বৃহস্পতিবার মুক্তি পেয়েছে শাহরুখ খানের আসন্ন ছবি ‘ডানকি’ ছবির টিজ়ার। বড়দিনের ঠিক আগে আগে মুক্তি পাবে ছবিটি। মনে করা হচ্ছে, অবৈধ ভাবে কয়েক জন যুবক-যুবতীর ভারত থেকে লন্ডনে পাড়ি দেওয়ার গল্প বলবে এই ছবি।
বৈধ কাগজপত্র ছা়ড়া এক দেশ থেকে অন্য দেশে বেআইনি ভাবে অনুপ্রবেশ করাকে ‘ডানকি ফ্লাইট’ বলা হয়। মনে করা হচ্ছে, সে রকমই এক গল্পের কারণে এই ছবির নাম ‘ডানকি’ দিয়েছেন পরিচালক রাজকুমার হিরানি।
কিন্ত কী এই ‘ডানকি ফ্লাইট’? ভারত থেকে আমেরিকা, কানাডা এবং ব্রিটেনের মতো দেশগুলিতে প্রবেশের বেআইনি কৌশলকে ‘ডানকি ফ্লাইট’ বলে।
মাইগ্রেশন পলিসি ইনস্টিটিউটের মতে, ভারতীয়েরা, বিশেষ করে পঞ্জাবিরা প্রায়ই নিজেদের পছন্দের দেশে প্রবেশের জন্য অবৈধ পথ ব্যবহার করেন। ‘ডানকি ফ্লাইট’ কথাটির জন্মও পঞ্জাবে। যার অর্থ এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় ঘুরতে থাকা।
‘ডানকি ফ্লাইট’ এখন পঞ্জাব ছাড়িয়ে ভারতের অন্যান্য অঞ্চলেও ছড়িয়ে পড়েছে। তবে অবৈধ ভাবে অন্য দেশে প্রবেশ করার পর অনেকেই নাকি আর দেশে ফিরতে পারেন না।
বেশ কয়েকটি ‘ট্রাভেল এজেন্সি’ ভিসার ব্যবস্থা করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে বিদেশে যেতে ইচ্ছুকদের কাছ থেকে মোটা টাকা আদায় করে। তবে সে দেশে পাঠানোর পর নিজেদের দেওয়া প্রতিশ্রুতি পূরণ করে না তারা।
বিদেশ গিয়ে উপার্জনের লোভে এবং পরিবারের হাল ফেরাতে হাজার হাজার তরুণ-তরুণী ভিসার আবেদন জানান। অনেকের আশা পূরণ হলেও অনেককে বাঁকা পথ অবলম্বন করতে হয়। প্রতারিতও হতে হয় এজেন্টদের হাতে।
মূলত মালবাহী জাহাজের মাধ্যমে ভারত থেকে অন্য দেশে অবৈধ অনুপ্রবেশ ঘটে। অনেক ক্ষেত্রে বিদেশি পুলিশের হাতে ধরা পড়েন তাঁরা। অনেককে বিদেশে হাজতবাসও করতে হয়।
ব্রিটেনের সংবাদমাধ্যম ‘দ্য টাইমস’-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, বেআইনি ভাবে অনুপ্রবেশকারীর তালিকায় মূলত থাকেন অদক্ষ শ্রমিকেরা।
ব্রিটেনে যাওয়ার ক্ষেত্রে অনুপ্রবেশকারীদের প্রথমে ইউরোপীয় ইউনিয়নের কোনও দেশে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে তাঁদের নিয়ে যাওয়া হয় লন্ডনে।
জার্মানি, বেলজিয়াম, ফ্রান্সের মতো দেশগুলিতে প্রবেশের পর অনুপ্রবেশকারীদের সঙ্গে দেখা করেন তাঁদের এজেন্টরা। এর পর মোটা টাকার বিনিময়ে তাঁদের ভুয়ো অনুমতিপত্র এবং ড্রাইভিং লাইসেন্স দেওয়া হয়। লরি, বাস বা গাড়িতে করে পাচার করা হয় ইংল্যান্ডে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ভারতীয় লরিচালক ‘দ্য টাইমস’ বলেছেন যে তিনি ২০০১ সালে অবৈধ ভাবে ব্রিটেনে প্রবেশ করেছিলেন। সাত বছর পর তাঁকে আবার ভারতে ফেরত পাঠানো হয়।
ওই লরিচালক জানান, প্রথমে তিন লক্ষ টাকার বিনিময়ে তাঁকে অস্ট্রিয়া নিয়ে যাওয়া হয়। এর পরে ট্রেনে চেপে অস্ট্রিয়া থেকে ফ্রান্স পৌঁছন। ট্রেনের মধ্যে মালপত্র রাখার কামরায় লুকিয়ে তিনি ফ্রান্স পৌঁছেছিলেন।
এর পর তিনি ফ্লান্সের ক্যালাইস শহরে গিয়েছিলেন। সেখানে এক ব্রিটিশ দম্পতি প্রায় দু’লক্ষ টাকার বিনিময়ে গাড়িতে লুকিয়ে তাঁকে ব্রিটেন নিয়ে যান।
ব্রিটেনের এক জুতো কারখানায় কাজ করতে গিয়ে পুলিশের হাতে গ্রেফতার হন ওই লরিচালক। ভারতে পাঠানোর আগে তাঁকে কিছু দিন হাজতবাস করতে হয়েছিল বিদেশের মাটিতে। মনে করা হচ্ছে ‘ডানকি ফ্লাইট’-এর এ রকমই কোনও গল্প উঠে আসতে চলছে হিরানির আসন্ন ছবিতে।