US China Tariff War

১৪৫ বনাম ১২৫, শুল্কযুদ্ধে মার্কিন-চিন সেয়ানে সেয়ানে, ড্রাগনের আর্থিক গুপ্তশক্তির নেপথ্যে কোন রহস্য?

আমেরিকা ও চিনের শুল্কযুদ্ধে সেয়ানে সেয়ানে টক্কর। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে লড়াই করার শক্তি কোথা থেকে পাচ্ছেন চিনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং?

Advertisement
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ১২ এপ্রিল ২০২৫ ১১:৪৭
Share:
০১ ১৮
China is not backing down amid Tariff war with US President Donald Trump, know the reasons

মার্কিন-চিন শুল্কযুদ্ধে বাড়ছে তীব্রতা। কেউ কাউকে এক ইঞ্চিও জমি ছাড়তে নারাজ। দুই মহাশক্তিধরের আর্থিক এবং বাণিজ্যিক লড়াইয়ে শেষ হাসি হাসবে কে? সেই প্রশ্নে দ্বিধাবিভক্ত দুনিয়া। পাশাপাশি প্রকাশ্যে এসেছে আর একটি প্রশ্ন। কিসের জোরে আটলান্টিকের পারের ‘সুপার পাওয়ার’-এর সামনে গলা উঁচিয়ে কথা বলছে বেজিং?

০২ ১৮
China is not backing down amid Tariff war with US President Donald Trump, know the reasons

বিশ্লেষকদের একাংশের অনুমান ছিল, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্কবাণে তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়বে চিনা অর্থনীতি। কিন্তু বাস্তবে তা হয়নি। উল্টে ওয়াশিংটনের সঙ্গে ড্রাগন প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং যে দীর্ঘমেয়াদি যুদ্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছেন, তা তাঁর শরীরী ভাষায় স্পষ্ট। এ ব্যাপারে বেজিঙের আস্তিনে লুকোনো তাসের সংখ্যা নেহাত কম নয়, বলছেন বিশ্লেষকেরা।

Advertisement
০৩ ১৮
China is not backing down amid Tariff war with US President Donald Trump, know the reasons

চিনা সরকারি সংবাদ সংস্থা ‘পিপল্‌স ডেলি’র প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আর্থিক যুদ্ধ চালিয়ে নিয়ে যাওয়ার মতো যথেষ্ট অভিজ্ঞতা রয়েছে জিনপিং সরকারের। কোনও অবস্থাতেই দেশীয় শিল্পকে ডুবতে দেবেন না তিনি। যদিও বেজিঙের উপর ট্রাম্প বিপুল অঙ্কের শুল্ক চাপানোয় ড্রাগনের উৎপাদন ক্ষেত্রে মারাত্মক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে সতর্কবার্তা দিয়েছেন দুনিয়ার তাবড় অর্থনীতিবিদেরা।

০৪ ১৮

বিশেষজ্ঞদের দাবি, শুল্কযুদ্ধে আমেরিকাকে সমানে সমানে টক্কর দিতে দীর্ঘ দিন ধরে ভিতরে ভিতরে প্রস্তুতি নিয়েছে বেজিং। প্রেসিডেন্ট শি কমিয়েছেন মার্কিন নির্ভরতা। ২০১৮ সালে বেজিঙের মোট রফতানি পণ্যের ২০ শতাংশ যেত আমেরিকায়। বর্তমানে সেটাই কমে ১৫ শতাংশে নেমে এসেছে। ফলে ওয়াশিংটন উচ্চ হারে শুল্ক চাপালেও, ড্রাগন-অর্থনীতির তা সহ্য করার ক্ষমতা রয়েছে।

০৫ ১৮

দ্বিতীয়ত, মার্কিন শুল্কের ছোবল এড়াতে ভিয়েতনাম এবং কম্বোডিয়ার উপর ভরসা করছেন চিনা শিল্পপতিরা। এই দুই দেশের মাধ্যমে আমেরিকার বাজারে পণ্য রফতানির পরিকল্পনা রয়েছে তাঁদের। এ ভাবে ঘুরপথে ব্যবসা করলে মাত্র ১০ শতাংশ কর দিয়েই যুক্তরাষ্ট্রে বিভিন্ন সামগ্রী সরবরাহ করতে পারবে ড্রাগন।

০৬ ১৮

তৃতীয়ত, বৈদ্যুতিন সরঞ্জামের ক্ষেত্রে ভারতীয় বাজারে একচেটিয়া আধিপত্য বজায় রাখতে এ দেশের সংস্থাগুলিকে পাঁচ শতাংশ ছাড়ে পণ্য সরবরাহের প্রস্তাব দিয়েছে বহু চিনা সংস্থা। যদিও এখনও তাতে সবুজ সঙ্কেত দেয়নি নয়াদিল্লি। আর তাই কেন্দ্রের মন গলাতে অন্য চাল দিচ্ছে ড্রাগন। একেবারে নাম করে ভারতের উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করছে বেজিঙের বিদেশ মন্ত্রক। শুধু তা-ই নয়, সুর পাল্টে সীমান্ত সমস্যা মিটিয়ে ফেলার বার্তাও দিয়েছে তারা।

০৭ ১৮

চতুর্থত, চিনের হাতে রয়েছে বিপুল পরিমাণে বিরল খনিজের ভান্ডার। বৈদ্যুতিন গাড়ি, সোলার প্যানেল, সেমিকন্ডাক্টর বা মহাকাশ গবেষণার মতো অত্যাধুনিক প্রযুক্তির উন্নতির যা অত্যাবশ্যক উপাদান। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (আর্টিফিশিয়াল ইনটেলিজেন্স বা এআই) বা রোবটিক্সের মতো জটিল বিষয়ে বেজিংকে উন্নতির শিখরে নিয়ে গিয়েছেন সে দেশের বিজ্ঞানীরা। হুয়াওয়ে এবং ডিপসিকের মতো সংস্থাগুলি মার্কিন টেক জায়ান্টগুলির চেয়ে কোনও অংশে কম নয়।

০৮ ১৮

বিশেষজ্ঞেরা মনে করেন, রাজনৈতিক কারণেও দীর্ঘকালীন শুল্কযুদ্ধ চালিয়ে নিয়ে যাওয়ার সাহস পাচ্ছেন প্রেসিডেন্ট শি। কারণ, মার্কিন আইন অনুযায়ী, কোনও ব্যক্তি দু’বারের বেশি প্রেসিডেন্ট হিসাবে নির্বাচিত হতে পারেন না। চলতি বছরে দ্বিতীয় বারের জন্য শপথ নিয়েছেন ট্রাম্প। তাঁর কার্যকালের মেয়াদ মাত্র চার বছর।

০৯ ১৮

অন্য দিকে প্রেসিডেন্ট শির ক্ষেত্রে এই ধরনের কোনও বাধ্যবাধকতা নেই। কমিউনিস্ট চিনের প্রতিষ্ঠাতা কিংবদন্তি চেয়ারম্যান মাও জে দঙের পর সবচেয়ে শক্তিশালী নেতা হিসাবে আত্মপ্রকাশ করেছেন তিনি। এই অবস্থায় মার্কিন প্রেসিডেন্টের ‘আগ্রাসী’ শুল্কনীতি মেনে নিয়ে মুখ বুজে থাকলে, তা হবে আত্মসমর্পণের সামিল। আর তাই পাল্টা প্রত্যাঘাতের রাস্তাই বেছে নিয়েছেন তিনি।

১০ ১৮

মার্কিন আর্থিক পরিষেবা সংস্থা জেপি মর্গ্যানের দাবি, চিনের সঙ্গে এ ভাবে খোলাখুলি শুল্কযুদ্ধে গেলে আখেরে লোকসান হবে আমেরিকার। এর জন্য যুক্তরাষ্ট্রের ভোক্তা বাজার এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলির মোট ৮৬ হাজার কোটি ডলার পর্যন্ত ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। আটলান্টিকের পারের ‘সুপার পাওয়ার’ দেশটিতে বৈদ্যুতিন সরঞ্জাম, বিভিন্ন ধরনের যন্ত্রপাতি এবং শিল্প উপকরণের অগ্নিমূল্য বা আকাল তৈরি হওয়ার প্রবল আশঙ্কা রয়েছে।

১১ ১৮

বহুজাতিক মার্কিন সংস্থাগুলির মধ্যে ব্যাটারিচালিত গাড়ি নির্মাণকারী সংস্থা টেসলা এবং আইফোনের কোম্পানি অ্যাপলের কাছে চিনের গুরুত্ব অপরিসীম। ড্রাগনভূমিতেই তৈরি হয়ে এই ধরনের সংস্থাগুলির বহু পণ্য। এ ছাড়া মান্দারিনভাষীদের কাছে আমেরিকার চলচ্চিত্রের আলাদা কদর রয়েছে। আর তাই সেখানে ব্যবসা করে বিপুল অর্থ রোজগার করেন হলিউডের সিনে প্রযোজকেরা।

১২ ১৮

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে শুল্কযুদ্ধ শুরু হওয়ার পর মার্কিন ছবিকে নিষিদ্ধ করছেন প্রেসিডেন্ট শি। সূত্রের খবর, হলিউডের একাধিক প্রযোজক সংস্থার বিপুল পরিমাণ শেয়ার রয়েছে বেজিঙের শিল্পপতিদের হাতে। ফলে সে দিক থেকে আমেরিকার বিপদ বাড়ল বলেই মনে করছেন আর্থিক বিশ্লেষকেরা।

১৩ ১৮

তবে এর উল্টো যুক্তিও রয়েছে। সংবাদ সংস্থা সিএনএনের প্রতিবেদন অনুযায়ী, লম্বা সময় ধরে শুল্কযুদ্ধ চললে চিনে রকেটগতিতে বাড়বে বেকারত্ব। ভেঙে পড়তে পারে রফতানি বাণিজ্য। পাশাপাশি, ড্রাগনভূমিতে ব্যাঙ্ক এবং একাধিক শিল্প কেন্দ্রে লালবাতির জ্বলার আশঙ্কাও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।

১৪ ১৮

তবে দুই মহাশক্তিধরের এই আর্থিক লড়াইয়ের জেরে ধাক্কা খেয়েছে দুনিয়ার সরবরাহ শৃঙ্খল। অর্থনীতিবিদদের একাংশ মনে করেন, এর জেরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে মুদ্রাস্ফীতি এবং মন্দা আসার আশঙ্কা রয়েছে। ইতিমধ্যেই তার ইঙ্গিত যুক্তরাষ্ট্রের শেয়ার বাজারের অস্থিরতা থেকে টের পাওয়া গিয়েছে। আমেরিকা মন্দার কবলে পড়লে বিশ্বের অন্যত্র যে তার প্রভাব পড়বে, তা বলাই বাহুল্য।

১৫ ১৮

গত ২ এপ্রিল নতুন পারস্পরিক শুল্কনীতির কথা ঘোষণা করেন ট্রাম্প। তাতে চিনা পণ্যে ৬৭ শতাংশ কর চাপান তিনি। গত ১০ এপ্রিল সেই অঙ্ক বাড়িয়ে ১৪৫ শতাংশ করে দেয় ওয়াশিংটন। ভারত-সহ বিশ্বের অন্য দেশগুলির ক্ষেত্রেও পারস্পরিক শুল্কনীতি প্রযোজ্য হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু হঠাৎ করেই ৯০ দিনের জন্য তা স্থগিত করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। ফলে আপাতত সবার থেকে ১০ শতাংশ হারে কর নেবে আমেরিকা।

১৬ ১৮

কিন্তু, এ ক্ষেত্রে একমাত্র চিনকে বাদ রেখেছে যুক্তরাষ্ট্র। বেজিঙের পণ্যে ১৪৫ শতাংশ শুল্কই নেবে ট্রাম্প প্রশাসন। এর পরই দুই দেশের মধ্যে আর্থিক লড়াই অন্য মাত্র নেয়। ১১ এপ্রিল শি-র সরকার ঘোষণা করে দেয় যে, এ বার থেকে মার্কিন পণ্যে ১২৫ শতাংশ শুল্ক ধার্য করা হবে। ট্রাম্পের প্রথম ঘোষণার পর প্রথমে ৩৭ এবং পরে তা বাড়িয়ে ৮৪ শতাংশ করের কথা ঘোষণা করেছিল ড্রাগন প্রশাসন।

১৭ ১৮

সংবাদ সংস্থা রয়টার্স চিনা অর্থ মন্ত্রকের বার্তা উদ্ধৃত করে বলেছে, ‘‘আমেরিকা যদি চিনের স্বার্থের উপর বার বার আঘাত হানে, তবে দৃঢ় ভাবে পাল্টা ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমরা শেষ পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে যাব।’’ তবে এ ব্যাপারে আলোচনার রাস্তা যে খোলা রয়েছে, তা বার বার স্পষ্ট করেছে বেজিং। পাশাপাশি এটাও জানিয়েছে যে, কোনও অবস্থাতেই ব্ল্যাকমেলিং বরদাস্ত করবেন তাঁরা।

১৮ ১৮

অন্য দিকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের শুল্কনীতির বিরুদ্ধে একজোট হওয়ার বার্তা দিয়েছেন চিনের প্রেসিডেন্ট জিনপিং। ইউরোপীয় ইউনিয়নকে (ইইউ) ‘সংঘবদ্ধ’ হয়ে লড়াইয়ে নামার বার্তা দিয়েছেন তিনি। একাধিক ইস্যুতে সাম্প্রতিক সময়ে ইইউর সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কে ফাটল ধরেছে। সেটাকে কাজে লাগিয়ে পশ্চিম ইউরোপেকে বন্ধু হিসাবে পেলে শি-র অবস্থা আরও মজবুত হবে বলে মনে করছেন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞেরা।

সব ছবি: সংগৃহীত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on:
আরও গ্যালারি
Advertisement