আরও এগিয়ে আসছে মোকার জন্মক্ষণ। কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই বঙ্গোপসাগরের বুকে তৈরি হতে চলেছে এই ঘূর্ণিঝড়। বুধবার সকালেই দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গোপসাগরে তৈরি হওয়া গভীর নিম্নচাপ আরও পশ্চিমে সরে গিয়ে পরিণত হয়েছে অতি গভীর নিম্নচাপে। আবহবিদরা জানাচ্ছেন, বুধবার সন্ধ্যা থেকে রাতের মধ্যেই সেই অতি গভীর নিম্নচাপ থেকে জন্ম নেবে ঘূর্ণিঝড় মোকা।
আবহবিদরা বলছেন দ্রুত শক্তি সঞ্চয় করছে ‘মোকা’। আর সেই জন্যই এক দিনের মধ্যেই তা পরিণতি পেতে চলেছে গভীর নিম্নচাপ থেকে ঘূর্ণিঝড়ে।
আবহবিদরা মনে করছেন, এই ভাবে শক্তি সঞ্চয় করলে ঘূর্ণিঝড় তৈরি হওয়ার পর তা দু’দিনের মাথাতেই অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হবে।
বর্তমানে দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গোপসাগর এবং তৎসংলগ্ন দক্ষিণ আন্দামান সাগরে অবস্থান করছে অতি গভীর নিম্নচাপ। তবে ক্রমেই সেটি সরে যাচ্ছে আরও পশ্চিমে এবং উত্তরপশ্চিমে। সেখানেই সরে গিয়ে তৈরি হবে ঘূর্ণিঝড়।
বুধবার সকালের তুলনায় পোর্ট ব্লেয়ারের থেকে দূরত্ব কমিয়েছে অতি গভীর নিম্নচাপ। বর্তমানে এই অতি গভীর নিম্নচাপ পোর্ট ব্লেয়ার থেকে ৫১০ কিমি দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থান করছে।
অতি গভীর নিম্নচাপটি বর্তমানে বাংলাদেশের কক্সবাজার থেকে ১৪৮০ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে রয়েছে। মায়ানমারের সিতওয়ে থেকে দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে ১৩৬০ কিলোমিটার দূরে রয়েছে।
অতি গভীর নিম্নচাপটি বর্তমান অবস্থান থেকে আরও উত্তর-উত্তরপশ্চিমে অগ্রসর হচ্ছে। এই অঞ্চলেই শক্তি বাড়িয়ে অতি গভীর নিম্নচাপ দ্রুত ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হবে বলে হাওয়া অফিস সূত্রে খবর।
তবে ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়ে দাপট কমাবে না মোকা। অন্তত এমনটাই মনে করছেন আবহবিদরা। হাওয়া অফিস সূত্রে খবর, বৃহস্পতিবার সকালের মধ্যে প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হবে মোকা। অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হতে পারে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যাতেই।
অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হওয়ার পর দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গোপসাগর এবং তৎসংলগ্ন দক্ষিণ আন্দামান সাগর থেকে একটু একটু করে উত্তর-উত্তরপূর্বে সরে যেতে পারে মোকা।
আবহবিদরা জানাচ্ছেন, অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হওয়ার পর মোকার গতিবেগ থাকবে ঘণ্টায় ১৮০ কিমি। সমুদ্রে বাধা না পেয়ে তা হু-হু করে এগিয়ে আসবে উপকূলের দিকে।
তবে উপকূলে আছড়ে পরার আগেই শক্তিক্ষয় করতে শুরু করবে মোকা। এমনটাই জানিয়েছেন আবহবিদরা। আবহাওয়া দফতর সূত্রে খবর, শনিবার থেকে ধীরে ধীরে শক্তি কমতে শুরু করবে মোকার।
হাওয়া অফিস সূত্রে খবর, রবিবার দুপুরের দিকে কক্সবাজার এবং মায়ানমারের কাউকপুর উপর আছড়ে পড়তে পারে মোকা। এর পর তা দক্ষিণ-পূর্ব বাংলাদেশ এবং উত্তর মায়ানমারের দিকে এগিয়ে যাবে।
হাওয়া অফিস সূত্রে খবর, বাংলাদেশ এবং মায়ানমার উপকূলে সর্বোচ্চ ১২০ থেকে ১৩০ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টা গতিবেগে আছড়ে পড়তে পারে ঘূর্ণিঝড়।
মোকা আবহে শুক্রবার থেকে বাংলাদেশ ও মায়ানমার উপকূলের মৎস্যজীবীদের সমুদ্রে যেতে নিষেধ করা হয়েছে। যে সব মৎস্যজীবী ইতিমধ্যেই উত্তর বঙ্গোপসাগরের গভীরে রয়েছেন, তাঁদেরও বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার মধ্যে উপকূলে ফিরে আসার পরামর্শ দিয়েছে হাওয়া অফিস।
আবহাওয়া দফতর সূত্রে খবর, বঙ্গোপসাগরে ঘূর্ণিঝড় মোকার পূর্বাভাস থাকলেও তার প্রভাব খুব বেশি পড়বে না বাংলাতে। রবিবার উপকূলবর্তী জেলাগুলিতে টুকটাক বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা থাকলেও শুকনোই থাকবে বেশির ভাগ জেলা। এমনকি, আগামী দু’দিন দক্ষিণবঙ্গ জুড়ে তাপপ্রবাহের সতর্কতাও জারি করেছে হাওয়া অফিস।
বঙ্গোপসাগরে ঘূর্ণিঝড়ের মাঝেই গরমে পুড়বে বাংলার অধিকাংশ জেলা। আলিপুর হাওয়া অফিস সূত্রে খবর, বুধবার থেকে শুক্রবার পর্যন্ত দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় তাপপ্রবাহ হতে পারে।
বৃহস্পতিবার তাপপ্রবাহের সম্ভাবনা রয়েছে উত্তর ২৪ পরগনা, হাওড়া, হুগলি, পুরুলিয়া, ঝাড়গ্রাম, পশ্চিম মেদিনীপুর, বাঁকুড়া, পশ্চিম বর্ধমান, পূর্ব বর্ধমান, বীরভূম, বীরভূম, মুর্শিদাবাদ এবং নদিয়ায়। শুক্রবার তাপপ্রবাহ চলতে পারে বাঁকুড়া, পশ্চিম বর্ধমান, পূর্ব বর্ধমান, বীরভূম, মুর্শিদাবাদ এবং নদিয়ার মতো কয়েকটি জেলায়।