China Attack Piyush Goyal

বাণিজ্য নিয়ে ‘কেলোর কীর্তি’ ফাঁস হতেই গায়ে ফোস্কা! ভারতের মন্ত্রীকে নিয়ে বিষ উগরোচ্ছে জিনপিঙের চিন

মার্কিন-চিন শুল্কযুদ্ধে কাঁপছে বিশ্ব। এর জন্য বেজিংকে কাঠগড়ায় দাঁড় করালেন কেন্দ্রীয় বাণিজ্যমন্ত্রী। পাশাপাশি, উদ্ভূত পরিস্থিতিকে ‘সুবিধাজনক’ বলে আখ্যা দিয়েছেন তিনি।

Advertisement
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ১২ এপ্রিল ২০২৫ ১৫:৫১
Share:
০১ ১৮
Indian Minister Piyush Goyal slammed by Chinese media amid Tariff War with US

কেন্দ্রীয় বাণিজ্যমন্ত্রী পীযূষ গয়ালের উপর রেগে আগুন চিন। একেবার নাম করে তাঁকে খোঁচা দিয়েছে বেজিঙের সরকারি সংবাদ সংস্থা। তাদের অভিযোগ, মার্কিন অনুগ্রহ পেতে ড্রাগন-বিরোধী অবস্থান নিচ্ছেন তিনি। চিনকে নিয়ে করছেন বিষোদ্গার। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে শুল্কযুদ্ধের আবহে বেজিঙের সরকারি গণমাধ্যমের এই ধরনের প্রতিবেদনকে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে।

০২ ১৮
Indian Minister Piyush Goyal slammed by Chinese media amid Tariff War with US

গত ৯ এপ্রিল গয়ালকে খোঁচা দিয়ে একটি লম্বা প্রতিবেদন প্রকাশ করে চিনা সরকারি সংবাদমাধ্যম গ্লোবাল টাইমস। প্রতিবেদনের ছত্রে ছত্রে ছিল ভারতীয় মন্ত্রীর তীব্র সমালোচনা। পাশাপাশি, সিচুয়ান ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজ় বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অফ ইন্টারন্যাশনাল রিলেশন্সের অধ্যাপক লং জ়িংচুনকে উদ্ধৃত করে সেখানে লেখা হয়, ‘‘চিনের উপর সমস্ত দোষ চাপিয়ে দিয়ে আমেরিকার থেকে শুল্কে ছাড় পাওয়ার চেষ্টা করছেন গয়াল।’’

Advertisement
০৩ ১৮
Indian Minister Piyush Goyal slammed by Chinese media amid Tariff War with US

গ্লোবাল টাইমসের সমস্ত প্রতিবেদনেই চিনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং এবং তাঁর সরকারের জাতীয় অবস্থানের প্রতিফলন মেলে। সেখানে একের পর এক আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞেরা যে ভাবে গয়ালকে নিশানা করেছেন, তা নজিরবিহীন। এ ব্যাপারে মুখ খুলেছেন সিংহুয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ভারত অধ্যয়ন’ (ইন্ডিয়ান স্টাডিজ়) বিভাগের সহকারী অধ্যাপক শি চাও। তাঁর কথায়, ‘‘মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য সমঝোতা চাইছে নয়াদিল্লি। আর তাই বেজিং-ওয়াশিংটন শুল্কযুদ্ধ থেকে কী ভাবে লাভবান হওয়া যায়, তার ফিকির খুঁজছেন গয়াল।’’

০৪ ১৮

কেন্দ্রীয় বাণিজ্যমন্ত্রীকে নিয়ে চিনের গায়ে ফোস্কা পড়ার একাধিক কারণ রয়েছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্ক নীতিকে ‘সারা জীবনের জন্য বড় সুযোগ’ (লাইফটাইম অপরচুনিটি) বলে উল্লেখ করেছেন তিনি। পাশাপাশি, বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থায় (ওয়ার্ল্ড ট্রেড অর্গানাইজ়েশন বা ডব্লুটিও) অন্তর্ভুক্তির পর থেকে ‘অন্যায় ভাবে ব্যবসা’ (আনফেয়ার ট্রেড প্র্যাক্টিস) করার অভিযোগে বেজিংকে কাঠগড়ায় তুলেছেন তিনি।

০৫ ১৮

সম্প্রতি, আমেরিকার পারস্পরিক শুল্কনীতি নিয়ে বিশ্ব জুড়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ায় বিষয়টির ব্যাখ্যা দিয়েছেন গয়াল। সেখানেই চিনকে সরাসরি নিশানা করে তিনি বলেন, ‘‘কেউ যদি জিজ্ঞাসা করে, কেন আজ এই অবস্থার সৃষ্টি হল, তা হলে আমাদের কিছুটা পিছিয়ে যেতে হবে। এর সূত্রপাত হয় ১৯৮০-র দশকের শেষ দিকে এবং ১৯৯০-র দশকের মাঝামাঝি, যখন বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থায় বেজিঙের অন্তর্ভুক্তি ঘটে।’’

০৬ ১৮

এ ব্যাপারে গয়াল যে খুব একটা ভুল বলছেন, এমনটা নয়। বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থায় পা রাখার পর পরই ‘সর্বাধিক পছন্দের রাষ্ট্র’র (মোস্ট ফেভার্ড নেশন) তকমা পেয়ে যায় চিন। এটাকে হাতিয়ার করে পরবর্তী বছরগুলিতে ইউরোপ এবং আমেরিকার সঙ্গে বাণিজ্য ঘাটতি বাড়িয়ে গিয়েছে বেজিং। ফলে ফুলেফেঁপে উঠেছে ড্রাগনভূমির কোষাগার। অন্য দিকে আর্থিক ভাবে লোকসান সহ্য করেছে পশ্চিমি দুনিয়া।

০৭ ১৮

কেন্দ্রীয় বাণিজ্যমন্ত্রীর উপর ড্রাগনের রাগের আরও একটি কারণ রয়েছে। আমেরিকার সঙ্গে শুল্কযুদ্ধের আবহে প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগের (ফরেন ডিরেক্ট ইনভেস্টমেন্ট বা এফডিআই) ‘ছদ্মবেশে’ ভারতীয় শেয়ার বাজারে বিপুল লগ্নির স্বপ্ন দেখেছিল চিন। কিন্তু, বেজিঙের সব আশায় জল ঢেলেছেন গয়াল। ১১ এপ্রিল একটি অনুষ্ঠানে এই নিয়ে প্রকাশ্যে বিবৃতি দেন তিনি। সেখানেই যাবতীয় ব্যাপারটি স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে।

০৮ ১৮

গয়াল বলেছেন, ‘‘চিন থেকে আসা বিনিয়োগকে আমরা উৎসাহিত করছি না। এটাই সরকারের নীতি। ওখান থেকে খুব কমই এফডিআই এসেছে। ২৫ বছর আগে যখন এটা দু’দেশের জন্য উন্মুক্ত করা হয়, তখনও ভারতের বাজারে লগ্নির ব্যাপারে খুব একটা উৎসাহ দেখায়নি বেজিং।’’

০৯ ১৮

২০২০ সালের এপ্রিল থেকে চিনের মতো ভারতের সঙ্গে স্থলসীমান্ত থাকা দেশগুলির ক্ষেত্রে এফডিআইতে বিনিয়োগে কেন্দ্রীয় অনুমতি বাধ্যতামূলক করেছে সরকার। তথ্য বলছে, গত বছরের মার্চ পর্যন্ত এ দেশের বাজারে মোট এফডিআইয়ের ইকুইটি বাজারে বেজিঙের অবদান ছিল মাত্র ০.৩৭ শতাংশ, যেটা ২৫০ কোটি ডলারের সমান।

১০ ১৮

উল্লেখ্য, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে শুল্কযুদ্ধে নেমে ভারতকে কাছে পাওয়ার মরিয়া চেষ্টা করছে চিন। নয়াদিল্লির মন গলাতে কয়েক দিন আগে তাৎপর্যপূর্ণ মন্তব্য করে ড্রাগনভূমির বিদেশ মন্ত্রক। একটি বিবৃতিতে বলা হয়, আমেরিকার শুল্কের সমস্যাগুলি কাটিয়ে উঠতে দুই দেশের একে অপরের পাশে দাঁড়ানো উচিত। তখনই ‘হাতি ও ড্রাগনের নাচ’ দেখতে পাবে গোটা দুনিয়া। কিন্তু, এতে যে তেমন কোনও লাভ হয়নি তা স্পষ্ট।

১১ ১৮

উল্টে ইতিমধ্যেই পারস্পরিক শুল্কনীতির প্রভাব পর্যালোচনা শুরু করেছে ট্রাম্প প্রশাসন। তারই অংশ হিসাবে বাণিজ্য সহযোগী ৭০টি দেশ মোট চার থেকে পাঁচটি তালিকায় ভাগ করা হয়েছে। সেখানে ওয়াশিংটনের ‘অকৃত্রিম বন্ধু’ ইজ়রায়েলের পাশে জায়গা পেয়েছে ভারত। দু’টি দেশই রয়েছে ছাড় পাওয়ার তালিকায়। অন্য দিকে চিন ও কানাডাকে প্রত্যাঘাতের তালিকায় রেখেছে আমেরিকা।

১২ ১৮

ট্রাম্প শুল্ক নীতি চালু করার ইস্তক বেশ কয়েক বার এ ব্যাপারে বয়ান দিয়েছেন গয়াল। আমেরিকার সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তির ব্যাপারে কথাবার্তা চলছে বলেছে জানিয়েছেন তিনি। সূত্রের খবর, চলতি বছরের শেষ দিকে ওই চুক্তি সেরে ফেলতে পারে দুই দেশ। সে ক্ষেত্রে আর্থিক ভাবে তেমন কোনও লোকসান হবে না নয়াদিল্লির।

১৩ ১৮

বিশ্লেষকদের দাবি, আমেরিকা-চিন শুল্কযুদ্ধে বেশ কিছু জায়গায় নয়াদিল্লির আর্থিক ভাবে বিকশিত হওয়ার বড় সুযোগ রয়েছে। প্রথমত, এই আবহে ড্রাগনভূমি থেকে যাবতীয় বিনিয়োগ সরাতে দেশীয় শিল্পপতিদের উপর চাপ তৈরি করছেন ট্রাম্প। সে ক্ষেত্রে বিকল্প হিসাবে ব্যাটারিচালিত গাড়ি নির্মাণকারী সংস্থা টেসলা বা আইফোনের কোম্পানি অ্যাপলের ভারতকে বেছে নেওয়ার প্রভূত সম্ভাবনা রয়েছে।

১৪ ১৮

দ্বিতীয়ত, ট্রাম্পের পারস্পরিক শুল্ক নীতিতে মোটেই খুশি নয় ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) এবং ব্রিটেন। নয়াদিল্লির সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি করার ক্ষেত্রে উৎসাহ দেখিয়েছে তারাও। এতে পশ্চিম ইউরোপের দরজা খুলে যাবে এ দেশের শিল্পপতিদের সামনে।

১৫ ১৮

তৃতীয়ত, শুল্কযুদ্ধের মধ্যে আমেরিকার চলচ্চিত্র নিষিদ্ধ করেছেন প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। ফলে ড্রাগনভূমিতে মুক্তি পাবে না হলিউডের কোনও সিনেমা। চিনে আবার ভারতীয় সিনেমা প্রবল জনপ্রিয়। আমির খান অভিনীত ‘দঙ্গল’ সেখানে কয়েকশো কোটি টাকা রোজগার করেছিল। ফলে বর্তমান পরিস্থিতিকে কাজে লাগিয়ে বেজিঙে ব্যবসা বৃদ্ধির সুযোগ রয়েছে বলিউডের।

১৬ ১৮

আর্থিক বিশ্লেষকদের একাংশ মনে করেন, লম্বা সময় ধরে আমেরিকার সঙ্গে শুল্কযুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার ক্ষমতা আছে চিনের। কিন্তু, যুক্তরাষ্ট্রের পাশাপাশি ভারতের বাজারও বেজিঙের সামনে বন্ধ হয়ে গেলে তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়বে সেখানকার অর্থনীতি। হু-হু করে বাড়বে বেকারত্ব। ব্যাঙ্ক থেকে শুরু করে একাধিক শিল্প সংস্থায় রাতারাতি জ্বলতে পারে লালবাতি।

১৭ ১৮

বর্তমানে বৈদ্যুতিন সরঞ্জামের ৭৫ শতাংশ চিন থেকে আমদানি করে ভারত। শুল্কযুদ্ধের আবহে সেই অঙ্ক হ্রাস করার বড় সুযোগ নয়াদিল্লির সামনে রয়েছে বলে মনে করেন আর্থিক বিশ্লেষকদের একাংশ। আর তাই গয়ালের উপর বেজায় খাপ্পা ড্রাগন। নজর ঘোরাতে ফের সীমান্তে নতুন করে অশান্তি পাকানোর চেষ্টা করতে পারে তাদের ‘পিপল্‌স লিবারেশন আর্মি’ বা পিএলএ, বলছেন বিশেষজ্ঞেরা।

১৮ ১৮

বর্তমানে চিনের উপর ১৪৫ শতাংশ শুল্ক চাপিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। পাল্টা আমেরিকার পণ্যে ১২৫ শতাংশ শুল্ক ধার্য করেছে বেজিং। ড্রাগনভূমির অর্থ মন্ত্রক বিবৃতি দিয়ে বলেছে, ‘‘আমেরিকা যদি চিনের স্বার্থের উপর বার বার আঘাত হানে, তবে দৃঢ় ভাবে পাল্টা ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমরা শেষ পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে যাব।’’ পাশাপাশি এ ব্যাপারে ইইউকে একজোট হওয়ার বার্তা দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট শি।

সব ছবি: সংগৃহীত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on:
আরও গ্যালারি
Advertisement