ভারতীয় মুদ্রার আঁতুড়ঘর রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া। দেশের অর্থনীতিকে পরিচালনা করে এই কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্ক। অর্থ মন্ত্রকের অধীন এই ব্যাঙ্ক থেকেই যাবতীয় মুদ্রা এবং নোট ছাপানো হয়।
৮৭ বছর আগে ব্রিটিশ ভারতে আরবিআইয়ের পথ চলা শুরু হয়েছিল। ১৯৩৫ সালের ১ এপ্রিল তার জন্ম। রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের বর্তমান গভর্নর শক্তিকান্ত দাস।
রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের মতো তার প্রতীকচিহ্নটিও দেশের সনাতন ঐতিহ্যের বার্তাবহ। গোলাকার চাকতির উপর একটি বাঘ এবং তার ঠিক পিছন দিক দিয়ে মাথা তুলে দাঁড়ানো এক ফালি তালগাছ। আরবিআইকে চেনাতে এই প্রতীকই যথেষ্ট।
ভারতীয় মুদ্রার সমস্ত নোটে এই প্রতীকের ছবি থাকে। আরবিআইয়ের প্রতীক ছাড়া টাকা অচল। কিন্তু দেশের এই কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কের জন্য কেন বেছে নেওয়া হল এই বিশেষ চিহ্ন? কী বলতে চায় রিজার্ভ ব্যাঙ্কের বাঘ আর গাছের প্রতীক?
ব্রিটিশ ভারতে রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের প্রথম পর্যায়ের দিনগুলিতে শীর্ষস্থানীয় কর্তারা একটি প্রতীকচিহ্নের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেছিলেন। দেশের সমস্ত টাকা, চেক এবং মুদ্রা সংক্রান্ত যাবতীয় ক্ষেত্রে যে চিহ্ন রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের প্রতিনিধিত্ব করবে।
প্রতীক তৈরির জন্য প্রাথমিক ভাবে কয়েকটি লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছিল। শীর্ষকর্তারা আলোচনার মাধ্যমে স্থির করেছিলেন, রিজার্ভ ব্যাঙ্কের প্রতীকচিহ্নে এই ব্যাঙ্কের সরকারি স্বীকৃতি, পদমর্যাদার বার্তা নিহিত থাকবে। সরকারের ছাপ যেন চিহ্নের মধ্যে প্রতিফলিত না হয়, সে বিষয়েও খেয়াল রাখতে বলা হয়েছিল।
ভারতের কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কের প্রতীকচিহ্নে দেশের নিজস্ব কিছু থাকবে, যাতে ব্যাঙ্কের ভারতীয়ত্ব অক্ষুণ্ণ থাকে। এমনটাই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন কর্তারা।
স্থির হয়েছিল, আরবিআইয়ের প্রতীক হবে সাধারণ, সরল। তবে তাতে থাকবে শৈল্পিক ভাবনার প্রতিফলন। এই চিহ্নের মাধ্যমেই যাতে এক বাক্যে লোকে রিজার্ভ ব্যাঙ্ককে চিনতে পারে, সে কথা মাথায় রেখে প্রতীক তৈরি করা হয়েছিল।
১৮৩৫ থেকে ১৯১৮ সাল পর্যন্ত ভারতে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির জোড়া মোহর (ডবল্ মোহর) প্রচলিত ছিল। অনেক ভাবনাচিন্তার পর এই মোহরটিই রিজার্ভ ব্যাঙ্কের প্রতীক হিসাবে উপযুক্ত বিবেচিত হয়।
ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির জোড়া মোহরের মূল্য ছিল ৩০ টাকার সমান। সোনালি সেই মোহরে একটি সিংহ এবং একটি তালগাছের ছবি খোদাই করা ছিল। রিজার্ভ ব্যাঙ্কের জন্য এই ছবিতে সামান্য পরিবর্তন করা হয়।
আরবিআইয়ের প্রতীকে জোড়া মোহরের সেই সিংহের জায়গায় বসানো হয় বাঘ। কারণ সিংহের চেয়ে বাঘ ভারতের প্রকৃতির সঙ্গে অপেক্ষাকৃত বেশি মানানসই।
বলা হয়, রিজার্ভ ব্যাঙ্কের প্রতীকে এই বাঘটি আসলে শক্তি, ক্ষমতা এবং একই সঙ্গে কমনীয়তার বার্তা বহন করে। এ প্রসঙ্গে আরবিআইয়ের এক কর্তা বলেন, ‘‘সমকালীন সময়ে ভারতে সিংহ প্রায় বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছিল। অন্য দিকে বনেজঙ্গলে বাঘ দেখা যেত আকছার। তাই সিংহের বদলে বাঘকেই বেশি ‘ভারতীয়’ বলে মনে করা হয়েছিল।’’
রিজার্ভ ব্যাঙ্কের প্রতীকচিহ্নে তালগাছটি সত্য, মূল্য, জীবনীশক্তি, আন্তরিকতা, উর্বরতা, নিরাপত্তা এবং ঐক্যের বার্তা বহন করে। বাঘ এবং তালগাছের মধ্যেই কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কের মূল মন্ত্রটি প্রতিফলিত।
গোলাকার চাকতির উপর বাঘ এবং তালগাছের চারদিকে গোল করে লেখা থাকে ‘রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া’। ইংরেজি এবং দেবনাগরী, দুই হরফেই ব্যাঙ্কের নাম লেখা থাকে প্রতীকের উপর।
১৯৩৫ সালে রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের তৎকালীন ডেপুটি গভর্নর ছিলেন জেমস ব্রেইড টেলর। তাঁর তত্ত্বাবধানে বাঘ এবং তালগাছের ছবি-সহ প্রতীকচিহ্নে সরকারের সিলমোহর পড়ে।