ব্রিটেনের নয়া প্রধানমন্ত্রী কি ঋষি সুনক? সেই দৌড়ে তিনি নিজের নাম নিজেই ঘোষণা করে দিয়েছেন। এখন জল্পনার আলোবৃত্তের মধ্যিখানে তিনি।
জল্পনার জল গড়িয়ে তা প্রধানমন্ত্রীর কুর্শি পর্যন্ত পৌছবে কিনা তা সময়ই বলবে। তবে ঋষি প্রধানমন্ত্রী হলে তিনিই হবেন প্রথম ভারতীয় বংশোদ্ভূত ব্যক্তি যিনি সে দেশ চালানোর ভার পেলেন।
১৯৮০ সালের ১২ মে ব্রিটেনের বন্দর সাউদাম্পটনে জন্ম হয় ঋষির। বাবা চিকিৎসক। জাতীয় স্বাস্থ্য পরিষেবার কর্মী। তাঁর মায়ের নিজস্ব ওষুধের দোকান ছিল।
স্বাস্থ্য পরিষেবার সঙ্গে বাবা-মা অঙ্গাঙ্গি ভাবে জড়িত থাকলেও অক্সফোর্ড এবং স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক ঋষি কিন্তু সে সবের ধারেকাছেও যাননি। রাজনীতিতে নামার আগে তিনি ছিলেন পুরোদস্তুর এক জন বিনিয়োগ ব্যবসায়ী।
ব্রিটেনের অন্যতম বৃহৎ বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠানের তিনি ছিলেন এক জন সহপ্রতিষ্ঠাতা। ক্যালিফোর্নিয়ার সিলিকন ভ্যালি থেকে বেঙ্গালুরু তথ্য-প্রযুক্তি সংস্থা— সবেতেই ছিল তাঁর সংস্থার বিনিয়োগ।
ঋষি ভারতীয় তথ্যপ্রযুক্তি বহুজাতিক সংস্থা ইনফোসিসের সহ-প্রতিষ্ঠাতা নারায়ণমূর্তির জামাই। ২০০৯ সালে ক্যালিফর্নিয়ায় তাঁর ভাবী স্ত্রী অক্ষতার নারায়ণমূর্তির সঙ্গে পরিচয় হয়। সে বছরই তাঁরা বিয়ে করেন।
ঋষি ও অক্ষতার দুই মেয়ে হয়। নাম, অনুষ্কা ও কৃষ্ণা। বিশ্বে অন্যতম ধনী দম্পতি। উভয়ের মিলিত সম্পত্তির পরিমাণ ৭৩ হাজার লক্ষ পাউন্ড।
২০১৫ সালে কনজারভেটিভের হয়ে ভোট দাঁড়িয়ে রিচমন্ড ইয়র্কশায়ার থেকে জিতে সাংসদ হন তিনি। তার পর আর তাঁকে ফিরে তাকাতে হয়নি। দলে ক্রমশই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠেন ঋষি।
বরিসের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করার আগে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীর একনিষ্ঠ সমর্থন ছিলেন তিনি। ফলে তাঁর মন্ত্রিসভা অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব পান ঋষি।
তরুণ তুর্কি হিসাবে কনজারভেটিভ পার্টিতে তিনি ছিলেন জনপ্রিয় মুখ। সরকারি মুখপাত্র হিসাবে তাঁকে টিভি-রেডিয়োর বিভিন্ন অনুষ্ঠানে পাঠাতেন বরিস। ‘ইরোপিয়ান ইউনিয়ান’ থেকে বেরিয়ে আসার পক্ষে প্রচারে তিনি বরিসের সঙ্গী ছিলেন।
অতিমারির সময় ব্যবসায়ী এবং কর্মচারীদের জন্য বিপুল অর্থমূল্যের আর্থিক প্যাকেজ তৈরি করে জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। সেই সময় তাঁর দলের ওয়েবসাইটে তাঁকে ‘পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী’ হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছিল।
তবে রাজনীতি এসে একাধিকার বার বিতর্কে জড়িয়েছেন ঋষি। ব্রিটেনের সংসদের নিম্ন কক্ষ ‘হাউস অব কমন্সে’ শপথ নেন গীতা নিয়ে।
সম্প্রতি আরও দু’টি বিতর্কে জড়িয়েছেন ঋষি। বরিসের সঙ্গী হিসাবে ‘পার্টিগেট’ বিতর্কে জড়িয়ে পড়েন তিনি।
কী এই ‘পার্টিগেট’ বিতর্ক? কোভিড বিধি না মেনে ১০ নম্বর ডাউনিং স্ট্রিটে (প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন) একটি পার্টির ডাক দেন বরিস। সেখানে অংশগ্রহণ করেন ঋষিও।
এ ছাড়া ইনফোসিসে তাঁর স্ত্রী অক্ষতা মূর্তির অংশীদারিত্ব এবং সেখান থেকে প্রাপ্ত আয় বাবদ অর্থের উপর কর না দেওয়ারও অভিযোগ উঠেছিল। ব্রিটেনের কর ব্যবস্থায় তাঁর স্ত্রী অক্ষতাকে ‘নন-ডোমিসাইলড’ হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছিল। ব্রিটেনের স্থায়ী নাগরিক যারা নন তাঁদের এই তকমা দেওয়া হয়।
পর পর বিতর্কে জনপ্রিয়তা হারাতে শুরু করেন ঋষি। তবে বরিসের বিরুদ্ধে তাঁর বিদ্রোহ ফের তাঁর জনপ্রিয়তা ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করেছে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা।
তাঁর ইস্তফার ২৪ ঘণ্টা পেরোতে না পেরোতেই পদত্যাগ করেন প্রধানমন্ত্রী বরিস। আবার তার ২৪ ঘণ্টা মধ্যেই নিজেকে কনজারভেটিভ পার্টির নেতা হিসাবে প্রচার শুরু করে দিয়েছেন ঋষি। নিজের জন্য যে প্রচার কর্মসূচি শুরু করেছেন তার নাম দিয়েছেন ‘রেডি ফর ঋষি’। সেখানে একটি ভিডিয়ো শেয়ার করেছেন তিনি।
তাতে দেশের জন্য কী করতে চান, তার পাশাপাশি রয়েছে ঋষির মা-বাবার কথা। তাঁদের লড়াইয়ের কথা। ঋষির বড় হয়ে ওঠার কথা। লড়াইয়ে থাকার বার্তা দিয়ে সেই ভিডিয়োয় ঋষি জানিয়েছেন, তিনি ব্রিটেনের হৃত বিশ্বাস পুনরুদ্ধার, অর্থনীতিতে পুনরায় শক্তিসঞ্চার করে দেশকে একজোট করতে চান।
তিনি প্রতিটি সন্তানকে একই অধিকার দিয়ে আগামী প্রজন্মের জন্য ব্রিটেনকে বাসযোগ্য করে তুলতে চান।
ঋষি বলেছেন, ‘‘এই সময়ের লাগাম হাতে ধরার জন্য কাউকে এগিয়ে আসতেই হবে।’’ তিনি এগিয়ে এসেছেন। এখন লাগাম কখন তাঁর হাতের নাগালে পৌঁছয় সেটাই দেখার।