Aircraft Carrier

রোমান অস্ত্রে শঠে শাঠ্যং! ড্রাগনের চোখে চোখ রাখতে ‘গ্যারিবল্ডি’কে দলে টানছে জাকার্তা

ইটালীয় বিমানবাহী যুদ্ধপোত ‘আইটিএস জিউসেপ্পে গ্যারিবল্ডি’কে অধিগ্রহণের চেষ্টা চালাচ্ছে ইন্দোনেশিয়া। এই উপায়ে কি মালাক্কা প্রণালীতে চিনা রণতরীর ঢোকা বন্ধ করতে চাইছে জাকার্তা?

Advertisement
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ১৬ মার্চ ২০২৫ ১৫:৫৩
Share:
০১ ১৮

ইন্দো-প্রশান্ত মহাসাগরীয় এলাকায় চিনের দাদাগিরির বিরুদ্ধে ধীরে ধীরে মাথা তুলছে ইন্দোনেশিয়া। ড্রাগন নৌসেনার চোখ রাঙানি উড়িয়ে বিমানবাহী রণতরী নামানোর পরিকল্পনা রয়েছে তাদের। চলতি বছরের মাঝামাঝি ইন্দোনেশিয়ার যুদ্ধপোত সাগর কাঁপালে, বেজিঙের যে রক্তচাপ বাড়বে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। এতে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার শক্তির ভরকেন্দ্রে টোল পড়ার আশঙ্কাও করছেন প্রতিরক্ষা বিশ্লেষকেরা।

০২ ১৮

ইটালীয় লড়াকু জেটের যুদ্ধপোত ‘আইটিএস জিউসেপ্পে গ্যারিবল্ডি’। শত্রুর বুকে কাঁপুনি ধরানো এই রণতরীটির নাম জানেন না, এমন নৌকমান্ডার পাওয়া দুর্লভ। রোমের অত্যাধুনিক যুদ্ধপোতটিই এ বার অধিগ্রহণ করতে চলেছে দুনিয়ার বৃহত্তম মুসলিম জনসংখ্যার দেশ ইন্দোনেশিয়া। জাকার্তা ফৌজ়ের এই সিদ্ধান্ত ইন্দো-প্রশান্ত মহাসাগরীয় এলাকায় ‘মাস্টারস্ট্রোক’ বলেই মনে করা হচ্ছে।

Advertisement
০৩ ১৮

১৯৮৫ সাল থেকে ইটালীয় নৌবাহিনীর হয়ে কাজ করছে ‘আইটিএস জিউসেপ্পে গ্যারিবল্ডি’। এর মধ্যে গত বছরের অক্টোবরে হেলিকপ্টার ল্যান্ডিং ডক ‘ট্রিয়েস্তে’কে হাতে পেয়েছে রোম। একাধিক কাজে সংশ্লিষ্ট ডকটিকে ব্যবহারের সুবিধা হয়েছে। আর তাই ‘ট্রিয়েস্তে’র উদ্বোধনের পর থেকেই বিমানবাহী রণতরীটিকে রিজ়ার্ভে রাখার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন ইটালীয় নৌসেনার কর্তা-ব্যক্তিরা।

০৪ ১৮

এই খবর কানে যেতেই তৎপর হয় ইন্দোনেশিয়া প্রশাসন। ইটালির জর্জিয়া মেলোনি সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করে তারা। লড়াকু জেটের রণতরীটিকে কিনে নেওয়ার প্রস্তাব ইতিমধ্যেই রোমের সামনে রেখেছে জাকার্তা। সূত্রের খবর, গত কয়েক মাসে এ ব্যাপারে দুই দেশের নৌসেনা পর্যায়ে কথাবার্তা অনেক দূর এগিয়েছে। যদিও বিমানবাহী যুদ্ধপোত বিক্রির বিষয়টি চূড়ান্ত হয়নি। ফলে সরকারি ভাবে বিষয়টি নিয়ে মুখ খোলেনি কোনও পক্ষই।

০৫ ১৮

ইটালীয় নৌবাহিনী সূত্রে খবর, ‘গ্যারিবল্ডি’কে নিয়ে প্রতিরক্ষা চুক্তি করার আগে রণতরীটির নকশায় বেশ কিছু পরিবর্তন করতে চাইছে জাকার্তা। এই যুদ্ধজাহাজে লড়াকু জেটের উল্লম্ব ভাবে অবতরণের (ভার্টিকাল ল্যান্ডিং) কোনও সুনির্দিষ্ট জায়গা নেই। রণতরীটি কেনার আগে এই বিষয়টি নিশ্চিত করতে চাইছে ইন্দোনেশিয়া। পাশাপাশি, ‘গ্যারিবল্ডি’র যুদ্ধবিমানের বহরেও কিছু পরিবর্তন আনার কথা বলেছে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার এই দেশ।

০৬ ১৮

প্রতিরক্ষা বিশ্লেষকদের দাবি, ইটালীয় রণতরীটিকে দু’ভাবে ব্যবহার করতে চাইছেন ইন্দোনেশিয়ার নৌকমান্ডারেরা। প্রথমত, চিনের সামুদ্রিক আগ্রাসনের সামনে প্রতিরোধ গড়ে তোলা। দ্বিতীয়ত, ‘নন কমব্যাট মিলিটারি অপারেশন’-এ এর বহুল ব্যবহার। এর মধ্যে থাকবে মানবিক সহায়তা প্রদান এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময়ে দুর্গমতম এলাকায় ত্রাণ বিলি।

০৭ ১৮

বর্তমানে ন্যূনতম অপরিহার্য বাহিনীর (মিনিমাম এসেনশিয়াল ফোর্স বা এমইএফ) আধুনিকীকরণে জোর দিয়েছে ইন্দোনেশিয়া। তার জন্য অন্তত চারটি হেলিকপ্টার বহনকারী জাহাজ, চারটি ফ্রিগেট এবং বেশ কয়েকটি ক্ষেপণাস্ত্র সজ্জিত রণতরীর প্রয়োজন রয়েছে জাকার্তার। এর জন্য বিপুল খরচের ধাক্কা সামলাতেও রাজি প্রবোও সুবিয়ান্তের সরকার।

০৮ ১৮

রোমের থেকে ‘জিউসেপ্পে গ্যারিবল্ডি’কে অধিগ্রহণ করলে সেটি হবে ইন্দোনেশিয়ার নৌবাহিনীর বৃহত্তম রণতরী। গত কয়েক বছর ধরে নৌসেনার শক্তি বৃদ্ধি করতে যুদ্ধজাহাজের বহর বাড়িয়ে চলেছে জাকার্তা। এর জন্য বিদেশ থেকে লিজ়ে নেওয়া রণতরীও ব্যবহার করছে তারা। আরও অন্তত দুই থেকে তিন বছর নৌবাহিনীর আধুনিকীকরণের কাজ চলবে বলে জানা গিয়েছে।

০৯ ১৮

গত বছরের মার্চ মাসে দু’টি বহুমুখী অফশোর টহলদারি জাহাজ তৈরির জন্য ইটালীয় সংস্থা ‘ফিনকান্তিয়েরি’কে বরাত দেয় ইন্দোনেশিয়া। এর জন্য সংশ্লিষ্ট সংস্থা এবং জাকার্তার প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের মধ্যে ১২০ কোটি ডলারের একটি চুক্তি হয়েছে। সমুদ্রে নজরদারি বাড়াতে অফশোর জলযানগুলি ব্যবহার করবে ইন্দোনেশীয় নৌসেনা।

১০ ১৮

এ ছাড়া নৌবাহিনীর শক্তি বৃদ্ধি করতে তুরস্কের থেকে কেসিআর শ্রেণির কয়েকটি ক্ষেপণাস্ত্রবাহী জাহাজ কিনেছে জাকার্তা। জাপানের থেকে অনুদান হিসাবে পেয়েছে দু’টি টহলদারি জাহাজ। ইন্দোনেশীয় নৌসেনার হাতে আছে সম্পূর্ণ দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি দু’টি অফসোর ভেসেল। এ ছাড়া আরও দু’টি ফ্রিগেট নির্মাণের কাজ চালাচ্ছে তারা।

১১ ১৮

এই আবহে ইটালীয় বিমানবাহী রণতরীটি অধিগ্রহণের যে চেষ্টা জাকার্তা করছে, তাকে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ বলেছেন প্রতিরক্ষা বিশ্লেষকেরা। প্রায় ৮০০ ফুট লম্বা এই যুদ্ধজাহাজটিতে লড়াকু জেটের পাশাপাশি রয়েছে বিভিন্ন ধরনের কপ্টারও। জাহাজটিতে মোতায়েন যুদ্ধবিমানের মধ্যে বোয়িঙের তৈরি এক ইঞ্জিনের ‘এভি-৮ হ্যারিয়ার টু’ উল্লেখযোগ্য়। রণতরীটির ফ্লাইট ডেক ১৭৪ মিটার দীর্ঘ এবং ৩০.৫ মিটার চওড়া, যার সামনের অংশে স্কি-জাম্পের জন্য সামান্য উঁচু একটি জায়গা রাখা হয়েছে।

১২ ১৮

১৮টি হেলিকপ্টার নিয়ে সমুদ্রে ভাসার ক্ষমতা রয়েছে ‘জিউসেপ্পে গ্যারিবল্ডি’র। আবার রণতরীটিতে ১৬টি যুদ্ধবিমান রাখা যেতে পারে। ইটালীয় নৌবাহিনী অবশ্য অপারেশনের প্রয়োজনীয়তা অনুসারে এতে একসঙ্গে কপ্টার এবং লড়াকু জেট দু’টিই ব্যবহার করত। কপ্টারের ক্ষেত্রে তারা মূলত সিকোরস্কি এসএইচ-থ্রিডি সি কিং এবং অগুস্তা বেল এবি২১২ ব্যবহার করত। এর মধ্যে আমেরিকার তৈরি প্রথম কপ্টারটির ডুবোজাহাজ ধ্বংসকারী হিসাবে বেশ পরিচিতি রয়েছে।

১৩ ১৮

পরবর্তী কালে এই বিমানবাহী রণতরীটিতে ইএইচ১০১ নামের কপ্টারও ব্যবহার করা শুরু করে রোম। যুদ্ধজাহাজটিতে ৮১ হাজার হর্সপাওয়ারের ইঞ্জিন লাগানো রয়েছে। ফলে এটির সর্বোচ্চ ঘণ্টায় ৩০ নটিক্যাল মাইল বেগে ছোটার ক্ষমতা রয়েছে। ভূমধ্যসাগর বা আটলান্টিকের বুকে সাত হাজার নটিক্যাল মাইল এলাকা জুড়ে দাপিয়ে বেড়ানোর রেকর্ড রয়েছে ‘জিউসেপ্পে গ্যারিবল্ডি’র।

১৪ ১৮

বিমানবাহী রণতরীটিকে নিয়ে একাধিক অপারেশেনে যোগ দিয়েছে ইটালীয় নৌসেনা। তার মধ্যে সোমালিয়ার রিস্টোর হোপ, যুগোস্লাভিয়ায় ডিনাক এবং আফগানিস্তানে এন্ডুরিং ফ্রিডম উল্লেখ্যযোগ্য। এ ছাড়াও লেবাননে অপারেশন মিমোসা এবং অপারেশন লিওন্টে, লিবিয়ায় অপারেশন ওডিসি ডন এবং অপারেশন ইউনিফায়েড প্রোটেক্টরে যোগ দেয় ‘জিউসেপ্পে গ্যারিবল্ডি’।

১৫ ১৮

২০১৫ সালে মানবপাচার বন্ধ করতে ভূমধ্যসাগরে অপারেশন সোফিয়া শুরু করে ইউরোপীয় ইউনিয়ান (ইইউ)। ওই সময়ে এতে সক্রিয় ভাবে যোগ দিয়েছিল ইটালীয় যুদ্ধপোতটি। ২০২০ সালের ৩১ মার্চ পর্যন্ত চলা ওই অপারেশনে ইউরোপে মানবপাচারের নেটওয়ার্ক ভাঙতে সক্ষম হয় ‘জিউসেপ্পে গ্যারিবল্ডি’। ভূমধ্যসাগরে এর উপস্থিতি নৌকাডুবিতে মর্মান্তিক জীবনহানি বহু গুণে কমিয়ে দিয়েছিল।

১৬ ১৮

২০২৩ সালে বেশ ধুমধাম করেই সংশ্লিষ্ট রণতরীর ৪০তম বার্ষিকী পালন করে ইটালীয় নৌসেনা। গত বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে রোমের নৌসেনা প্রধান অ্যাডমিরাল এনরিকো ক্রেডেন্ডিনো বলেন, ‘‘বয়সজনিত কারণে বিমানবাহী রণতরীটির নিরস্ত্রীকরণ প্রক্রিয়া শুরু করা হবে।’’ তবে এখনও এটিকে হেলিকপ্টার বহনকারী যুদ্ধপোত হিসাবে ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে বলে স্পষ্ট করে দিয়েছেন তিনি।

১৭ ১৮

ইটালীয় যুদ্ধপোতের পাশাপাশি ভারতের থেকে ‘ব্রহ্মস’ সুপারসনিক ক্রুজ় ক্ষেপণাস্ত্র কেনার ব্যাপারে আগ্রহ দেখিয়েছে জাকার্তা। এ বছরের সাধারণতন্ত্র দিবসে প্রধান অতিথি হিসাবে দিল্লি আসেন ইন্দোনেশীয় প্রধানমন্ত্রী প্রবিও সুবিয়ান্তো। সূত্রের খবর, তখনই এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে একপ্রস্ত আলোচনা সারেন তিনি। তবে ‘ব্রহ্মস’ নিয়েও চূড়ান্ত প্রতিরক্ষাচুক্তি হয়নি।

১৮ ১৮

ইন্দোনেশিয়ার একেবারে গা ঘেঁষে রয়েছে মালাক্কা প্রণালী। এটি আন্দামান সাগরকে দক্ষিণ চিন সাগরের সঙ্গে যুক্ত করেছে। ফলে অবস্থানগত দিক থেকে ইন্দোনেশিয়ার আলাদা গুরুত্ব রয়েছে। যুদ্ধের সময়ে মালাক্কা প্রণালী বন্ধ হলে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য চালানো চিনের পক্ষে বেশ কঠিন হবে। আর সেই কারণেই সারা বছরই জাকার্তার উপর প্রভাব বৃদ্ধির মরিয়া চেষ্টা থাকে বেজিঙের। ইটালীয় রণতরী বা ভারতের ‘ব্রহ্মস’ সেখানে দেওয়াল হয়ে দাঁড়াবে বলে মনে করা হচ্ছে।

সব ছবি: সংগৃহীত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on:
আরও গ্যালারি
Advertisement