২০০২ সালের গুজরাত দাঙ্গার ঘটনায় বিশেষ তদন্তকারী দল তৎকালীন গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী-সহ বেশ কয়েক জনকে ক্লিনচিট দিয়েছিল। তার বিরোধিতায় মামলা দায়ের হয়েছিল সুপ্রিম কোর্টে। সম্প্রতি সেই মামলা খারিজ করেছে দেশের শীর্ষ আদালত। যার প্রেক্ষিতে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ তোপ দাগেন বিরোধীদের। জানান, দু’দশক নীরবে অনেক সমালোচনা সহ্য করেছেন মোদী। কোথাও ধর্না দেননি। তিনি সমালোচনার বিষ পান করেছেন। নিজের মনের মধ্যেই বেদনাকে ধরে রেখেছিলেন।
মোদীকে ক্লিনচিট দেওয়ার বিরুদ্ধে মামলা সুপ্রিম কোর্টে খারিজের ঠিক পরদিনই সমাজকর্মী তিস্তা শেতালওয়াড়কে আটক করে গুজরাত সন্ত্রাস দমন বাহিনী (অ্যান্টি-টেরর স্কোয়াড)। কিন্তু কেন?
গুজরাত হিংসা নিয়ে মিথ্যে তথ্য দেওয়ার অভিযোগ আনা হয়েছে সমাজকর্মী তিস্তার বিরুদ্ধে। গুজরাতের এক পুলিশ আধিকারিক ডিবি বারাড শেতালওয়াড় এবং প্রাক্তন আইপিএস অফিসার শ্রীকুমার ও সঞ্জীব ভট্টের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করেছেন। সেখানে তিস্তার বিরুদ্ধে আনা হয়েছে জালিয়াতি ও ভুল তথ্য দেওয়ার অভিযোগ।
তিস্তার গ্রেফতারির প্রতিবাদ করছেন বিরোধীরা। দেশ-বিদেশ থেকে আসছে প্রতিবাদ। কে এই তিস্তা শেতালওয়াড়?
তিস্তা শেতালওয়াড় প্রথম জীবনে ছিলেন সাংবাদিক। এখনও বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় লেখালেখি করে থাকেন তিনি। সেই সঙ্গে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা চালান। এই স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাটি জাকিয়া জাফরিকে সমর্থন করেছিল।
মোদীকে ক্লিনচিট দেওয়ার সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন প্রাক্তন কংগ্রেস সাংসদ এহসান জাফরির স্ত্রী জাকিয়া। তাঁর সমর্থনে এগিয়ে এসেছিলেন তিস্তা।
১৯৬২ সালে একটি গুজরাতি পরিবারে জন্ম তিস্তা শেতালওয়াড়ের। পরিবারের বেশির ভাগ সদস্যই আইনজীবী।
তিস্তার ঠাকুরদার নাম এমসি শেতালওয়াড়। তাঁর পরিচয়? স্বাধীন ভারতের প্রথম এবং সবচেয়ে বেশি সময় ধরে অ্যাটর্নি জেনারেল ছিলেন তিনি। নাম, এমসি শেতালওয়াড়। পদ্মবিভূষণ-সম্মানিত এমসি শেতালওয়াড়ের ছেলে, অর্থাৎ তিস্তার বাবা অতুল শেতালওয়াড়ও ছিলেন আইনজীবী।
ছোটবেলা থেকে বইয়ের পোকা তিস্তা। আমেরিকান সাংবাদিক কার্ল বার্নস্টাইন এবং বব উডওয়ার্ডের লেখা ‘অল দ্য প্রেসিডেন্ট'স মেন’ বইটি পড়েই সাংবাদিক হওয়ার ইচ্ছে হয় তাঁর। বইটি তাঁকে তাঁর বাবা উপহার হিসেবে দিয়েছিলেন।
দু’বছর কলেজে আইন বিষয় নিয়ে পড়ে তা ছেড়ে দেন। পরে দর্শনশাস্ত্র নিয়ে বম্বে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক হন তিস্তা। তার পর শুরু সাংবাদিক জীবনের। ‘দ্য ডেইলি’, ‘দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস’-এর মতো সংবাদমাধ্যমের হয়ে কাজ করেছেন তিনি।
১৯৯৩ সালে মুম্বই হিংসার ঘটনা থেকে সাংবাদিক তিস্তা শেতলওয়াড়ের পরিচিতি বলা যায়। আবার এই ঘটনার পরেই কাজ ছেড়ে দিয়ে স্বামীর সঙ্গে একটি পত্রিকা প্রকাশনী সংস্থা খোলেন তিনি।
পরে সাংবাদিক অনিল ধারকের, কবি জাভেদ আখতার, অভিনেতা রাহুল বসু প্রমুখের সঙ্গে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন খোলেন। নাম ‘সিটিজেনস্ ফর জাস্টিস অ্যান্ড পিস’।
‘গুজরাত: দ্য মেকিং অব আ ট্র্যাজেডি’-র লেখক তিস্তার গ্রেফতারি নিয়ে শুরু হয়েছে বিতর্ক। খোদ রাষ্ট্রপুঞ্জ থেকে এসেছে বিবৃতি। রাষ্ট্রপুঞ্জের তরফে মেরি ল্যলর বলেন, ‘‘মানবাধিকার আন্দোলনের বড় মুখ তিস্তা শেতালওয়াড়। মানবাধিকার নিয়ে কথা বলা কোনও অপরাধ নয়।’’
এ দিকে তিস্তার বিরুদ্ধে আমদাবাদ ক্রাইম ব্রাঞ্চের ইন্সপেক্টর ডিবি বারাদের দায়ের করা এফআইআরে উল্লেখ করা হয়েছে যে, তিস্তা সাক্ষীদের প্রভাবিত করার পাশাপাশি নথি জাল করেছেন!
তিস্তার বিরুদ্ধে এফআইআরে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘‘অন্য ব্যক্তি, সংস্থা এবং সংস্থার সঙ্গে যোগসাজশে বিভিন্ন গুরুতর অপরাধ, অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র, আর্থিক এবং অন্যান্য সুবিধা নেওয়া ইত্যাদি অভিযোগের তদন্ত করা হবে।’’
রবিবার তিস্তাকে তাঁর মুম্বইয়ের বাড়ি থেকে গ্রেফতার করা হয়। তিনি অভিযোগ করেন, তাঁর সঙ্গে দুর্ব্যবহার করা হয়েছে। তিস্তা বলেন, ‘‘আমি কোনও অপরাধী নই যে আমাকে এ ভাবে ধরতে হবে।’’