নাইজিরিয়ার বোকো হারাম বা ইয়েমেনের হুথি জঙ্গিদের মতোই আফ্রিকায় নাশকতার ঘটনায় বার বার উঠে এসেছে হরকত আল শাবাব আল মুজাহিদিনের নাম। সংক্ষেপে যা আল শাবাব নামে পরিচিত।
২০০৬ সালে সোমালিয়ায় গড়ে ওঠা এই জঙ্গি সংগঠন আদতে আল কায়দার সহযোগী। কেনিয়া, উগান্ডা এবং জিবুতির মতো পূর্ব আফ্রিকার একাধিক দেশে সক্রিয় এই গোষ্ঠী।
সোমালিয়ার ‘ইউনিয়ন অব ইসলামিক কোর্টস’ ভেঙে তৈরি হওয়া আল শাবাব নামের অর্থ ‘তারুণ্য’। আমেরিকার গোয়েন্দা রিপোর্টে দাবি, প্রায় আট-ন’হাজার জঙ্গি রয়েছে এই কট্টরপন্থী সংগঠনে।
সোমালিয়ার রাজধানী মোগাদিসুর পাশাপাশি গত দেড় দশকে কেনিয়ার রাজধানী নাইরোবি এবং উগান্ডার রাজধানী কাম্পালাতেও হামলার নজির রেখেছে আল শাবাব।
২০০৮ সালে আমেরিকা নিষিদ্ধ ঘোষণা করে আল শাবাবকে। সংগঠনের প্রধান, সোমালি জঙ্গিনেতা আহমেদ উমর ২০১৫ সাল থেকে রয়েছেন ওয়াশিংটনের জঙ্গি তালিকায়।
২০১০ সালে দক্ষিণ আফ্রিকায় বিশ্বকাপ চলাকালীন কাম্পালায় আত্মঘাতী হামলা চালিয়ে আন্তর্জাতিক নজরে এসেছিল এই সংগঠন। আমেরিকার এক নাগরিক-সহ ওই ঘটনায় ৭৬ জন নিহত হন।
২০১৩-র সেপ্টেম্বরে নাইরোবির একটি শপিং মলে ২৬/১১ মুম্বই সন্ত্রাসের ধাঁচে হামলা চালিয়েছিল আল শাবাব। টানা তিন দিনের সংঘর্ষে জঙ্গি, সেনা, সাধারণ নাগরিক-সহ মোট ৭১ জন নিহত হয়েছিলেন।
২০১৫-র এপ্রিলে কেনিয়ার গারিসা বিশ্ববিদ্যালয় কলেজে হামলা চালিয়ে ১৪৮ জন পড়ুয়াকে খুন করেছিল আল শাবাব। মূল নিশানা ছিলেন খ্রিস্টান ছাত্রছাত্রীরা।
আল শাবাব ফিদায়েঁদের সবচেয়ে বড় হামলা ২০১৭-র এপ্রিলে, মোগাদিসুতে। সে বারও সোমালিয়ার রাজধানীর একটি হোটেল ছিল নিশানা। ট্রাকবোমার বিস্ফোরণের বলি হয়েছিলেন ২৩৭ জন।
আল শাবারের সন্ত্রাস থেকে মুক্তি পায়নি বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী রাষ্ট্রও। ২০২০-র জানুয়ারি মাসে কেনিয়ার লামু কাউন্টিতে আমেরিকার সেনাঘাঁটিতে ফিদায়েঁ হামলা চালিয়েছিল তারা।
এর এক বছর আগে ২০১৫-র জানুয়ারিতে নাইরোবির একটি বাণিজ্যিক ভবনে হামলা চালায় আল শাবারের পাঁচ আত্মঘাতী জঙ্গি। ওই ঘটনার ২২ জনের মৃত্যু হয়েছিল।
২০১৯ সালের জুলাই এবং ডিসেম্বরে মোগাদিসুর ঘন বসতিপূর্ণ এলাকায় ফের গাড়িবোমা বিস্ফোরণ ঘটিয়েছিল আল কায়দার সহযোগী ওই সংগঠন। দু’টি নাশকতায় শতাধিক মানুষের মৃত্যু হয়েছিল।
আল শাবারের মোকাবিলায় কয়েক বছর আগে ‘বালাকোট কৌশল’ নিয়েছিল কেনিয়া। সোমালিয়ার আকাশসীমায় ঢুকে বিমানহানা চালিয়ে জঙ্গি সংগঠনটির কয়েকটি ঘাঁটি ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছিল।
কিন্তু আল শাবারের রমরমা কমেনি। এই মুহূর্তে দক্ষিণ সোমালিয়ার বিস্তীর্ণ অংশে সমান্তরাল সরকার চালাচ্ছে তারা। সেখানে জঙ্গল ও পাহাড়ঘেরা এলাকায় রয়েছে একাধিক প্রশিক্ষণ শিবির।
নিয়ন্ত্রিত এলাকা থেকে ‘রংরুট’ জিহাদি সংগ্রহের পাশাপাশি পরবর্তী প্রজন্মের যোদ্ধা সরবরাহের বন্দোবস্তও থাকে। আর সে জন্য জোর করে মেয়েদের তুলে এনে বানানো হয় যৌনদাসী।
জঙ্গিনেতাদের যৌন চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি ওই যৌনদাসীদের কাজ ভবিষ্যতের জঙ্গি হিসেবে ব্যবহারের জন্য শিশুদের জন্ম দেওয়া। বস্তুত, পরবর্তী যোদ্ধা তৈরির উদ্দেশ্যে এটি আল শাবাবের সংগঠিত কর্মসূচির অংশ।