বিতর্কে তিনি প্রায়ই জড়িয়ে পড়েন। নিজের রেস্তরাঁয় খেতে আসা গ্রাহকদের লম্বা বিল ধরিয়ে বার বার সমালোচনার শিকার হয়েছেন। খাবার পরিবেশনের ভঙ্গির জন্যও চর্চায় এসেছেন। এ বার ফুটবল বিশ্বকাপ ফাইনালে উপস্থিত হয়ে বিতর্কে জড়ালেন সল্ট বে। কড়া শাস্তিও পেলেন।
কে এই সল্ট বে? আসল নাম নুসরেত গোকসে। তুরস্কের বিখ্যাত শেফ তিনি। মাংসের স্টেক বানানোয় বিশেষজ্ঞ। এখন পৃথিবীর বিভিন্ন শহরে রয়েছে তাঁর স্টেক হাউস। সেখানে খেতে আসেন খ্যাতনামীরা। তাঁর ফলোয়ারের তালিকাতেও রয়েছেন বিখ্যাতরা।
ইনস্টাগ্রামে নুসরেতের ফলোয়ারের তালিকায় রয়েছেন লিওনার্দো ডি ক্যাপ্রিও, ডেভিড বেকহ্যাম। তাঁর রেস্তরাঁয় এসে খেয়ে কাঁটা-চামচ চেটেছেন মারাদোনা থেকে এমবাপে। সমাজমাধ্যমে সেই ছবি পোস্ট করেছেন নুসরেত ওরফে সল্ট বে।
কাতার বিশ্বকাপ ফাইনালেও মাঠে উপস্থিত হয়েছিলেন নুসরেত। আর সেই নিয়েই বিতর্ক। কারণ শুধু খেলাই দেখেননি তিনি, ছুঁয়ে ফেলেছেন বিশ্বকাপ, যা ছোঁয়ার অধিকার সকলের থাকে না। আর সেই কারণেই শাস্তির মুখে।
বিশ্বকাপ ফাইনালে আর্জেন্টিনা-ফ্রান্সের ম্যাচের পর একাধিক ভিডিয়ো পোস্ট করেছেন সল্ট বে। সেই দেখেই বিরক্ত ফুটবল-ভক্তরা। প্রায় প্রতিটি ভিডিয়োতেই তিনি আর্জেন্টিনা দলের ফুটবলারদের থেকে কাড়াকাড়ি করছেন ট্রফি।
একটি ভিডিয়োতে কাতারের লুসেই অ্যাঙ্খেল ডি-মারিয়ার সঙ্গে প্রায় জোরজবরদস্তি ভাগাভাগি করে বিশ্বকাপ ট্রফি ধরার চেষ্টা করছেন সল্ট বে। গোটা বিষয়টিতে অ্যাঙ্খেল বেশ বিব্রত। স্টেকের উপর যেমন করে নিজস্ব কায়দায় নুন ছিটিয়ে দেন সল্ট বে, ট্রফি লক্ষ করেও একই ভঙ্গিতে হাত তুলে রেখেছেন তিনি।
অন্য একটি ভিডিয়োতে ক্রিশ্চিয়ানো রোমেরোর ছোট্ট ছেলের হাত থেকে ট্রফি প্রায় কেড়েকুড়ে নেন সল্ট বে। তাতে রোমেরো বিরক্ত হয়ে খুদেকে নিয়ে সরে যান।
মেসির দৃষ্টি আকর্ষণের যে চেষ্টা সল্ট বে করেছেন, তা সব থেকে বেশি বিরক্তি উদ্রেক করেছে ফুটবল-ভক্তদের। দু’বার মেসি তাঁকে এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছেন। সল্ট বে নাছোড়। অগত্যা মেসি বাধ্য হয়েই ৩৯ বছরের শেফের সঙ্গে বিশ্বকাপ হাতে একটি ছবি তোলেন। সেই ছবি পরে সমাজমাধ্যমে পোস্ট করেন সল্ট বে।
ফিফা বিশ্বকাপ ট্রফি সংক্রান্ত কিছু নিয়ম রয়েছে। ১৮ ক্যারেট সোনার তৈরি এই ট্রফি ছোঁয়ার অধিকার সকলের নেই। ট্রফিটির দাম প্রায় ২ কোটি মার্কিন ডলার। ভারতীয় মু্দ্রায় প্রায় ১৬৫ কোটি ৯১ লক্ষ ৩৮ হাজার টাকা।
কারা ধরতে পারেন ফুটবল বিশ্বকাপের ট্রফি? উত্তর হল, বর্তমান এবং প্রাক্তন বিজয়ী দলের সদস্য এবং রাষ্ট্রপ্রধানেরা এই ট্রফি ছুঁতে পারেন।
সল্ট বে-র এই কাণ্ড দেখে তাঁর উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে ইউএস ওপেন কাপ। ২০২৩ সালে আমেরিকায় হতে চলেছে সে দেশের সব থেকে পুরনো ফুটবল প্রতিযোগিতা। সেই প্রতিযোগিতার ফাইনাল দেখতে ঢুকতে পারবেন না সল্ট বে। আয়োজকরা নিষেধাজ্ঞার কথা জানিয়ে টুইট করার ৩৬ ঘণ্টার মধ্যেই তা পছন্দ করেছেন এক লক্ষ ৩৬ হাজার জন। সেই থেকেই আন্দাজ করা যায় সল্ট বে-র বিরুদ্ধে ঠিক কতটা ক্ষুব্ধ ফুটবল-ভক্তেরা।
এর আগে ফুটবল বিশ্বকাপের ট্রফি ছুঁয়ে বিতর্কে জড়িয়েছিলেন রিহানা। সালটা ২০১৪। ফাইনালে আর্জেন্টিনাকে এক্সট্রা টাইমে হারিয়ে দেয় জার্মানি। তার পরেই ট্রফি ছুঁয়ে বিতর্কে জড়ান পপ তারকা রিহানা।
এর আগে তাঁর রেস্তরাঁয় গ্রাহকদের অস্বাভাবিক বিল ধরানোর জন্য বিতর্কে জড়িয়েছিলেন সল্ট বে। ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে পশ্চিম লন্ডনে সল্ট বের রেস্তরাঁয় চারটি নরম পানীয়ের বোতলের দাম নেওয়া হয়েছিল ৪৪ পাউন্ড। ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় ৪,৩৮৯ টাকা। বিলটি সমাজমাধ্যমে পোস্ট করার পর তুমুল সমালোচনার মুখে পড়েন তিনি।
ওই বিলেই একটি স্টেকের দাম নেওয়া হয়েছিল ৬৩০ পাউন্ড। ভারতীয় মুদ্রায় ৬২ হাজার ৮৬৮ টাকা প্রায়। সোনার পাতে মোড়ানো ছিল সেই স্টেক।
গত বছর এক শিল্পীর অনুমতি ছাড়াই তাঁর আঁকা একটি ছবি নিজের তৈরি পণ্যে ব্যবহার করে সমালোচনার মুখে পড়েছিলেন তিনি। সল্ট বে-র কাছ থেকে ৫০ লক্ষ ডলার চেয়ে মামলা করেছিলেন জোসেফ মুরাটো নামে ওই শিল্পী। ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় ৪১ কোটি ৪৭ লক্ষ ৭০ হাজার ২৫০ টাকা। এ বার ইউএস ওপেন কাপের ফাইনাল দেখা থেকে বঞ্চিত হতে চলেছেন তিনি।