আবগারি ‘দুর্নীতি’ মামলায় গ্রেফতার করা হয়েছে দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীওয়ালকে। একাধিক বার ইডি দফতরে হাজিরা এড়িয়েছিলেন তিনি। বৃহস্পতিবার রাতে তাঁকে গ্রেফতার করে কেন্দ্রীয় সংস্থা।
আবগারি মামলায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ইডি কেজরীকে মোট ন’বার সমন পাঠিয়েছিল। বৃহস্পতিবার ছিল সেই নবম হাজিরার দিন। কিন্তু সে দিনও কেজরী ইডি দফতরে যাননি।
বৃহস্পতিবার রক্ষাকবচের আবেদন জানিয়ে হাই কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী। আদালতে সেই আবেদন খারিজ হয়ে যায়। এর পর রাতেই কেজরীর বাসভবনে তল্লাশি চালাতে যায় ইডি।
ঘণ্টা দুয়েক তল্লাশি অভিযানের পর কেজরীকে গ্রেফতার করা হয়। তাঁর দল আম আদমি পার্টি (আপ) জানিয়ে দেয়, মুখ্যমন্ত্রী পদ থেকে ইস্তফা দিচ্ছেন না তাদের নেতা।
ভারতের ইতিহাসে কেজরীই প্রথম মুখ্যমন্ত্রী, যিনি পদে থাকাকালীন গ্রেফতার হলেন। তাঁকে আদালত ছ’দিনের ইডি হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছে। হেফাজত থেকেই সরকার পরিচালনা করছেন কেজরী। দিচ্ছেন প্রয়োজনীয় নির্দেশ।
হেফাজত থেকে প্রশাসন এবং দলের সঙ্গে কেজরীর যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম হয়ে উঠেছেন যিনি, তাঁর নাম সুনীতা কেজরীওয়াল। তিনি অরবিন্দ কেজরীওয়ালের স্ত্রী।
ইডি হেফাজত থেকে কেজরীর বার্তা ভিডিয়োর মাধ্যমে সুনীতা পৌঁছে দিয়েছেন জনগণের কাছে। এক্স (সাবেক টুইটার) হ্যান্ডলে সেই ভিডিয়ো পোস্ট করেছেন তিনি। ক্যাপশনে লিখেছেন, ‘‘দেশবাসীর জন্য জেল থেকে অরবিন্দ কেজরীওয়ালের সন্দেশ।’’
স্ত্রীর মাধ্যমে দলের অনুগামীর উদ্দেশে বার্তা দিয়েছেন কেজরী। সুনীতা ভিডিয়োতে কেজরীর বার্তা পাঠ করেন। কেজরী দলের কর্মীদের উদ্দশে বলেছেন, ‘‘আমার গ্রেফতারির জন্য আপনারা বিজেপির কর্মীদের ঘৃণা করবেন না। আমাকে জেলে বেশি দিন রাখা যাবে না।’’
কেজরীওয়ালের গ্রেফতারির পরেও মুখ খুলেছিলেন সুনীতা। এক্সে লিখেছিলেন, ‘‘আপনাদের নির্বাচিত তিন বারের মুখ্যমন্ত্রীকে ক্ষমতার দম্ভে গ্রেফতার করিয়েছেন মোদীজি। উনি সকলকেই ধ্বংস করে দিয়ে চাইছেন। দিল্লির মানুষের প্রতি এটা বিশ্বাসঘাতকতা। আপনাদের মুখ্যমন্ত্রী সবসময় আপনাদের পাশে দাঁড়িয়েছেন। ওঁর জীবন দেশের প্রতি নিয়োজিত। মানুষ সব জানেন।’’
১৯৯৪ সালে কেজরী এবং সুনীতার বিয়ে হয়। ২০১৫ সালে কেজরী দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে শপথ নেন। দীর্ঘ ৩০ বছরের দাম্পত্য তাঁদের।
উল্লেখ্য, এই দীর্ঘ সময়ে রাজনীতিতে একেবারেই সক্রিয় ছিলেন না সুনীতা। মুখ্যমন্ত্রীর স্ত্রী হিসাবেও নিজেকে প্রচারের আলোর আড়ালেই রেখেছিলেন। স্বামীর ব্যস্ততার প্রভাব পড়তে দেননি সংসারে।
কিন্তু গত বৃহস্পতিবার কেজরী গ্রেফতার হওয়ার পর শিরোনামে উঠে এসেছেন সেই সুনীতা। সমাজমাধ্যমের একের পর এক পোস্টে তাঁকে দেখা যাচ্ছে। কেন্দ্রের মোদী সরকারকে বার বার আক্রমণ করছেন কড়া ভাষায়।
একসময় ভারতের রাজস্ব বিভাগের আধিকারিক ছিলেন সুনীতা। আয়কর বিভাগে দু’দশক কাজ করেছেন। আইআরএসের (ইন্ডিয়ান রেভিনিউ সার্ভিস) ১৯৯৩ সালের ব্যাচে ছিলেন তিনি।
২০১৫ সালে কেজরী দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে প্রথম বার শপথ নেওয়ার পরের বছরেই আইআরএস আধিকারিকের চাকরি থেকে ইস্তফা দেন সুনীতা। সেই সময়ে তিনি ইনকাম ট্যাক্স অ্যাপেলেট ট্রাইব্যুনালের কমিশনার অফ আইটি ছিলেন।
সুনীতা রাজনীতিতে খুব বেশি সক্রিয় নন। সরকারি চাকরি ছাড়ার পর দিল্লির মুখ্যমন্ত্রীর ঘর সামলাতেই ব্যস্ত ছিলেন তিনি। কেজরী গ্রেফতার হওয়ার পর অনেকে বলাবলি করছিলেন, সুনীতাকে মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী করতে পারেন আপ নেতৃত্ব।
কেজরী নিজেও প্রাক্তন আইআরএস। ১৯৯৫ সালের ব্যাচে ছিলেন তিনি। সেই সূত্রেই সুনীতার সঙ্গে আলাপ হয় তাঁর। মধ্যপ্রদেশের ভোপালে একটি প্রশিক্ষণের অনুষ্ঠান চলাকালীন যুগলের প্রথম দেখা, আলাপ। ১৯৯৪ সালে তাঁদের বিয়ে হয়। বিয়ের পরের বছর আইআরএস হিসাবে যোগ দেন কেজরী।
কেজরী এবং সুনীতার দুই সন্তান। পুত্রের নাম পুলকিত কেজরীওয়াল এবং কন্যার নাম হর্ষিতা কেজরীওয়াল। তাঁরা দু’জনেই দিল্লি আইআইটিতে পড়াশোনা করেন।
কেজরীর গ্রেফতারির পর সুনীতা যে ভাবে প্রচারের আলোয় উঠে এসেছেন, তাতে আপ নেতৃত্ব এই সঙ্কটের সময়ে তাঁকে দলের মুখ করতে চাইছেন বলে অনেকের মত। লোকসভা ভোটের আগে বিজেপি-বিরোধী প্রচারে সেই পরিকল্পনা কতটা কাজে লাগে, সেটাই দেখার।