Israel-Hamas Conflict

কেন হামাসকে ঠেকাতে পারল না ইজ়রায়েলের দুঁদে গুপ্তচর সংস্থা? কী ভাবে কাজ করে মোসাদ?

গুপ্তচরবৃত্তি চালিয়ে নিয়ে যাওয়া পাশাপাশি ইজ়রায়েলকে শত্রুদের হাত থেকে বাঁচানোর জন্য প্রতি বছর মোসাদের জন্য মোটা অঙ্কের টাকা বরাদ্দ রয়েছে। এর পরিমাণ প্রায় ৩০০ কোটি ডলার।

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
শেষ আপডেট: ১৪ অক্টোবর ২০২৩ ০৮:০৮
Share:
০১ ২৯

৬ অক্টোবর মধ্যরাত। ইজ়রায়েলের বেশির ভাগ এলাকা তখন গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। হঠাৎ জোরালো আওয়াজ। বিস্ফোরণের শব্দ। যুদ্ধের সাইরেনে ঘুম ভেঙে যায় ইজ়রায়েলের বিভিন্ন শহরের।

০২ ২৯

সেই রাতে ইজ়রায়েলকে লক্ষ্য করে প্রায় পাঁচ হাজার রকেট ছুড়েছিল প্যালেস্তাইনের সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস। বিস্ফোরণের গগনভেদী আওয়াজে কেঁপে ওঠে ইজ়রায়েলের বিস্তীর্ণ এলাকা।

Advertisement
০৩ ২৯

সীমান্ত টপকে আসার পাশাপাশি, নৌকায় চেপেও ইজ়রায়েলে প্রবেশ করে হামাস গোষ্ঠী। মোটরচালিত ‘প্যারাগ্লাইডার’-এ করেও বেশ কয়েক জন ইজ়রায়েলের মাটিতে পৌঁছে গিয়েছিল।

০৪ ২৯

ইজ়রায়েলে অনুপ্রবেশ করে বিভিন্ন শহরে ধ্বংসলীলা চালায় হামাস বাহিনী। এমনকি একটি মিউজ়িক ফেস্টিভ্যালে গিয়েও তাণ্ডব চালায় তারা। আতঙ্কিত ইজ়রায়েলিদের বাড়ি থেকে টেনেহিঁচড়ে বার করে এনেও নাকি খুন করা হয়। এমনকি, মহিলা এবং শিশুদেরও নাকি রেয়াত করা হয়নি।

০৫ ২৯

হামাসকে রুখতে পরের দিনই তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে ইজ়রায়েল। দেখতে দেখতে সেই যুদ্ধ সপ্তম দিনে পা দিয়েছে। ইজ়রায়েলি সেনা জানিয়েছে, প্যালেস্তাইনের সশস্ত্র বাহিনী হামাসের সঙ্গে সংঘাতে এখন পর্যন্ত সে দেশের ১,২০০ নাগরিক মারা গিয়েছেন। তাঁদের মধ্যে ১৮৯ জন সেনা। ইজ়রায়েলের দাবি, ইতিমধ্যেই তারাও হামাস বাহিনীর ১৫০০ জনকে খতম করেছে।

০৬ ২৯

মনে করা হচ্ছে, ১৯৭৩ সালের ইয়োম কিপ্পুর যুদ্ধের পর এটিই ইজ়রায়েলের মাটিতে সবচেয়ে ভয়াবহ আক্রমণ।

০৭ ২৯

ইজ়রায়েলি নিরাপত্তা সংস্থা শিন বেট এবং গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের কড়া নজরদারি থাকা সত্ত্বেও হামাসের অনুপ্রবেশ ঠেকানো যায়নি। হু হু করে বেড়েই চলেছে দুই তরফের মৃতের সংখ্যা। বিশেষ করে, এই হামলা মোসাদের ব্যর্থতা বলেই মনে করছে বিশেষজ্ঞদের একাংশ।

০৮ ২৯

মোসাদ ইজ়রায়েলি গুপ্তচর সংস্থা। বিশ্বের অন্যতম সেরা এই গুপ্তচর সংস্থার আধিকারিকেরা সারা বিশ্বে ছড়িয়ে রয়েছেন বলে মনে করা হয়।

০৯ ২৯

ইজরায়েলের গুপ্তচর সংস্থা মোসাদের জগৎজোড়া খ্যাতি। কোন ছদ্মবেশে যে লুকিয়ে আছে তাদের গুপ্তচর, তা বুঝে ওঠার আগেই নাকি কাজ সাঙ্গ করে বিলীন হয়ে যান তাঁরা। বহু ক্ষেত্রেই আক্রান্ত দেশ মোসাদের উপস্থিতি টের পায় ক্ষতি হওয়া যাওয়ার পর।

১০ ২৯

২০২০ সালে গোপন অভিযান চালিয়ে লাদেনের নিকটাত্মীয় আল কায়দার প্রথম সারির নেতা আবু মহম্মদ আল-মাসরি ওরফে আহমেদ আবদুল্লাকে হত্যা করেছিল এই গুপ্তচর সংস্থা।

১১ ২৯

১৯৪৮ সালের ১৪ মে ইজ়রায়েল গঠনের পর থেকেই প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলির সঙ্গে তার সম্পর্ক কখনও বন্ধুত্বপূর্ণ হয়নি। যার ফলস্বরূপ প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলির সঙ্গে সাত বার যুদ্ধ হয়েছে ইজ়রায়েলের। সবেতেই অবশ্য জয় পেয়েছে তারা। প্রতিবেশী রাষ্ট্রের ষড়যন্ত্র যাতে কোনও ভাবেই দেশকে বিপদে না ফেলতে পারে, তাই সেই দেশগুলিতে রয়েছেন ইজ়রায়েলের গুপ্তচর সংস্থা মোসাদের প্রতিনিধিরা।

১২ ২৯

গুপ্তচরবৃত্তি চালিয়ে নিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি ইজ়রায়েলকে শত্রুদের হাত থেকে বাঁচানোর জন্য প্রতি বছর মোসাদের জন্য মোটা অঙ্কের টাকা বরাদ্দ রয়েছে। এর পরিমাণ প্রায় ৩০০ কোটি ডলার।

১৩ ২৯

মোসাদকে বিশ্বের অন্যতম বৃহত্তম গোয়েন্দা সংস্থা বলে মনে করা হয়। ইজ়রায়েলের এই গুপ্তচর সংস্থায় সাত হাজারেরও বেশি কর্মী রয়েছে।

১৪ ২৯

বর্তমানে মোসাদের মাথায় রয়েছেন ডেভিড ‘দাদি’ বার্নিয়া। ২০২১ সালে গুপ্তচর সংস্থার প্রাক্তন প্রধান ইয়োসি কোহেনের জায়গায় ডেভিডকে বসানো হয়।

১৫ ২৯

অত্যন্ত গোপন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ডেভিডকে মোসাদের প্রধান হিসাবে বেছে নেওয়া হয়েছিল। যে প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণের অধিকার রয়েছে হাতেগোনা মানুষের।

১৬ ২৯

মোসাদের বেশ কয়েকটি বিভাগ রয়েছে। তবে এর অভ্যন্তরীণ কাঠামো সম্পর্কে বেশির ভাগ তথ্যই এখনও অজানা। মনে করা হয় প্যালেস্তাইনের পাশাপাশি লেবানন, সিরিয়া এবং ইরানের মতো বিরোধী দেশগুলিতেও মোসাদের গোয়েন্দারা ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে৷

১৭ ২৯

মোসাদের ‘কালেকশন’ বিভাগ হল বৃহত্তম বিভাগ। সারা বিশ্বে মোসাদের জাল ছড়িয়ে রাখার নেপথ্যে রয়েছে এই বিভাগটিই। ‘পলিটিক্যাল অ্যাকশন এবং লায়াজোঁ’ বিভাগ রাজনৈতিক কার্যকলাপ পরিচালনা করে। বন্ধুদেশগুলির সঙ্গে যৌথ ভাবে কাজ করার সময় অগ্রণী ভূমিকা পালন করে এই বিভাগটি।

১৮ ২৯

মোসাদের বিশেষ অপারেশন বিভাগ বা ‘মেটসাদা’ গোপন হত্যাকাণ্ড, যুদ্ধ, আধাসামরিক বাহিনীর নেপথ্যে রয়েছে।

১৯ ২৯

‘লোহামাহ সাইকোলজিট (এলএপি)’ বিভাগ প্রচারমূলক এবং প্রতারণামূলক অভিযানের জন্য দায়ী।

২০ ২৯

অন্য দিকে, গবেষণা বিভাগ এবং প্রযুক্তি বিভাগ নতুন নতুন প্রযুক্তি নিয়ে গবেষণা চালায়।

২১ ২৯

কিন্তু এত শক্তিশালী হওয়া সত্ত্বেও কেন হামাসের আক্রমণ ঠেকাতে কেন ব্যর্থ হল মোসাদ? যার ফলে বিভিন্ন বিষয়ে প্রশ্নের মুখে পড়েছে এই গুপ্তচর সংস্থা। প্রশ্ন উঠেছে, কী ভাবে ইজ়রায়েলি গোয়েন্দাদের চোখে ধুলো দিয়ে সে দেশে ঢুকে পড়েছে হামাস বাহিনী? ইজ়রায়েলের সীমান্তে প্যালেস্তাইনের সশস্ত্রবাহিনী কী ভাবে এত অস্ত্রশস্ত্র এবং ক্ষেপণাস্ত্র মজুত করতে পেরেছিল, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে।

২২ ২৯

প্রশ্ন উঠছে, এটি শনাক্ত না করে বাড়ির কাছাকাছি হাজার হাজার রকেট এবং ক্ষেপণাস্ত্র কী ভাবে মজুত করতে পেরেছিল বা কেন ইসরায়েলের চির-নির্ভরযোগ্য আয়রন ডোম ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা গাজা থেকে আগত সমস্ত প্রজেক্টাইলকে আটকাতে পারেনি।

২৩ ২৯

ইজ়রায়েলের ‘নিশ্ছিদ্র পাহারাদার’ বলে মনে করা হয় ‘আয়রন ডোম’কে। ‘আয়রন ডোম’কে বিশ্বের অন্যতম শক্তিধর ‘এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম’ হিসাবে মনে করা হয়। সেই পাহারাদারকে তৈরি করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল মোসাদেরও। আর সেই রক্ষীর উপর বেশি ভরসা করেই নাকি ‘মুখ পুড়েছে’ মোসাদের।

২৪ ২৯

হামাসের মুহুর্মুহু হামলায় ইজ়রায়েলের ‘এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম’ কার্যত ‘বিভ্রান্ত’ হয়ে পড়েছিল। ইজ়রায়েলের আকাশসীমায় কড়া নজরদারি চালায় আয়রন ডোম। রোট হামলা হোক বা ক্ষেপণাস্ত্র, এমনকি ড্রোন হামলা— কোনও কিছুই এর নজর এড়িয়ে যেতে পারে না।

২৫ ২৯

ইজ়রায়েলের মাটিতে হামলা করার আগেই সেই সব আকাশে সেই লক্ষ্যবস্তুকে একেবারে নিশ্চিহ্ন করে দেয়। ভূমি থেকে আকাশ স্বল্প পাল্লার হামলা প্রতিরোধক এই আয়রন ডোম মূলত তিনটি কাজ করে। রাডারের মাধ্যমে লক্ষ্যবস্তুকে চিহ্নিত করা, দ্রুত সেই লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানার জন্য তৎপর হওয়া এবং ক্ষেপণাস্ত্র হামলাকে রুখে দেওয়া।

২৬ ২৯

প্রতিনিয়ত আকাশ প্রতিরোধক এই ব্যবস্থাকে উন্নত করার কাজ চালিয়ে যাচ্ছে ইজ়রায়েল। তাদের আকাশসীমাকে আরও নিশ্ছিদ্র করতে আয়রন ডোমকে আরও অত্যাধুনিক প্রযুক্তিতে সজ্জিত করা হয়েছে। ফলে আয়রন ডোমের নজরদারি এড়িয়ে আকাশপথে ইজ়রায়েলে হামলা চালানো প্রায় অসম্ভব। কিন্তু এ বার সেই ‘পাহারাদার’কেও একের পর এক রকেট হামলায় বিভ্রান্ত করে দিতে সক্ষম হয়েছে হামাস বাহিনী।

২৭ ২৯

বেশ কয়েকটি সূত্রের দাবি, অনেক দিন ধরেই ‘আয়রন ডোমের’ দুর্বলতা খোঁজার কাজ চালাচ্ছিল হামাস। সেই দুর্বলতা খুঁজেও বার করে ফেলে তারা। শনিবার হামলার প্রথম ধাক্কাটা এনেছিল আয়রন ডোমকে ‘বিভ্রান্ত’ করে। ২০ মিনিটের মধ্যে পাঁচ হাজার রকেট গাজ়া থেকে ইজ়রায়েলে ছোড়ে হামাস বাহিনী।

২৮ ২৯

এত কম সময়ের মধ্যে কয়েক হাজার রকেট হামলা ঠেকানোর জন্য পুরো শক্তি কাজে লাগিয়েছিল আয়রন ডোম। কিন্তু একসঙ্গে বিভিন্ন দিক থেকে রকেট হামলা হওয়ায় প্রত্যেক লক্ষ্যবস্তুকে চিহ্নিত করে আঘাত হানার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়। ফলে মুহুর্মুহু রকেট হামলায় প্রথম দিকে প্রায় দিশাহারা হয়ে পড়ে ইজ়রায়েল।

২৯ ২৯

পাশাপাশি ইজ়রায়েলের সীমান্তে মোসাদের বসানো ক্যামেরা-সেন্সরও হামাস বাহিনীকে ঠেকাতে পারেনি। কাজে দেয়নি উচ্চ প্রযুক্তিগত নিরাপত্তা ব্যবস্থাও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on:
আরও গ্যালারি
Advertisement