ফ্ল্যাট বিক্রির নামে প্রতারণা মামলায় অভিনেত্রী-সাংসদ নুসরত জাহানের পর ‘সেভেন সেন্সেস ইনফ্রাস্ট্রাকচার প্রাইভেট লিমিটেড’ সংস্থার আরও এক ‘ডিরেক্টর’কে তলব করল ইডি। ঘটনাচক্রে, তিনিও অভিনেত্রী। নাম রূপলেখা মিত্র।
ইডি সূত্রে খবর, রাকেশ সিংহ এবং নুসরত জাহানের মতো রূপলেখাও ওই সংস্থার ডিরেক্টর ছিলেন। তদন্তকারী আধিকারিকদের দাবি, ‘সেভেন সেন্সেস ইনফ্রাস্ট্রাকচার প্রাইভেট লিমিটেড’ সংস্থাটি বাজার থেকে বিপুল অঙ্কের টাকা তুলে নয়ছয় করেছে।
সেই নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের জন্যই রূপলেখাকে আগামী সপ্তাহে কলকাতায় ইডির দফতর সিজিও কমপ্লেক্সে তলব করা হয়েছে বলে ইডি সূত্রে খবর।
বুধবার সকাল থেকেই সংবাদমাধ্যমের শিরোনামে রূপলেখার নাম উঠে আসছে। সাধারণের মনে প্রশ্ন উঠছে, কে এই অভিনেত্রী!
টলিপাড়ায় রূপলেখা খুব পরিচিত নাম নন। অন্তত তেমনটাই দাবি টলিউডের সঙ্গে যুক্ত থাকা একাংশের। যদিও রূপলেখার ফেসবুকের পাতায় তাঁর পরিচয় লেখা অভিনেত্রী এবং পরিচালক হিসাবে।
টলিউডে যে প্রচুর ছবিতে অভিনয় করেছেন রূপলেখা, তা নয়। তবে তাঁর অভিনীত একটি ছবি ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছিল। শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় এবং নন্দিতা রায় পরিচালিত ‘ইচ্ছে’।
‘ইচ্ছে’ মুক্তি পেয়েছিল ২০১১ সালে। অভিনয় করেছিলেন ব্রাত্য বসু, সোহিনী সেনগুপ্ত, সমদর্শী দত্ত, বিদিতা বাগ প্রমুখ। ছবিটি প্রশংসিতও হয়েছিল। প্রেক্ষাগৃহে ১০০ দিনেরও বেশি চলেছিল ছবিটি। সেই ছবিতেই অভিনয় করেছিলেন রূপলেখা। তবে মুখ্যচরিত্রে নয়, নায়ক সমদর্শীর স্কুল জীবনের প্রেমিকা ‘দেবযানী’র চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন তিনি।
২০১৪ সালেও একটি ছবিতে অভিনয় করেছিলেন রূপলেখা। সেই ছবিতে মুখ্য চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন তিনি। ছবির নাম ছিল ‘কলি’। ছবিটির নামভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন রূপলেখা। তাঁর বিপরীতে নায়কের চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন অভিনেতা হীরক দাস। হীরক তার আগে মোহনবাগানের প্রথম আইএফএ শিল্ড জয়ের কাহিনি নিয়ে তৈরি ছবি ‘এগারো’তে ফুটবলার শিবদাস ভাদুড়ির চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন।
‘কলি’ ছবিতে রূপলেখা এবং হীরকের পাশাপাশি অন্যান্য চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন, রাজেশ শর্মা, খরাজ মুখোপাধ্যায়, লকেট চট্টোপাধ্যায়, সুমিত গঙ্গোপাধ্যায়, তুলিকা বসু প্রমুখ।
রূপলেখার ফেসবুকের পাতা অনুযায়ী, তাঁর জন্ম ২২ অগস্ট। যদিও তিনি কোন সালে জন্মেছিলেন, তার কোনও উল্লেখ নেই ফেসবুকে।
অভিনেত্রীর ফেসবুক বলছে, তিনি পড়াশোনা করেছেন বাগবাজার মাল্টিপারপাস স্কুল থেকে। এর পর তিনি স্কটিশ চার্চ কলেজে ভর্তি হন। অভিনেত্রী স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। পড়াশোনা করতে করতেই অভিনয়ের দিকে ঝুঁকেছিলেন রূপলেখা।
সেই অভিনেত্রীকেই আগামী সপ্তাহে তলব করছে ইডি। ইডির তদন্তকারী আধিকারিকদের দাবি, ‘সেভেন সেন্সেস ইনফ্রাস্ট্রাকচার প্রাইভেট লিমিটেড’ নামে যে সংস্থার বিরুদ্ধে কোটি কোটি টাকা প্রতারণার অভিযোগ উঠছে, তৃণমূল সাংসদ তথা অভিনেত্রীর পাশাপাশি তার অন্যতম ডিরেক্টর ছিলেন রূপলেখাও।
‘সেভেন সেন্সেস ইনফ্রাস্ট্রাকচার প্রাইভেট লিমিটেড’-এর বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রকাশ্যে আসে, যখন ইডি অফিসে গিয়ে নুসরত তথা ওই সংস্থার বিরুদ্ধে অভিযোগ জানান একাধিক অবসরপ্রাপ্ত ব্যাঙ্ককর্মী। তাঁদের সঙ্গে ছিলেন বিজেপি নেতা শঙ্কুদেব পণ্ডা।
ওই অবসরপ্রাপ্ত ব্যাঙ্ককর্মীদের দাবি, সমবায়ের মাধ্যমে ফ্ল্যাট পাওয়ার জন্য টাকা জমা দিলেও তাঁরা ফ্ল্যাট পাননি। শঙ্কুদেব ওই অভিযোগকারীদের নিয়ে গড়িয়াহাট থানা এবং সল্টলেক সিজিও কমপ্লেক্সে ইডির দফতরে গিয়ে অভিযোগ দায়ের করেছিলেন। ওই অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত শুরু করেন কলকাতা পুলিশ এবং ইডির গোয়েন্দারা।
এর আগেও তৃণমূল সাংসদ তথা অভিনেত্রীকে ডেকে পাঠিয়েছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। তবে ওই ঘটনার পর পরই কলকাতা প্রেস ক্লাবে একটি সাংবাদিক বৈঠক ডেকে নুসরত জানান, অভিযোগ যখন করা হয়েছে, তার অনেক আগেই তিনি সংশ্লিষ্ট কোম্পানি বা সংস্থা ছেড়ে দিয়েছিলেন।
এ ছাড়াও নুসরত জানান, কয়েক কোটি টাকা তিনি সংশ্লিষ্ট সংস্থা থেকে ঋণ নিয়েছিলেন। সেই ঋণের টাকা তিনি কড়ায়-গণ্ডায় শোধ করে দিয়েছেন। সোমবার ইডির নোটিস নিয়ে অভিনেত্রী-সাংসদকে প্রশ্ন করা হলে তিনি জানান, মেল চেক করেননি। ইডি ডাকলে তিনি অবশ্যই যাবেন। তদন্তে সব রকম সাহায্য করবেন।
তার মধ্যেই বুধবার রূপলেখাকেও ইডি দফতরে তলব বিষয়টি প্রকাশ্যে আসে। বেলঘরিয়ায় রূপলেখার একটি ফ্ল্যাট আছে। সেখান থেকে সংবাদমাধ্যমকে অভিনেত্রী জানিয়েছেন, বর্তমানে তিনি এবং রাকেশ অন্য একটি সংস্থার ডিরেক্টর।
আনন্দবাজার অনলাইনের সঙ্গে কথা বলার সময় রূপলেখা জানিয়েছেন, নুসরতকে তিনি কখনও দেখেননি। তাঁরা যে একই সংস্থায় ছিলেন, এ কথাও তিনি জানতেন না।
আনন্দবাজার অনলাইকে রূপলেখা জানান, ২০১১ সালে ওই সংস্থা তৈরি হয়েছিল। ওই সংস্থা মূলত জমি সংক্রান্ত কাজ করত। তবে পরিষ্কার করে তিনিও জানেন না যে, সংস্থা ঠিক কী কী বিষয়ে কাজ করত
নুসরত জাহানের সঙ্গে তাঁর কী কথা হয়েছে? তিনি কী বলেছেন? প্রশ্নের উত্তরে রূপলেখা বলেন, ‘‘সংস্থায় কে কে ছিল, তা আমি জানি না। নুসরতকে এক দিনও দেখিনি।’’