Indus script

হাজার হাজার বছরের ইতিহাস ধরা বোবা লিপিতে! প্রাচীন লিপির ধাঁধা সমাধানে মিলবে ৯ কোটির পুরস্কার

খননের পরে সিন্ধুপারের মাটি থেকে উদ্ধার হয়েছে হাজার হাজার বছরের প্রাচীন মূর্তি, শিলা, দেওয়ালচিত্র। শতবর্ষ পার করার পরও সব কিছুর উপর থেকে রহস্যের পর্দা সরানো সম্ভব হয়নি ইতিহাসবিদ ও গবেষকদের পক্ষে।

Advertisement
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ১৬ মার্চ ২০২৫ ১২:৩৫
Share:
০১ ২০

সিন্ধু সভ্যতা যেন সভ্যতার ইতিহাসে এক বিস্ময়। ভারতের অতীত সভ্যতা, সংস্কৃতির কিছুটা আভাস পাওয়া যায় ১০০ বছর আগে আবিষ্কার হওয়া এই সভ্যতা থেকে। সিন্ধুর এক বিস্তীর্ণ অঞ্চল জুড়ে ছিল বহু জনপদ। ১০ লক্ষ মানুষের বসতি ছিল সেখানে।

০২ ২০

ব্রোঞ্জ যুগের ভরভরন্ত এক সভ্যতা কী ভাবে ধ্বংস হয়ে গেল, তা আজও এক রহস্য। সাড়ে চার হাজার বছরের পুরনো এক মৃত সভ্যতার পরতে পরতে লুকিয়ে রহস্য ও প্রায় অধরা ইতিহাস।

Advertisement
০৩ ২০

সিন্ধু সভ্যতার আবিষ্কারের এক শতক অতিক্রান্ত হয়েছে। কিন্তু একে ঘিরে অজানা অধ্যায়ের শেষ নেই। সিন্ধু উপত্যকার কত গল্পও থেকে গিয়েছে অধরা। বর্তমান ভারত ও পাকিস্তানের উত্তর-পশ্চিম অংশে গড়ে উঠেছিল সিন্ধুর নগরগুলি। পরিশীলিত প্রাচীন সভ্যতাটি বিশ্বের প্রথম নগর সভ্যতাগুলির একটি বলে জানিয়েছেন গবেষকরা। সিন্ধু রহস্যের পরতে পরতে জড়িয়ে রয়েছে জটিল জট।

০৪ ২০

খননের পরে সিন্ধুপারের মাটি থেকে উদ্ধার হয়েছে হাজার হাজার বছরের প্রাচীন মূর্তি, শিলা, দেওয়ালচিত্র। শতবর্ষ পার করার পরও সব কিছুর উপর থেকে রহস্যের পর্দা সরানো সম্ভব হয়নি ইতিহাসবিদ ও গবেষকদের পক্ষে। নানা মতামত, তর্কবিতর্কের পরেও অব্যক্ত রয়ে গিয়েছে সিন্ধু সভ্যতার কাহিনি।

০৫ ২০

সিন্ধু সভ্যতার প্রধানতম ধাঁধা অবশ্য এর অজানা লিপি। এই লিপির নমুনা ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে ৩৭০০টি শিল আর ৪০০র বেশি অন্যান্য বস্তুতে। দশকের পর দশক ধরে তা পড়ার চেষ্টা চালিয়েছেন পণ্ডিত, গবেষক, বিশেষজ্ঞেরা। কিছু কিছু অদ্ভুত চিত্রের মাঝে লুকিয়ে আছে এক অমীমাংসিত রহস্য।

০৬ ২০

এই সভ্যতার ধ্বংসাবশেষ থেকে উদ্ধার হওয়া লিপিগুলির পাঠোদ্ধার সম্ভব হয়নি আজ পর্যন্ত। ফলত এই প্রাচীন নগরসভ্যতার বিলুপ্তির কারণ এবং আরও এমন নানা তথ্য অজানাই থেকে গিয়েছে। সিন্ধুর লিপি একটি স্থায়ী রহস্য হিসাবে রয়ে গিয়েছে। সেই রহস্যের দোসর হয়েছে উত্তপ্ত বিতর্ক। এর সঙ্গে জড়িয়েছে গবেষকদের মৃত্যুর হুমকির অভিযোগও। এই লিপির পাঠোদ্ধার করতে গিয়ে অনেক গবেষক প্রাণনাশের হুমকিও পেয়েছেন।

০৭ ২০

যিনি সিন্ধুলিপি পড়তে পারবেন, তাঁর জন্য ঘোষণা করা হয়েছে নগদ পুরস্কার। সম্প্রতি তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী এমকে স্ট্যালিন লিপি উদ্ধারে নগদ অর্থ প্রদানের ঘোষণা করেছেন। সেই পুরস্কারের পরিমাণ নেহাত কম নয়। ২০০৪ সালে ইতিহাসবিদ স্টিভ ফার্মারের মাধ্যমে আর এক অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিও পুরস্কারের কথা ঘোষণা করেছিলেন।

০৮ ২০

একটি সম্মেলনে স্ট্যালিন ঘোষণা করেন, সিন্ধু সভ্যতার লিপি পাঠোদ্ধার করতে পারলে ১০ লক্ষ ডলার পুরস্কার মিলবে। সুপ্রাচীন লিপিগুলির ধাঁধা সমাধানের গবেষণাকে উৎসাহিত করার জন্যই ১০ লক্ষ ডলার বা ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় ৯ কোটি টাকা পুরস্কারের কথা ঘোষণা করেন তিনি।

০৯ ২০

সিন্ধু সভ্যতা সম্পর্কে আমরা যা জানি তা প্রাচীন মিশর, মেসোপটেমিয়া এবং মায়ার মতো সমসাময়িকদের সম্পর্কে পাওয়া তথ্যের ভান্ডারের তুলনায় সীমিত। এর মূল কারণ হল অব্যক্ত লিপি, যা মূলত মাটির ফলক এবং পাথরের শিলের মতো নিদর্শনগুলিতে পাওয়া গিয়েছে। সিন্ধুলিপির পাঠোদ্ধার স্পষ্টতই সহজ হত যদি কোনও দ্বিভাষিক কিংবা বহুভাষিক প্রত্ন-নিদর্শন পাওয়া যেত।

১০ ২০

লিপি বিশ্লেষণ বিশেষজ্ঞদের মতে, সিন্ধু সভ্যতার লিপিগুলো চিহ্ন ও প্রতীকের একটি সংমিশ্রণ। বিশেষজ্ঞেরাও ভিন্ন ভিন্ন মত পোষণ করেন এর উৎপত্তি নিয়ে। সিন্ধুলিপি কি সংস্কৃত কিংবা দ্রাবিড়ীয় কোনও লিপির পূর্বসূরি? না কি এ এমন কোনও লিপি যার উত্তরাধিকার ওই সমাধিতে চাপা পড়ে হারিয়ে গিয়েছে চিরতরে।

১১ ২০

গবেষকেরা মনে করেন, বিশ্লেষণ করার মতো এত বেশি নিদর্শন নেই সিন্ধু লিপিতে। প্রত্নতাত্ত্বিকেরা মাত্র চার হাজার শিলালিপি খুঁজে পেয়েছেন। সেখানে প্রাচীন মিশরীয় ভাষায় আনুমানিক ৫০ লক্ষ শব্দ পাওয়া যায়। এর মধ্যে হায়রোগ্লিফিক এবং অন্যান্য লিপির রূপও রয়েছে।

১২ ২০

নিদর্শনগুলি খুবই ছোট, প্রায়শই এক বর্গ ইঞ্চি আকারের পাথরের শিলের উপর খোদাই করা। লিপিগুলি ছোট। বেশির ভাগ শিলে মাত্র চার বা পাঁচটি প্রতীক থাকে। যেমন ছাদের নীচে একটা মাছ। মাথা ছাড়া মূর্তি। বাগানের বেড়ার মতো দেখতে একগুচ্ছ রেখা। এগুলি থেকে অর্থ বার করে পাঠোদ্ধার করা সম্ভব হয়নি আজও।

১৩ ২০

সিন্ধু সভ্যতার আর এক জটিল রহস্য তার ইউনিকর্ন বা একশৃঙ্গ অশ্ব। সিন্ধু সভ্যতার ধ্বংসস্তূপ থেকে উদ্ধার হওয়া প্রধানত চৌকো শিলগুলোতে খোদাই করা রয়েছে অনেক জন্তু-জানোয়ারের মূর্তি। আশ্চর্যের এই যে, অন্য সকল জন্তুই বাস্তবের হলেও সেখানে রয়েছে এক কাল্পনিক জীব, ইউনিকর্ন। হরপ্পা এবং মহেঞ্জোদারোয় মোট পাওয়া শিলের প্রায় তিন-চতুর্থাংশেই রয়েছে এই ইউনিকর্ন।

১৪ ২০

১৭৯৯ সালে নীল নদের উপত্যকার রাশিদ বা রোসেটা শহরে ‘রোসেটা স্টোন’ আবিষ্কার হওয়ার পর জটিল দুর্বোধ্য হায়রোগ্লিফ্‌সও করায়ত্ত হয়েছে লিপি বিশারদদের। রোসেটা স্টোনে খ্রিস্টপূর্ব তৃতীয় এবং দ্বিতীয় শতকের রাজা পঞ্চম টলেমির ডিক্রি খোদাই করা আছে তিনটি ভাষায়, মিশরীয় হায়রোগ্লিফ্‌স, প্রাচীন গ্রিক, আর মিশরীয় ডেমোটিক। এর মধ্যে প্রাচীন গ্রিক পড়তে পারেন গবেষকেরা। তাই পড়া সম্ভব হয়েছে হায়রোগ্লিফ্‌স।

১৫ ২০

সমস্ত প্রাচীন ভাষার বন্ধ দরজা খোলার জন্য অবশ্য এমন বহুভাষিক প্রত্নতাত্ত্বিক রসদ মেলে না। যেমনটা মেলেনি সিন্ধু লিপির ক্ষেত্রে। আমাদের কাছে স্বীকৃত সিন্ধু শাসকদের নাম সম্পর্কে কোনও সূত্র নেই যা থেকে লিপিটি পাঠোদ্ধার করা সম্ভব। যেমন ক্লিওপেট্রা এবং টলেমির নাম প্রাচীন মিশরীয় ভাষা বোঝাতে সাহায্য করেছিল।

১৬ ২০

তবে কিছু বিষয়ে বিশেষজ্ঞেরা মোটামুটি একমত। অনেকেই বিশ্বাস করেন যে লিপিটি ডান থেকে বামে লেখা হত এবং অনেকে অনুমান করেন যে এটি ধর্মীয় এবং অর্থনৈতিক উভয় ক্ষেত্রেই ব্যবহার করা হত। এমনকি এমন কিছু চিহ্নের ব্যাখ্যাও রয়েছে যার উপর একাধিক বিশেষজ্ঞ একমত। উদাহরণস্বরূপ বলা যেতে পারে এক জন ব্যক্তিকে বোঝাতে ব্যবহার করা হত একটি মাথাবিহীন মূর্তি।

১৭ ২০

ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্সের অধ্যাপক রাজেশ পিএন রাও এক দশকেরও বেশি সময় ধরে সিন্ধু লিপি নিয়ে গবেষণা করছেন। তিনি সংবাদমাধ্যমে জানিয়েছেন, ‘‘দক্ষিণ এশিয়ার প্রাক্‌-ইতিহাস সম্পর্কে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের সমাধান করা যেতে পারে যদি আমরা লিপিটি সম্পূর্ণ রূপে পাঠোদ্ধার করতে সক্ষম হই।’’

১৮ ২০

অনেক পণ্ডিত এমনও মত প্রকাশ করেছেন যে, সিন্ধু লিপি হয়তো আদতে কোনও লিখিত লিপিই নয়। আবার হেলসিঙ্কি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আস্কো পারপোলা মনে করেন, সিন্ধু লিপি মোটামুটি ভাষাগতই।

১৯ ২০

যদি পাঠোদ্ধার করা সম্ভব হয়, তা হলে এই লিপিটি প্রাচীন মিশর এবং মেসোপটেমিয়ার প্রতিদ্বন্দ্বী বলে বিশ্বাস করা ব্রোঞ্জ যুগের সভ্যতার ঝলক দেখাতে সমর্থ হবে। সিন্ধু উপত্যকার মানুষ এবং তাঁদের বংশধর কারা ছিলেন সে সম্পর্কে মৌলিক প্রশ্নের উত্তর তুলে আনতে সহায়তা করবে।

২০ ২০

সিন্ধু লিপির নিশ্চিত অর্থ আজও উদ্ধার সম্ভব হয়নি, তবে প্রত্নতাত্ত্বিক খননের মধ্য দিয়ে সিন্ধু সভ্যতা সম্পর্কে কিছু তথ্য জানা সম্ভব হয়েছে। সব ভাষার জটিলতা একরকম নয়। সিন্ধু লিপি নিঃসন্দেহে অনেক বেশি জটিল। তবু চলতে থাকুক তাকে বোঝার সাধনা।

সব ছবি: সংগৃহীত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on:
আরও গ্যালারি
Advertisement