বলিউডে টুকটাক সুযোগ তিনি আগেও পেয়েছেন। সাধ্যমতো অভিনয় করেছেন, তাঁর রূপ এবং অভিনয়ের চটক নজরও কেড়েছে দর্শকদের। কিন্তু বড় ব্রেক আগে ছিল না।
অবশেষে বহু প্রতীক্ষিত সেই ‘ব্রেক’ পেয়েছেন অদা শর্মা। শুধু ব্রেক নয়, দেশ জুড়ে রীতিমতো তোলপাড় ফেলে দিয়েছেন এই মুম্বই-কন্যা। তাঁর অভিনীত ‘দ্য কেরালা স্টোরি’ এখন চারদিকে চর্চার কেন্দ্রে।
ধর্মীয় বিতর্ক এই ছবির মূল উপজীব্য। যে কারণে মুক্তির আগে শুধুমাত্র ট্রেলার দেখেই ছবিটি নিয়ে হইচই শুরু হয়ে গিয়েছে। বিরোধিতায় সরব হয়েছে খোদ কেরল সরকার। এ ছাড়া, একাধিক রাজনৈতিক দল এই ছবির বিরোধিতা করছে।
কী আছে ‘দ্য কেরালা স্টোরি’তে? এই ছবিতে হিন্দু তরুণীকে ‘ফাঁদ’ পেতে ইসলাম ধর্ম গ্রহণে বাধ্য করা এবং সিরিয়ার জঙ্গি দলে যোগ দিতে পাঠানোর একটি সুপরিকল্পিত চক্রান্তকে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। তাই নিয়েই যত বিতর্ক।
ছবির কেন্দ্রীয় চরিত্র শালিনী উন্নিকৃষ্ণাণের ভূমিকায় অভিনয় করেছেন অদা। ভাগ্যের ফেরে তিনি শালিনী থেকে হয়েছেন ‘ফতিমা’। তাঁরই কাহিনি, জীবন সংগ্রামকে ঘিরে ছবির চিত্রনাট্য আবর্তিত হয়েছে।
‘দ্য কেরালা স্টোরি’র পরিচালক বাঙালি। সুদীপ্ত সেন জলপাইগুড়ির ছেলে। বলিউডে এর আগে তাঁরও একাধিক কাজ রয়েছে। তবে সুদীপ্তকেও খ্যাতি এনে দিল অদার এই ছবিই। অনেকেই বলছেন, শালিনী ওরফে ফতিমার চরিত্রে অদাকে নির্বাচন সুদীপ্তের ‘মাস্টারস্ট্রোক’।
বলিউডে অদার অভিষেক হয় ২০০৮ সালে। ভৌতিক ছবি ‘১৯২০’-তে কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন তিনি। এর পর ‘হাসি তো ফাসি’, ‘কমান্ডো ২’, ‘কল্কি’, ‘চার্লি চ্যাপলিন ২’-এর মতো একাধিক হিন্দি, তামিল, তেলুগু ছবিতে তাঁকে দেখা গিয়েছে।
১৯৯২ সালে অদার জন্ম মুম্বইয়ে। তাঁর বাবা এস.এল শর্মা ভারতীয় নৌবাহিনীর ক্যাপ্টেন ছিলেন। মা শিলা শর্মা নৃত্যশিল্পী। ছোটবেলা থেকে সাংস্কৃতিক আবহেই বড় হয়েছেন অদা। তবে বেশি দূর পড়াশোনা করেননি।
স্কুলের পড়া শেষ করেই অদা প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষায় ইতি টানেন। সংস্কৃতির দুনিয়ায় কেরিয়ার গড়ার দিকে ঝোঁকেন তিনি। লক্ষ্য ছিল মূলত নাচ এবং সিনেমা। কত্থকে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন অদা।
শুধু প্রাচীন ভারতীয় নৃত্যকলাই নয়, নিজেকে সব ধরনের নাচেই পারদর্শী করে তুলেছেন অদা। আগ্রহ এবং একনিষ্ঠতায় একে একে শিখেছেন সালসা, ব্যালে এবং জ্যাজ়। পাশ্চাত্যের জনপ্রিয় নাচের ভঙ্গিতে তুখোড় এই বলিকন্যা।
সংবাদমাধ্যমের রিপোর্টে দাবি, ৩০ বছর বয়সে বর্তমানে অদার সম্পত্তির পরিমাণ প্রায় ১০ কোটি। তথাকথিত সুপারহিট ছবিতে নায়িকা হিসাবে সাফল্য না পেলেও অদার আয় কম নয়।
হিন্দি, তামিল, তেলুগু ছবিতে অভিনয় ছাড়াও একাধিক ওয়েব সিরিজ, মিউজ়িক ভিডিয়ো এবং স্বল্পদৈর্ঘ্যের ছবিতে অদার কাজ প্রশংসা কুড়িয়েছে। বড় পর্দায় তিনি যথেষ্ট পরিচিত মুখ। অনেক বিজ্ঞাপনেও অদাকে দেখা গিয়েছে।
‘দ্য কেরালা স্টোরি’ নিয়ে যতই বিতর্ক হোক, অদার কাজ সেখানে প্রশংসিত হয়েছে। ফিল্ম সমালোচকেরা অনেকেই জানিয়েছেন, এই ধরনের চরিত্রে অদাকে বেছে নেওয়ার সিদ্ধান্ত ১০০ শতাংশ ঠিক।
অদার মুখের স্বাভাবিক সারল্য শালিনীর চরিত্রের অসহায়তাকে ফুটিয়ে তুলতে সাহায্য করেছে, মত বিশেষজ্ঞদের। তাঁকে নিয়ে বিতর্ক নয়, বিতর্ক দানা বেঁধেছে এই ছবির কাহিনিতে।
কংগ্রেস, সিপিএমের মতো দলগুলি একযোগে ‘দ্য কেরালা স্টোরি’কে ‘রাজনৈতিক প্রোপাগান্ডা’ আখ্যা দিয়েছে। এই ছবি রাজনৈতিক উদ্দেশ্য সাধনের জন্যই তৈরি, দাবি বিরোধীদের। এ ক্ষেত্রে, কেন্দ্রের বিজেপি সরকারকে কাঠগড়ায় তোলা হয়েছে।
আশঙ্কা, দেশের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে অদার এই ছবি জনমানসে এক বিশেষ জনগোষ্ঠীর প্রতি বিরোধিতার সৃষ্টি করবে। এই বিতর্ক নিয়ে সমাজমাধ্যমেও আকছার আলোচনা চলছে। ঠিক যেমনটা হয়েছে সাম্প্রতিক আরও একটি ছবি ‘কাশ্মীর ফাইল্স’-এ।
বিতর্কের আবহে চুপ করে নেই অদা নিজেও। টুইটারে তিনি এই ছবিকে ঘিরে বিতর্ক নিয়ে মুখ খুলেছেন। দর্শকদের উদ্দেশে অদার বার্তা, ‘‘যাঁরা ছবিটির বিরোধিতা করছেন, তাঁরা আগে ছবিটি দেখে আসুন। তার পর এ বিষয়ে মতামত গড়ে তুলে আলোচনা চলতে পারে।’’