রোজ রূপটানের নিত্যনতুন জিনিস বাজারে আসছে। এ বলে আমায় দেখ, তো ও বলে আমায়! এক এক জিনিসের এক এক গুণ। আর তার টানেই আমরা নিত্যনতুন রূপটানের জিনিস কিনে চলেছি, যার ফল ভুগছে ত্বক। অনেক বিশেষজ্ঞই ‘ত্বকের উপোস’-এর পরামর্শ দেন। আদৌ কি কার্যকর!
সমাজমাধ্যমে ইতিমধ্যেই প্রচার হয়েছে এই নতুন পদ্ধতির। অনেক ব্যবহারকারীই লিখেছেন, তাঁরা ইতিমধ্যে নিজেদের ত্বককে ‘উপোস’ করাচ্ছেন। অনেক বিশেষজ্ঞই বলছেন, এতে আখেরে ঝকঝকে হবে ত্বক।
সত্যিই কি এই পদ্ধতি অবলম্বন করলে ত্বকের উন্নতি হয়? একাংশ মনে করছেন, ত্বকের উপর এর প্রভাব খুব একটা ভাল নয়। তাই প্রশ্ন উঠেছে, ত্বককে উপোস করানো উচিত না কি নয়?
‘ত্বকের উপোস’ আসলে কী? বিশেষজ্ঞেরা জানাচ্ছেন, নিত্যদিন বাজারে রূপটানের নানা জিনিস বাজারে আসছে। কিছু না ভেবেই ও সব পণ্যের বিজ্ঞাপনের ফাঁদে পা দেন গ্রাহকেরা। মনে রাখেন না, আসলে তাঁদের ত্বকের জন্য কোনটা জরুরি।
রূপটানের নতুন জিনিস কিনে পরিচর্যাও শুরু করেন গ্রাহকেরা। আশা করেন, এর ফলে ত্বকের জেল্লা বাড়বে। তাতে কাজ না হলে কিছু দিন পর ফের নতুন পণ্য কিনে ফেলেন। আবার তা নতুন করে ত্বকে প্রয়োগ শুরু হয়। এর ফল আখেরে ভোগে ত্বক।
সব ধরনের রূপটানের সামগ্রী থেকে ত্বককে কিছু দিন রেহাই দিলে সমস্যার সমাধান হতে পারে বলে মনে করেন অনেকে। একেই বলে ‘ত্বকের উপোস’।
এক দল বিশেষজ্ঞ মনে করেন, আমাদের যেমন বিশ্রামের প্রয়োজন হয়, তেমন ত্বকেরও হয়। সব রকম রূপটানের সামগ্রী থেকে তাকে কয়েক দিনের ছুটি দিলে সেই প্রভাব চোখে পড়তে বাধ্য। এতে ত্বকের স্বাস্থ্য ভাল হয়।
কয়েক দিন থেকে টানা কয়েক সপ্তাহ ত্বকের জন্য এই রুটিন মেনে চলা যেতে পারে। ক্লিনজ়ার, টোনার, সেরাম, এক্সফোলিয়েন্টের হাত থেকে মুক্তি দিন ত্বককে।
তা বলে ত্বককে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখবেন না, এমন নয়। তার খাদ্য থেকেও বঞ্চিত করা যাবে না। হালকা কোনও ক্লিনজ়ার দিয়ে ত্বক পরিষ্কার করুন। তার পর হালকা ময়শ্চারাইজ়ার লাগানো প্রয়োজন।
বিশেষজ্ঞেরা মনে করছেন, এর ফলে ত্বকের কিছু উপকার হবে। দিন কয়েক কোনও রূপটানের সামগ্রী ব্যবহার না করলে ত্বক শ্বাস নেওয়ার সুযোগ পাবে।
‘উপোস’-এর ফলে ত্বকের নিরাময়ের সুযোগ মেলে। ত্বকের লিপিড স্তর পুনর্গঠিত হতে পারে। এই লিপিড স্তরই ত্বকের আর্দ্রতা ধরে রাখে। পিএইচের মাত্রা বজায় রাখে।
তাই লিপিড স্তরের দিকে নজর দেওয়া জরুরি। লিপিড স্তরের গঠন পোক্ত হলে তা ত্বককে রক্ষা করতে সমর্থ হয়। বিভিন্ন রকমের প্রসাধনী ব্যবহারের ফলে এই লিপিড স্তর ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ক’দিন তাকেও বিশ্রাম দেওয়া প্রয়োজন।
যাঁদের ত্বক সংবেদনশীল হয়, তাঁদেরও কম পরিমাণ প্রসাধনী ব্যবহার প্রয়োজন। সে ক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরনের রূপটানের সামগ্রি ব্যবহার করলে ত্বকে যে প্রভাব পড়ে, তা থেকে মুক্ত হওয়ার সুযোগ মেলে।
তবে অনেক চিকিৎসকই মনে করেন, ত্বককে উপোস করালেই যে হাতেনাতে ফল মিলবে, তা নয়। কারও ক্ষেত্রে বেশি ফল মিললেও কারও ক্ষেত্রে তার প্রভাব চোখে না-ও পড়তে পারে।
আবার অনেক ক্ষেত্রে ময়শ্চারাইজারের অভাবে ত্বক আরও খারাপও হয়েছে যেতে পারে। তবে চিকিৎসকদের একাংশ মনে করেন, ত্বককে উপোস করালে তার প্রভাব চোখে পড়তে অনেকটাই সময় লাগবে। তত দিন ধৈর্য ধরতে না পারলে ত্বককে উপোস করিয়ে কোনও লাভ নেই বলেই মনে করছেন অনেকে।