ারি দিয়েছে, হামলা না থামালে অপহৃতদের ছাড়া হবে না। ফলে সামরিক সংঘর্ষের সমান্তরালে একটি ‘মানসিক লড়াই’ও চলছে দু’পক্ষের মধ্যে।
হামাসকে হাতে মারার পাশাপাশি ভাতে মারার কাজও করছে ইজ়রায়েল। তার পরেও বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে, তাদের এত বিপুল সামরিক শক্তি থাকা সত্ত্বেও কেন হামাসের ডেরায় ঢুকে অভিযান চালাচ্ছে না ইজ়রায়েল?
ইজ়রায়েল যখন পুরোদস্তুর ‘গ্রাউন্ড অপারেশন’ চালানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে, তখন কোন গোপন কারণ নেতানিয়াহুর দেশকে আটকাচ্ছে? বেশ কয়েকটি রিপোর্টে দাবি করা হচ্ছে, আমেরিকা, ইউরোপের বেশ কিছু দেশ গাজ়ায় ‘গ্রাউন্ড অপারেশন’ না চালানোর জন্য চাপ সৃষ্টি করছে। কারণ এই দেশগুলি মনে করছে, ইজ়রায়েল যদি স্থলপথে সামরিক অভিযান শুরু করে, তা হলে হামাসের হাতে অপহৃত নাগরিকদের মুক্তির বিষয়টি অনেক জটিল হয়ে উঠবে।
তবে শুক্রবারই আমেরিকার দুই নাগরিককে মুক্তি দিয়েছে হামাস। বাকিদের ভবিষ্যৎ কী, তা নিয়েই এখন আশঙ্কা বাড়ছে ইজ়রায়েলে। আমেরিকার দুই নাগরিকের মুক্তির বিষয়ে হামাসের তরফে দাবি করা হয়েছে, কাতার এই রেহাইয়ের মধ্যস্থতা করেছিল। তার পরই মুক্তি দেওয়া হয়েছে আমেরিকার দুই নাগরিককে।
হামাসের সশস্ত্র ব্রিগেড ইজ় অল দিন অল কসম-এর মুখপাত্র আবু উবেইদা শুক্রবার এক বিবৃতি জারি করে জানিয়েছেন, আমেরিকার নাগরিকদের মুক্তি দেওয়ার জন্য কাতারের তরফে মধ্যস্থতা করা হয়েছে। মানবিক কারণে ওই দু’জনকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে।
‘দ্য টাইমস অব ইজ়রায়েল’কে এক সামরিক বিশেষজ্ঞ জানিয়েছেন, পশ্চিমের দেশগুলি ইজ়রায়েলের উপর চাপ সৃষ্টি করছে যাতে তারা গাজ়ায় হামলা বন্ধ করে। কারণ হামাসের হাতে ইউরোপের বেশ কয়েকটি দেশের নাগরিক বন্দি রয়েছেন। তাঁদের যাতে কোনও রকম ক্ষতি না হয়, তাই পশ্চিমি দেশগুলি এই ‘গ্রাউন্ড অপারেশন’ আটকানোর চেষ্টা করছে।
শুক্রবারই আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডো বাইডেন বলেছেন, যত ক্ষণ না সব অপহৃত ছাড়া পাচ্ছেন, তত দিন পর্যন্ত স্থলপথে গাজ়ায় হামলা বন্ধ রাখা উচিত ইজ়রায়েলের। প্রসঙ্গত, শুক্রবার এক সাংবাদিক প্রেসিডেন্ট বাইডেনকে প্রশ্ন করেছিলেন, অপহৃতেরা উদ্ধার না পর্যন্ত কি ‘গ্রাউন্ড অপারেশন’ করা অনুচিত ইজ়রায়েলের? সেই প্রশ্নের জবাবে বাইডেন বলেন, “একদমই তাই।”
শুক্রবার রাতে গাজ়া সীমান্তে সেনাদের সঙ্গে দেখা করেন ইজ়রায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োব গ্যালেন্ট। প্রধামন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু ওই দিনই জানিয়েছেন, সব অপহৃতদের উদ্ধারের চেষ্টা চালানো হচ্ছে। এই প্রচেষ্টা থেকে পিছু হটবে না ইজ়রায়েল। একইসঙ্গে তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, “এই লড়াই জেতা না পর্যন্ত সংঘর্ষ জারি করা হবে।”