Himachal Pradesh Disaster

প্রকৃতির রুদ্ররূপে ধ্বংস হচ্ছে পাহাড়! হিমাচলের ‘মৃত্যু’র নেপথ্যেও সেই চার ভুল

হিমাচল প্রদেশে এ বছর অত্যধিক বৃষ্টির কারণে বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। হড়পা বান, মেঘভাঙা বৃষ্টি এবং পাহাড়ি ধস বহু মানুষের প্রাণ কেড়েছে। ধ্বংস হয়েছে অনেক সম্পত্তি।

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ০৮:১৭
Share:
০১ ২১

পাহাড়ের কোলে সাজানো ছোট ছোট বাড়ি। কোনওটা দোতলা, কোনওটা তিন তলা, কোনও বাড়ির মাথায় আবার একতলাতেই ছাউনি। জলের তোড়ে তাসের ঘরের মতো ভেসে গেল সব।

০২ ২১

চলতি বছরের বর্ষায় হিমাচল প্রদেশে এমন ছবি আকছার দেখা গিয়েছে। সমাজমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া একের পর এক ভয় ধরানো ভিডিয়োতে দেখা গিয়েছে, কী ভাবে সাজানো শহর চোখের পলকে নিশ্চিহ্ন হয়ে গিয়েছে।

Advertisement
০৩ ২১

হিমাচলে অত্যধিক বৃষ্টির কারণে বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। হড়পা বান, মেঘভাঙা বৃষ্টি এবং পাহাড়ি ধস বহু মানুষের প্রাণ কেড়েছে। নষ্ট হয়েছে অনেক সম্পত্তি।

০৪ ২১

পরিসংখ্যান বলছে, গত জুন মাস থেকে এখনও পর্যন্ত হিমাচলে বৃষ্টির কারণে অন্তত ৩০০ জনের মৃত্যু হয়েছে। ১০ হাজার বাড়িতে ফাটল দেখা দিয়েছে। ক্ষতির পরিমাণ ১০ হাজার কোটি টাকারও বেশি।

০৫ ২১

শুধু হিমাচল প্রদেশ নয়, উত্তরাখণ্ড, পঞ্জাব এবং উত্তরপ্রদেশেও বন্যা এ বছর অনেক ক্ষতি করেছে। বহু মানুষের প্রাণ গিয়েছে, ধ্বংস হয়েছে অনেক সম্পত্তি এবং চাষের জমি। গোটা উত্তর ভারত জুড়েই তাণ্ডব চালিয়েছে বর্ষা।

০৬ ২১

কিন্তু কেন? বর্ষায় কেন হঠাৎ এমন বিধ্বংসী হয়ে উঠেছে প্রকৃতি? হিমাচলের মতো পাহাড়ি অঞ্চলেই বা কেন এত তাণ্ডব? বিশেষজ্ঞেরা জানাচ্ছেন, এগুলি মনুষ্যসৃষ্ট ধ্বংসলীলা। প্রকৃতির এই রূপের জন্য দায়ী মানুষের ভুলই।

০৭ ২১

মূলত, হিমালয়ঘেঁষা পাহাড়ি অঞ্চলে মানুষের চারটি ভুল এই বিপর্যয় ডেকে এনেছে বলে দাবি বিশেষজ্ঞদের। তার মধ্যে পাহাড় কেটে রাস্তা তৈরি থেকে শুরু করে পর্যটকদের বাড়বাড়ন্ত, রয়েছে সবই।

০৮ ২১

বিশেষজ্ঞেরা প্রকৃতির উপর মানুষের যে অত্যাচারগুলি চিহ্নিত করেছেন, সেই তালিকায় প্রথমেই রয়েছে জলবিদ্যুৎ প্রকল্প। নদীতে ইচ্ছামতো বাঁধ দিয়ে স্রোতের গতিকে কাজে লাগিয়ে বিদ্যুৎ উৎপন্ন করার সেরা ঠিকানা পাহাড়।

০৯ ২১

হিমাচল প্রদেশে বর্তমানে মোট ১৬৮টি জলবিদ্যুৎ প্রকল্প রয়েছে। তা থেকে প্রতি বছর ১০,৮৪৮ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপন্ন হয়। ২০৩০ সালের মধ্যে ১০০০টি প্রকল্প তৈরির পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের।

১০ ২১

জলবিদ্যুৎ উৎপন্ন করার সময় নদীগুলির স্বাভাবিক স্রোত বাধা পায়। বড় নদী মানুষের হস্তক্ষেপে সঙ্কুচিত হয়ে যায়। সরু হয়ে আসে তার গতিপথ। বৃষ্টি বেশি হলে নদীবাঁধে জল বেড়ে যায়। সেই জল উপচে প্লাবিত হয় আশপাশ।

১১ ২১

পাহাড়ে মানুষের দ্বিতীয় ‘অত্যাচার’ নির্মাণকাজ। হোটেল, বাড়ির পাশাপাশি পাহাড় কেটে রাস্তা তৈরি করা হয় যথেচ্ছ ভাবে। যা পাহাড়ের পাথরগুলিকে আলগা করে দেয়।

১২ ২১

পাহাড় ভাঙার জন্য বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ডিনামাইট বিস্ফোরণ করা হয়। এ ছাড়া, উন্নত প্রযুক্তির যন্ত্র ব্যবহার করেও ধীরে ধীরে কাটা হয় পাহাড়। এর ফলে পাহাড়ি রাস্তার ঢালও অনেক বেশি হয়।

১৩ ২১

নিয়ম হল, পাহাড় ভাঙার পর সেই ধ্বংসস্তূপ অন্যত্র সরিয়ে সমতলে জড়ো করা। খরচ বাঁচাতে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সেই নিয়ম মানা হয় না। পাথরের খণ্ড, ধ্বংসাবশেষ নদীগর্ভের দিকে গড়িয়ে দেওয়া হয়। এর ফলে নদীর গভীরতা কমে।

১৪ ২১

নদীর তলদেশে পাহাড়ের ধ্বংসাবশেষ জড়ো করায় পাহাড়ি নদীগুলির জলধারণ ক্ষমতা কমে আসছে। এর ফলে একটু বেশি বৃষ্টি হলেই নদী উপচে পড়ছে। জল বইছে বিপদসীমার উপর দিয়ে। যার ফলে বন্যা অনিবার্য হয়ে উঠছে।

১৫ ২১

হিমালয় একটি বর্ধিষ্ণু পর্বতমালা। প্রতি বছর তার উচ্চতা একটু একটু করে বেড়ে চলেছে। সেই কারণে এই পর্বত সংলগ্ন এলাকা ভূমিকম্পপ্রবণ। বি‌শেষজ্ঞদের দাবি, এই পাহাড়ি এলাকায় রাস্তা তৈরি করাই অবৈজ্ঞানিক।

১৬ ২১

মানুষের তৃতীয় ভুল হল, এই ভূমিকম্পপ্রবণ এলাকায় অতিরিক্ত পর্যটকের ভিড়। প্রতি বছর হিমাচলে লক্ষ লক্ষ মানুষ বেড়াতে যান। শুধু বিদেশি পর্যটকের সংখ্যাই বছরে সাড়ে তিন লক্ষ। এত মানুষ ধারণের ক্ষমতা পাহাড়ের নেই।

১৭ ২১

পর্যটকদের সুবিধার জন্য পাহাড় কেটে যথেচ্ছ পরিমাণে রাস্তা এবং হোটেল তৈরি করা হয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সঠিক পরিকল্পনার অভাব চোখে পড়ে। অধিক উপার্জনের নেশায় প্রকৃতির দিকে ফিরেও তাকায় না মানুষ।

১৮ ২১

পর্যটকদের ভিড়ে পাহাড়ে দূষণের পরিমাণও উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে। বাইরে থেকে যাঁরা ঘুরতে আসেন, তাঁরা স্থানীয় পরিবেশরক্ষাকে তেমন গুরুত্ব দেন না। যেখানে সেখানে ফেলে রাখেন আবর্জনা।

১৯ ২১

এশিয়া পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি ভূমিধসপ্রবণ মহাদেশ। আর এশিয়ায় সবচেয়ে বেশি ধস হয় হিমালয়ের কোলে। বিশ্বের ২০ শতাংশ ভূমিধস হয় ভারতের পাহাড়ি অঞ্চলে।

২০ ২১

পরিসংখ্যান বলছে, হিমাচল প্রদেশে মোট ১৭,১২০টি ধসপ্রবণ এলাকা আছে। জেলা অনুযায়ী সেই এলাকাগুলির কথা জনসাধারণকে জানানো প্রয়োজন। না জানানোই প্রশাসনের অন্যতম বড় ভুল।

২১ ২১

প্রশাসনের ভুলের খেসারত প্রতি বছর বর্ষাকালে দিতে হয় আমজনতাকে। তবে শুধু প্রশাসন নয়, পর্যটক থেকে শুরু করে স্বার্থলোভী মানুষ, হিমাচল ধ্বংসের দায় সকলের উপরেই। সার্বিক ধ্বংস রোধে এখন থেকেই সচেতন হওয়া দরকার।

সব ছবি: সংগৃহীত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on:
আরও গ্যালারি
Advertisement