রাত পোহালেই জি২০ সম্মেলন। আগামী শনি এবং রবিবার নয়াদিল্লির প্রগতি ময়দানের ভারত মণ্ডপম কনভেনশন সেন্টারে বসবে জি২০ শীর্ষ সম্মেলনের আসর। যার জেরে চরম ব্যস্ত রাজধানী দিল্লি। জি২০ শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিতে আসছেন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। আসছেন ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনক, ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাকরঁ-সহ অন্য দেশের রাষ্ট্রনেতারাও। রাষ্ট্রনেতাদের সুরক্ষার কথা ভেবে তাই কড়া নিরাপত্তা বলয়ে মুড়ে ফেলা হয়েছে রাজধানীকে। ঢেলে সাজানো হয়েছে প্রগতি ময়দান চত্বর।
সরকারি অতিথিদের জন্য কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা করেছে কেন্দ্র। দিল্লির আনাচকানাচে ঘুরে বেড়াচ্ছেন ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থার আধিকারিকেরা। বিভিন্ন জায়গায় বন্দুক তাক করে রয়েছেন স্নাইপাররা। হেলিকপ্টার থেকে দিল্লির বিভিন্ন অলিগলিতে নজর রাখছেন সেনাবাহিনী এবং ন্যাশনাল সিকিউরিটি গার্ড (এনএসজি)-এর কমান্ডোরা।
জি২০ সম্মেলনে যোগ দেওয়া রাষ্ট্রনেতা এবং বিদেশি প্রতিনিধিদের থাকার জন্য যে বিলাসবহুল হোটেলগুলির ব্যবস্থা করা হয়েছে, সেগুলি চারদিকে কড়া নজর রেখেছেন ভারতীয় গোয়েন্দারা।
রাষ্ট্রনেতা এবং বিদেশি প্রতিনিধিদের থাকার জন্য দিল্লি ও গুরুগ্রামের বিভিন্ন হোটেলে প্রায় সাড়ে তিন হাজার কামরা ভাড়া নেওয়া হয়েছে। তবে দিল্লির হোটেলগুলিতে মূলত থাকবেন রাষ্ট্রপ্রধানরা।
জি২০ দেশগুলির পাশাপাশি অন্য বেশ কয়েকটি দেশের রাষ্ট্রনেতাদেরও অতিথি হিসাবে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে দিল্লিতে। এর মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশ, মিশর, মরিশাস, নেদারল্যান্ডস, নাইজেরিয়া, ওমান, সিঙ্গাপুর, স্পেন এবং সংযুক্ত আরব আমিরশাহি। সেই দেশগুলির রাষ্ট্রনেতাদেরও থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে বিলাসবহুল হোটেলগুলিতে।
এক নজরে দেখে নেওয়া যাক, কোন বিলাসবহুল হোটেলে থাকবেন কোন দেশের রাষ্ট্রনেতা।
সংবাদমাধ্যম ‘নিউজ় ১৮’-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, আমেরিকার প্রসিডেন্ট বাইডেনের আপ্যায়নের ব্যবস্থা থাকছে আইটিসি মৌর্য শেরাটনে। ইডেন এবং তাঁর প্রতিনিধি দলের জন্য হোটেলের প্রায় ৪০০টি ঘর ভাড়া নেওয়া হয়েছে। বাইডেন থাকবেন ১৪ তলায়। ১৪ তলা থেকে নীচে আসার জন্য বিশেষ লিফ্টের ব্যবস্থা করা হয়েছে। যেখানে তিনি থাকবেন, সেখানে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হবে কেবল বিশেষ কয়েক জনকে। হোটেলের প্রতিটি তলায় বিশেষ কমান্ডোরা পাহারায় থাকবেন।
দিল্লির তাজ প্যালেস ভাড়া নেওয়া হয়েছিল চিনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের জন্য। তবে চিনের বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র নিশ্চিত করেছেন যে, জিনপিং শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিতে দিল্লি আসছেন না। পরিবর্তে চিনের প্রতিনিধি হিসাবে সম্মেলনে যোগ দেবেন প্রধানমন্ত্রী লি কিয়াং। তাই জিনপিংয়ের পরিবর্তে কিয়াং সেই বিলাসবহুল হোটেলে থাকবেন বলে সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
ব্রাজিলের প্রতিনিধি দলেরও প্রসাদোপম তাজ প্যালেসে থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।
দিল্লির কনট প্লেসের শাংরি-লা হোটেলে থাকতে পারেন ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী সুনক। জার্মানির চ্যান্সেলর ওলাফ স্কোলজ-সহ সে দেশের বাকি প্রতিনিধি দলেরও নাকি থাকার কথা ওই হোটেলেই।
প্রতিনিধি দলের সঙ্গে ফরাসি প্রেসিডেন্ট মাকরঁর থাকার কথা বিলাসবহুল ক্লারিজেস হোটেলে।
সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ইম্পেরিয়াল হোটেলে থাকতে পারেন অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্টনি আলবেনিজ।
ওবেরয় হোটেলে থাকার সম্ভাবনা রয়েছে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোগান-সহ সে দেশের অন্য প্রতিনিধিদের।
জি২০ রাষ্ট্রগোষ্ঠীর শীর্ষ সম্মেলনে পুতিন যোগ দিতে আসবেন না বলে আগেই জানিয়েছিল ক্রেমলিন। ২৮ অগস্ট প্রধানমন্ত্রী মোদীকে ফোনে আনুষ্ঠানিক ভাবে সে কথা জানান রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। প্রধানমন্ত্রীর দফতরের তরফে প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, মোদীকে পুতিন জানিয়েছেন তাঁর পরিবর্তে রাশিয়ার বিদেশমন্ত্রী সের্গেই লাভারভ জি২০ শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দেবেন। মনে করা হচ্ছে রাশিয়ার প্রতিনিধি দলের সঙ্গে লাভারভও ওবেরয় হোটেলে থাকবেন।
ইটালির দু’টি প্রতিনিধি দলের আপ্যায়নের দায়িত্ব জেডব্লিউ ম্যারিয়ট এবং হায়াত রিজেন্সিকে দেওয়া হয়েছে।
দিল্লির জনপথে থাকা লা মেরিডিয়ান হোটেলে থাকার কথা রয়েছে নেদারল্যান্ডস, নাইজেরিয়া এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধিদের।
কানাডা এবং জাপানের প্রতিনিধিদের থাকার কথা ললিত হোটেলে।
সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, গুরুগ্রামের ওবেরয় হোটেলে দক্ষিণ কোরিয়ার প্রতিনিধি দলের থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
গুরুগ্রামের বিলাসবহুল লীলা হোটেলে থাকতে পারে সৌদি আরবের প্রতিনিধি দল।
বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিলাসবহুল হোটেলগুলিতে বিদেশি অতিথিদের জন্য বিশেষ খানাপিনার ব্যবস্থা করা হয়েছে। কার কোন ধরনের খাবার পছন্দ, তা মাথায় রেখেই তৈরি করা হবে বিভিন্ন পদ।
বিদেশি রাষ্ট্রপ্রধানরা ব্যক্তিগত জেটে নয়াদিল্লি আসছেন। রাষ্ট্রনেতাদের আগমনের কথা মাথায় রেখে দিল্লির ইন্দিরা গান্ধী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের আকাশ যানজটমুক্ত রাখতে সপ্তাহান্তে বেশ কয়েকটি বিমান বাতিল করা হয়েছে।
বিলাসবহুল হোটেল ছাড়াও রাষ্ট্রপ্রধান এবং প্রতিনিধি দলের জন্য বিলাসবহুল গাড়ির ব্যবস্থা করেছে কেন্দ্র।
সংবাদমাধ্যম ‘ইন্ডিয়া টুডে’-র একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জি২০ শীর্ষ সম্মেলনের আবহে দিল্লিতে মার্সিডিজ মেবাক, বিএমডব্লিউ এবং অডির মতো বিলাসবহুল গাড়িগুলির চাহিদা তুঙ্গে। সেই গাড়িগুলির প্রতি দিনের ভাড়া লাখ টাকার গণ্ডি পেরোতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।
তবে বাইডেনের নিরাপত্তার জন্য আমেরিকা থেকে আনা হচ্ছে প্রেসিডেন্টের সরকারি গাড়ি ‘দ্য বিস্ট’। এর পাশাপাশি চিনও নিজেদের প্রতিনিধি দলের গাড়ি আনতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। তুরস্ক, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং ফ্রান্সের প্রতিনিধি দলও নিজেদের নিজস্ব গাড়ি নেওয়ার পরিকল্পনা করেছে।