২০০৭ সাল। ক্রিকেট বিশ্ব তখন সম্পূর্ণ নতুন একটি ফরম্যাটের সঙ্গে সদ্য পরিচিত হয়েছে। ক্রিকেট যে মাত্র ২০ ওভারে খেলা যেতে পারে, শুরুর দিকে তা-ই ছিল আশ্চর্যের।
নতুন ফরম্যাটে নতুন নিয়মের সঙ্গে মানিয়ে-গুছিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিল (আইসিসি) আয়োজন করে ফেলল আস্ত একটা বিশ্বকাপের। ২০০৭ সালে প্রথম বার টি২০ বিশ্বকাপ দেখেছিল দুনিয়া।
প্রথম বারেই ২০ ওভারের বিশ্বকাপে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল ভারত। ফাইনালে মহেন্দ্র সিংহ ধোনির দল হারিয়ে দিয়েছিল পাকিস্তানকে। শেষ ওভার পর্যন্ত ম্যাচ গড়িয়েছিল। টান টান উত্তেজনায় রূপকথা লিখেছিলেন ধোনিরা।
তার পর আরও সাতটি বিশ্বকাপ কেটে গিয়েছে। ট্রফি আসেনি ভারতে। অপেক্ষা দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হয়েছে। ২০১৪ সালে বিরাট কোহলি দলকে ফাইনালে তুলেছিলেন। কিন্তু শ্রীলঙ্কার কাছে হারতে হয় সেই ম্যাচ।
দীর্ঘ এই অপেক্ষাই শনিবার রাতের জয়কে ভারতীয়দের কাছে আরও মধুর করে তুলেছে। উচ্ছ্বাস যেন বাঁধ ভেঙেছে দেশ জুড়ে। সুদূর ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জে রোহিত শর্মাদের সাফল্যে সারা রাত বাজি ফাটিয়েছে কলকাতা থেকে কানপুর।
২০০৭ সালে এমনই এক স্বপ্নের রাত দেখেছিল ভারত। কারিগর ছিলেন ধোনি এবং তাঁর দলের বাকি ১৪ জন খেলোয়াড়। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে জয় এনে দিয়েছিলেন তাঁরা। বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাসে মেতেছিল দেশ।
সে দিনের সেই জয়ের কারিগরেরা এখন কেমন আছেন? অনেকেই ক্রিকেটকে বিদায় জানিয়েছেন। কিন্তু ক্রিকেটের সঙ্গেই জুড়ে আছেন। কেউ কেউ আবার ক্রিকেট থেকে বহু দূরে সরে গিয়েছেন।
বিশ্বকাপজয়ী দলের অধিনায়ক ধোনি জাতীয় দলের হয়ে আর খেলেন না। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অবসর গ্রহণ করেছেন ২০২০ সালের ১৫ অগস্ট। তবে এখনও আইপিএলে চেন্নাই সুপার কিংসের জার্সিতে স্বমহিমায় খেলেন তিনি।
বিশ্বকাপজয়ী দলে ছিলেন গৌতম গম্ভীর। ২০১৯ সালের মার্চ মাসে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর নেন তিনি। পরে বিজেপিতে যোগ দিয়েছিলেন। পূর্ব দিল্লির সাংসদও নির্বাচিত হন। ২০২৪ সালে আইপিএলে কলকাতা নাইট রাইডার্সের মেন্টর হয়ে এসেছিলেন গম্ভীর। দলের জয়ে তাঁর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল।
২০০৭-এর জয়ের অন্যতম কারিগর ছিলেন হরভজন সিংহ। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় জানানোর পরও তিনি আইপিএল খেলেছিলেন কয়েক বছর। পরে রাজনীতিতে যোগ দেন। বর্তমানে হরভজন আম আদমি পার্টির রাজ্যসভার সাংসদ। সেই সঙ্গে ক্রিকেটে ধারাভাষ্যকার এবং বিশ্লেষকের কাজও করেন।
বীরেন্দ্র সহবাগ ২০০৭ সালের বিশ্বকাপের দলে ছিলেন। যদিও তিনি ফাইনালে খেলেননি। ২০১৫ সালের অক্টোবরে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর নেন সহবাগ। বর্তমানে কেন্দ্রীয় ক্রীড়া মন্ত্রকের অধীনে ন্যাশনাল অ্যান্টি ডোপিং এজেন্সির অন্যতম সদস্য তিনি।
২০১৯ সালে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর নেন যুবরাজ সিংহও। ১৭ বছর আগের সেই জয়ের অন্যতম কারিগর ছিলেন তিনি। এখন তরুণ ক্রিকেটারদের মেন্টর হিসাবে কাজ করেন।
২০০৭ সালের বিশ্বকাপজয়ী দলের সদস্য ছিলেন রোহিত শর্মা। তাঁর নেতৃত্বেই ১৭ বছর পর আরও একটি ২০ ওভারের বিশ্বকাপ ঘরে আনল ভারত। সে দিনের সেই দলের একমাত্র সদস্য রোহিতই, যিনি ২০২৪ সালের দলেও রয়েছেন। তবে শনিবার দেশের জার্সিতে ২০ ওভারের খেলা থেকে অবসর ঘোষণা করেছেন রোহিত।
ধোনির বিজয়ী দলের অন্যতম সদস্য ছিলেন দীনেশ কার্তিক। ২০২৪ সালে তিনি সকল প্রকার ক্রিকেট এবং আইপিএল থেকেও অবসর ঘোষণা করেছেন। বর্তমানে আইসিসির অধীনে ধারাভাষ্যকার হিসাবে কাজ করেন কার্তিক।
রবিন উথাপ্পা ক্রিকেট ছেড়েছেন ২০২২ সালে। আইপিএলেও আর খেলতে দেখা যায় না তাঁকে। বরং এখন তিনি থাকেন ধারাভাষ্যকারদের বক্সে। ক্রিকেটের অন্যতম বিশেষজ্ঞ হিসাবে তাঁর পরিচিতি রয়েছে।
পীযূষ চাওলা আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর নিয়েছেন। কিন্তু আইপিএল খেলেন এখনও। মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের হয়ে চলতি বছরও খেলেছেন তিনি। এ ছাড়া ধারাভাষ্যকার হিসাবেও তাঁকে দেখা যায়।
বিশ্বকাপজয়ী দলের অন্যতম সদস্য ছিলেন ইউসুফ পাঠান। তিনি খেলা ছাড়ার কথা ঘোষণা করেছেন ২০২১ সালে। ২০২৪-এ রাজনীতিতে এসেছেন বাংলার শাসকদল তৃণমূলের হাত ধরে। বহরমপুরের পাঁচ বারের সাংসদ অধীর চৌধুরীকে হারিয়ে নতুন সাংসদও হয়েছেন তিনি।
ইউসুফের ভাই ইরফানও ছিলেন সে দিনের দলে। তিনি খেলা ছেড়েছিলেন ২০২০ সালে। বর্তমানে ক্রিকেট বিশেষজ্ঞ এবং বিশ্লেষক হিসাবে দেখা যায় তাঁকে।
সে দিনের দলের অন্যতম সদস্য অজিত আগরকর এখন ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের প্রধান নির্বাচক। ২০১৩ সালে ক্রিকেট থেকে অবসর নিয়েছিলেন তিনি। ধারাভাষ্যকার হিসাবেও কাজ করেছেন।
যোগিন্দর শর্মাকে ২০০৭ সালের বিশ্বকাপ জয়ের নায়ক বলা হয়। শেষ ওভারে তাঁর হাতেই বল তুলে দিয়েছিলেন ধোনি। তবে ওই বিশ্বকাপের পর তাঁকে আর ভারতীয় দলে সে ভাবে দেখা যায়নি। যোগিন্দর এখন হরিয়ানা পুলিশের গণ্যমান্য কর্তা। অম্বালায় ডেপুটি সুপারিন্টেন্ডেন্ট হিসাবে কর্মরত তিনি, ক্রিকেট থেকে বহু দূরে।
ধোনির সে দিনের দলে ছিলেন আরপি সিংহ। ২০১৮ সালে তিনি আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর নিয়েছিলেন। বর্তমানে হিন্দি ধারাভাষ্যকারদের মধ্যে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছেন।
এস শ্রীসন্থও সে দিনের জয়ের অন্যতম কারিগর। ২০১৩ সালে ক্রিকেট থেকে অবসর নেন তিনি। সে বছরই আইপিএলের বেটিংকাণ্ডে তাঁর নাম জড়িয়েছিল। নির্বাসিত হয়েছিলেন। সে সব এখন অতীত। শ্রীসন্থ এখন ক্রিকেট বিশ্লেষকের ভূমিকায় রয়েছেন।