বৈশাখী গরমের অস্বস্তিতে নাজেহাল বঙ্গবাসী। গত কয়েক দিন ধরে দক্ষিণবঙ্গের তাপমাত্রা ছাড়িয়ে গিয়েছে ৪০ ডিগ্রির গণ্ডি। জেলায় জেলায় চলছে তাপপ্রবাহ। এমনকি, কলকাতাতেও তাপমাত্রা ৪০-এর বেশি।
এই পরিস্থিতিতে তাপমাত্রা কতটা বাড়ল, একটুও কমল কি না, তা নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যেও কৌতূহল থাকছে। ঘন ঘন তাঁরা মোবাইল ঘেঁটে দেখে নিচ্ছেন তাপমাত্রার হিসাব।
গুগ্লে কোনও নির্দিষ্ট এলাকার তাপমাত্রা জানতে চাইলে সবার উপরে দেখায় সেই হিসাব। তবে তাপমাত্রার ঠিক নীচে ছোট করে লেখা থাকে, ‘ফিল্স লাইক’। সেখানে দেওয়া থাকে তাপমাত্রার আর এক হিসাব।
কোনও এলাকায় তাপমাত্রা যদি ৩৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস হয়, তবে ‘ফিল্স লাইক’ তার চেয়ে তিন থেকে চার ডিগ্রি বেশি থাকে। অর্থাৎ, খাতায়কলমে তাপমাত্রা ৩৬ ডিগ্রি হলেও ৪০ কিংবা ৪২ ডিগ্রির গরম অনুভূত হয় ওই স্থানে।
কিন্তু কী এই ‘ফিল্স লাইক’? কেনই বা তাপমাত্রার হিসাবের সঙ্গে তা আলাদা করে দেওয়ার প্রয়োজন হয়? কী ভাবে এই ‘ফিল্স লাইক’ মাপেন আবহবিদেরা?
ব্রিটেনের আবহাওয়া অফিসের তথ্য অনুযায়ী, তাপমাত্রার ‘ফিল্স লাইক’ মাপা হয় কোনও এলাকার সম্ভাব্য তাপমাত্রার পূর্বাভাস, ওই এলাকার আর্দ্রতা এবং হাওয়ার গতিবেগ অনুসারে।
আবহবিদদের মতে, তাপমাত্রা বলতে বোঝায় কোনও নির্দিষ্ট এলাকার বাতাসের তাপমাত্রা। কিন্তু রাস্তাঘাটে বেরোলে শুধু হাওয়া নয়, আরও কিছু বিষয় তাপমাত্রায় প্রভাব ফেলে।
বাতাসের আর্দ্রতা, হাওয়ার গতিবেগের কারণে মূল তাপমাত্রার চেয়েও বেশি গরম বা ঠান্ডা অনুভূত হয়ে থাকে। তাই কলকাতায় মূল তাপমাত্রা যখন ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস, তার ‘ফিল্স লাইক’ ৪৫ থেকে ৪৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত পৌঁছে যায়।
বিপরীত ঘটনা ঘটে শীতকালে। তাপমাত্রা ১৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস হলেও তার ‘ফিল্স লাইক’ পৌঁছে যায় ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। অর্থাৎ, ওই এলাকার মানুষ আসলে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মতো ঠান্ডা অনুভব করছেন।
কী ভাবে অনুভূত তাপমাত্রাকে প্রভাবিত করে বাতাসের আর্দ্রতা এবং হাওয়ার গতি? আবহবিদদের মতে, বাতাসে আর্দ্রতা বেশি থাকলে ঘাম বেশি হয়। কিন্তু সেই ঘাম বাষ্পের সঙ্গে মিশে যেতে সময় বেশি লাগে। শরীর ঠান্ডা হতে পারে না, তখন গরম কিছুটা বেশি লাগে।
আবার হাওয়ার উষ্ণতা যা-ই থাক না কেন, প্রবাহ বেশি থাকলে, অর্থাৎ হাওয়া বইলে তাপমাত্রা কম অনুভূত হয়। সে ক্ষেত্রেও প্রভাব পড়ে গরমের অনুভূতির উপর।
‘ফিল্স লাইক’ পরিমাপের সময়ে ভূমি থেকে পাঁচ ফুট উপরের হাওয়ার গতি মেপে দেখেন আবহবিদেরা। সেই হিসাব প্রকাশ করা হয়। গুগ্লেও তা-ই লেখা থাকে।
পশ্চিমবঙ্গের হাওয়া অফিস অবশ্য ‘ফিল্স লাইক’ পরিমাপ করে না। আলিপুর কেবলমাত্র তাপমাত্রার পারদের হিসাবই প্রকাশ করে প্রতি দিন। যদিও তাপমাত্রার অন্য একটি হিসাব রাখেন আলিপুরের আবহবিদেরা।
বাতাসে অস্বস্তির সূচক পরিমাপ করা হয় আলিপুর আবহাওয়া দফতরে। শতাংশের হিসাবে তাঁরা দেখেন, তাপমাত্রা অনুযায়ী প্রতি দিনের গরমে অস্বস্তির পরিমাণ কতটা হতে পারে।
পারদ অনুযায়ী তাপমাত্রার সঙ্গে বাতাসের আর্দ্রতার পরিমাণ হিসাব করে অস্বস্তি পরিমাপ করা হয়। তবে সেই হিসাব সাধারণের জন্য প্রকাশ করে না আলিপুর। আবহবিদদের নিজেদের সুবিধার জন্য সেই হিসাব রাখা হয়। একে তাঁরা বলেন, ‘অস্বস্তির পরিমাণ’ বা ‘ডিসকমফোর্ট লেভেল’।
হাওয়া অফিস জানিয়েছে, কলকাতায় শনিবার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৪০.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। রবিবারও তাপমাত্রা ৪০ ছাড়িয়েছে। তবে গুগ্ল বলছে অধিকাংশ এলাকাতেই ‘ফিল্স লাইক’ ৪৫ ডিগ্রির কাছাকাছি পৌঁছে গিয়েছে।
গরমের অস্বস্তি কমার কোনও লক্ষণ আপাতত নেই। স্বস্তির খবর শোনাতে পারেনি হাওয়া অফিস। সোম এবং মঙ্গলবার পূর্ব মেদিনীপুর, পশ্চিম মেদিনীপুর, ঝাড়গ্রামে সামান্য বৃষ্টি হতে পারে। তবে তাতে গরম কমেনি।
তাপমাত্রা বাড়ছে। তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়ে চলেছে ‘ফিল্স লাইক’ও। অনেকে বলছেন, এ বছরের গরম বিগত অনেক বছরের নজির ভেঙে দিতে পারে। বৃষ্টির জন্য হাহুতাশ শুরু হয়ে গিয়েছে দক্ষিণবঙ্গ জুড়ে।