মাত্র ৩৫ বছরেই শেষ হয়ে গেল রাইমা ইসলাম শিমুর জীবন। ঢাকার কেরানীগঞ্জে রাস্তার পাশ থেকে অভিনেত্রীর বস্তাবন্দি দেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। হত্যার কথা প্রাথমিকভাবে তাঁর স্বামী খন্দকার শাখাওয়াত আলীম নোবেল স্বীকার করেছেন বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ পুলিশ। অভিনেত্রীর লাশ গুম করতে তাঁকে তাঁর বন্ধু ফরহাদ সহায়তা করেছেন বলেও দাবি পুলিশের।
কেরানীগঞ্জ মডেল থানা পুলিশ জানায়, রাইমার দেহটি টুকরা করে দু’টি বস্তায় ভরে রাখা হয়েছিল। প্রশ্ন উঠছে, তাঁর স্বামী নোবেলকে কে সাহায্য করলেন এই কাজে?
রাইমা হত্যা-কাণ্ডে তাঁর স্বামী নোবেল এবং নোবেলের এর এক বন্ধু ফরহাদকে গ্রেফতার করা হয়। লাগাতার জেরায় নোবেল দোষ কবুল করেন বলে বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে।
স্বামী ও দুই সন্তান নিয়ে রাইমা রাজধানীর গ্রিনরোড এলাকার থাকতেন। রবিবার সকালে তিনি বাড়ি থেকে বেরোন। সন্ধ্যাতেও বাড়ি না ফেরায় তাঁর মোবাইলে বারবার ফোন করেন পরিবারের লোকেরা। কিন্তু ফোন ছিল বন্ধ। রাতে কলাবাগান থানায় সাধারণ ডায়েরি করা হয়।
১৯৯৮ সালে কাজি হায়াৎ পরিচালিত ‘বর্তমান’ নামে একটি চলচ্চিত্রে অভিনয়ের মধ্যে দিয়ে বড় পর্দায় অভিষেক রাইমার।
দেলোয়ার জাহান ঝন্টু, চাষি নজরুল ইসলাম, শরিফউদ্দিন খান, এ জে রানা, স্বপন চৌধুরী-সহ বিভিন্ন পরিচালকের ২৫টি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন এই অভিনেত্রী।
সিনেমার পাশাপাশি নাটকে নিয়মিত অভিনয় করতেন। সম্প্রতি ‘ফ্যামিলি ক্রাইসিস’ নামে একটি ধারাবাহিকেও কাজ করেছেন রাইমা। ৫০টিরও বেশি নাটকে অভিনয়ের পাশাপাশি প্রযোজনাও করেছেন তিনি।
বাংলাদেশের চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সদস্য ছিলেন রাইমা। কিন্তু আসন্ন নির্বাচনে সমিতির ১৮৪ জনের সঙ্গে তাঁর সদস্যপদ বাতিল করা হয়। সদস্যপদ বাতিল হওয়া অন্য সদস্যদের সঙ্গে তিনি বর্তমান কমিটির বিরুদ্ধে আন্দোলনে সরব ছিলেন। এই বিষয় নিয়ে বিবাদ চরমে পৌঁছেছিল।
বাংলাদশের সংবাদমাধ্যমের দাবি, রাইমার সহকর্মীদের অভিযোগ, চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির বিদায়ী কমিটির সাধারণ সম্পাদক তথা অভিনেতা জায়েদ খান এই খুনের সঙ্গে জড়িত থাকতে পারেন। তবে পুলিশের প্রাথমিক তদন্ত এই তত্ত্বকে মান্যতা দিচ্ছে না।
অন্য দিকে, অভিনেত্রীর ভাই শহিদুল ইসলাম খোকন অভিযোগ করেছিলেন, তাঁর ভগ্নিপতি নোবেল মাদকাসক্ত এবং প্রায়ই রাইমাকে মারধর করতেন। অভিযোগ, এই হত্যায় দায়ী নোবেল।
তবে রাইমার বোন ফাতিমা নিশা বলেন, ‘‘কেন কেউ আমার বোনকে হত্যা করেছে, এখনও বুঝতে পারছি না। নোবেলের সঙ্গে বোনের তেমন সমস্যা ছিল না। ১৮ বছরের সংসার। প্রেম করে বিয়ে করেছিল।’’ কিন্তু পুলিশের প্রাথমিক তদন্ত বলছে নোবেলই এই খুনে জড়িত।
বহু প্রশ্নের উত্তর মিলছে না। প্রথমত,কেন এই হত্যা? কোথায় হল এই হত্যা? হত্যার পর কোথায়ই বা তাঁর দেহ টুকরো টুকরো করা হল? স্বামী বা তাঁর বন্ধু ছাড়া অন্য কেউ কি জড়িত? কার ডাকে বাড়িতে না জানিয়ে বেরোলেন রাইমা?