সত্তরের দশকের সেরা ছবি। ছবির সংলাপগুলি আজও জনপ্রিয়। ‘শোলে’ ছবিতে গব্বর চরিত্রে অভিনয় করে যেমন কেরিয়ারে মাইলফলক গড়ে তুলেছিলেন, ঠিক তেমনই বলিউডের খলনায়কের চরিত্রে একটি নতুন মাত্রা যোগ করেছিলেন আমজাদ খান। তবে ‘শোলে’র পর আর চিত্রনাট্যকার জুটি সেলিম-জাভেদের সঙ্গে কাজ করেননি আমজাদ। এর নেপথ্যকারণ কী?
১৯৭৫ সালে রমেশ সিপ্পির পরিচালনায় প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায় ‘শোলে’। ছবিতে সেলিম-জাভেদের লেখা সংলাপও ছিল ধারালো। ছবির অন্য চরিত্রের পাশাপাশি খলনায়কের চরিত্র নির্মাণের মাধ্যমেও নজর কাড়তে চেয়েছিলেন ছবিনির্মাতারা। তাই গব্বর চরিত্রে বড় পর্দায় ফুটিয়ে তোলার জন্যও অভিনেতা নির্বাচনের ক্ষেত্রে সময় খরচ করেছিলেন নির্মাতারা।
বলিপাড়া সূত্রে খবর, গব্বর চরিত্রের জন্য নির্মাতাদের প্রথম পছন্দ ছিলেন না আমজাদ। বলি অভিনেতা ড্যানি ডেনজংপাকে অভিনয়ের প্রস্তাব দিয়েছিলেন তাঁরা। কিন্তু সেই প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছিলেন ড্যানি।
ড্যানিকে যখন ‘শোলে’ ছবিতে অভিনয়ের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল তখন তিনি আফগানিস্তানে ছিলেন। ফিরোজ় খানের ‘ধর্মাত্মা’ ছবির শুটিং নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন ড্যানি।
অন্য ছবির কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকার কারণে আর ‘শোলে’র শুটিংয়ের জন্য সময় বার করতে পারেননি ড্যানি। অগত্যা অভিনয়ের প্রস্তাব ফিরিয়ে দিতে হয় ড্যানিকে। ড্যানি প্রস্তাব ফিরিয়ে দিলে আবার অন্য অভিনেতার খোঁজ শুরু করেন ‘শোলে’ ছবির নির্মাতারা।
এর পর গব্বর চরিত্রের জন্য আমজাদের নাম রমেশকে বলেছিলেন সেলিম-জাভেদ। দুই চিত্রনাট্যকারের পছন্দকে সমর্থন করে আমজাদকে অভিনয়ের প্রস্তাব দেন ছবির পরিচালক।
দিল্লিতে গিয়ে আমজাদকে একটি নাটকে অভিনয় করতে দেখেছিলেন সেলিম। তা দেখে তাঁর মনে হয়েছিল যে, পর্দায় গব্বরের চরিত্রটি নিপুণ ভাবে ফুটিয়ে তুলতে পারবেন আমজাদ। তাই তাঁর কথা রমেশকে জানিয়েছিলেন সেলিম-জাভেদ জুটি।
শোনা যায়, ‘শোলে’ ছবির শুটিংয়ের সময় অর্থনৈতিক দিক থেকে তেমন সচ্ছল ছিলেন না আমজাদ। শুটিংয়ের গোড়ার দিকে অমিতাভ বচ্চন, ধর্মেন্দ্র, সঞ্জীব কুমার, হেমা মালিনী, জয়া বচ্চনের মতো তারকাদের সঙ্গে অভিনয় করতে ইতস্তত বোধ করছিলেন তিনি।
বলিপাড়ার একাংশের দাবি, ‘শোলে’ ছবির শুটিংয়ের সময় নিজের সংলাপ আওড়াচ্ছিলেন আমজাদ। তা শুনতে পেয়েছিলেন সেলিম এবং জাভেদ। গব্বর চরিত্রের কণ্ঠের মধ্যে যে গাম্ভীর্য চেয়েছিলেন তাঁরা, আমজাদের মধ্যে নাকি তার অভাব ছিল।
সেলিম এবং জাভেদ নাকি এর পরে রমেশের সঙ্গে আলাদা ভাবে দেখা করেন। পরিচালককে তাঁরা উপদেশ দেন যে, গব্বরের চরিত্রের জন্য যদি আমজাদকে পছন্দ না হয় তবে তাঁকে ছবি থেকে বাদ দেওয়া যেতে পারে।
কানাঘুষোয় সেলিম-জাভেদের কথা কানে পৌঁছে যায় আমজাদের। সব শুনে অবাক হয়ে যান অভিনেতা। সেলিম-জাভেদের পছন্দ অনুযায়ীই গব্বর চরিত্রে অভিনয়ের প্রস্তাব পেয়েছিলেন আমজাদ। তাঁরা হঠাৎ কেন আমজাদকে অপছন্দ করছেন তা বুঝতে পারছিলেন না অভিনেতা।
আমজাদের অভিনয় পছন্দ হয়েছিল রমেশের। ‘শোলে’ ছবি থেকে তাঁকে বাদ দিতে চাননি পরিচালক। আমজাদও ছবির শুটিং সম্পূর্ণ করেন। তবে সেলিম-জাভেদের সঙ্গে দূরত্ব বজায় রাখতে শুরু করেছিলেন তিনি।
‘শোলে’ ছবি মুক্তির পর আমজাদের অভিনয় বহুল প্রশংসা পায়। অভিনেতার কেরিয়ারে নতুন মাইলফলক গড়ে তোলে গব্বরের চরিত্র। তবে সেলিম-জাভেদের এমন আচরণের কারণে ‘শোলে’র পর আর তাঁদের সঙ্গে কাজ করেননি আমজাদ।