ক্রেগ ডি অ্যালেন, নিউ মেক্সিকো বিশ্ববিদ্যালয়ের বাস্তুতন্ত্র বিভাগের সহকারী অধ্যাপক। পড়ানোটা তাঁর পেশা হলেও, নেশা জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে কী ভাবে গাছের মৃত্যু হচ্ছে, বন ধ্বংস হচ্ছে তার কারণ খোঁজা।
তা খুঁজতে গিয়ে তিনি ঘুরে বেড়ান পৃথিবীর বিভিন্ন শতাব্দীপ্রাচীন জঙ্গলে। বোঝার চেষ্টা করেন কী ভাবে বিশ্ব উষ্ণায়ন প্রাচীন গাছগুলির ক্ষতি করছে।
তিনি জানিয়েছেন, ২০০৬ থেকে ২০০৭ সালের মধ্যে উত্তর-পশ্চিম আমেরিকা এবং কলম্বিয়ায় প্রায় ৮০ শতাংশ প্রাচীন গাছ মারা গিয়েছে।
তাঁর কথায়, যে ভাবে দ্রুতহারে এই বিশালাকার প্রাচীন গাছগুলি মারা যাচ্ছে, তা যথেষ্ট চিন্তার বিষয়। এই ধরনের গাছের জিন-বিজ্ঞান সম্পর্কে আমাদের জ্ঞানের অভাব রয়েছে।
যে গাছগুলি এখনও বেঁচে আছে, আগামিদিনে তারা জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে শুষ্ক এবং উত্তপ্ত পৃথিবীতে কী ভাবে বেঁচে থাকবে, সেটা এখন বড় প্রশ্ন।
গত কয়েক বছর ধরে বিজ্ঞানীরা এই বৃহৎ গাছগুলির জিন বিজ্ঞান নিয়ে চর্চা করছেন। তাতে একটি বিষয়ে তাঁরা সিদ্ধান্তে এসেছেন, গাছগুলি পৃথিবীর বনাঞ্চলের ভবিষ্যতের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
অ্যালেনের মতো আরও বেশ কয়েক জন গবেষক জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বনাঞ্চলে প্রভাব নিয়ে গবেষণা করছেন। তাঁরা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন, বিশ্ব উষ্ণায়নের ফলে তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেলে এবং খরা দেখা দিলে এই ধরনের বনাঞ্চলগুলি সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
বনাঞ্চলগুলি কী ভাবে জলবায়ু পরিবর্তনের মোকাবিলা করছে, তা তাঁরা খতিয়ে দেখছেন। যেখানে গরম এবং আর্দ্রতা সমান ভাবে রয়েছে, সেখানে কিছুটা হলেও ভাল অবস্থানে রয়েছে বনাঞ্চলগুলি। কিন্তু যেখানে গরম এবং খরা, সেখানে ক্রমবর্ধমান সংখ্যায় মারা যাচ্ছে প্রাচীন গাছগুলি।
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বৃহৎ এবং প্রাচীন গাছগুলি কেন সঙ্কটে? তার কারণ হিসাবে গবেষকরা মনে করছেন, বেঁচে থাকতে তাদের দরকার প্রচুর জল এবং শক্তির। খরার ফলে তা না পেয়ে গাছগুলি এতটাই দুর্বল হয় পড়ে যে, তারা পোকামাকড়, আগুন এবং রোগের শিকার হয়।
কেন জঙ্গলে এই বৃহৎ এবং প্রাচীন গাছগুলির থাকা প্রয়োজন? কারণ হিসাবে গবেষকরা জানাচ্ছেন, বনাঞ্চলে এক শতাংশ এই ধরনের গাছ থাকলে তা ৫০ শতাংশ কার্বন শুষে নিতে পারে।
গবেষকরা জানাচ্ছেন, নিয়মিত খরা এই সব গাছের পক্ষে ক্ষতিকর। খরার পর পর্যাপ্ত জল পেয়ে ক্ষত সারিয়ে উঠে দাঁড়ানোর আগেই ফের যদি খরা হয়, তখন গাছটির পক্ষে তা আরও বিপজ্জনক হয়ে ওঠে।
গবেষকদের আশঙ্কা, যে হারে বৃহৎ এবং প্রাচীন গাছের সংখ্যা কমছে, তাতে বনাঞ্চলগুলিতে কম বয়সি গাছের প্রাধান্য দেখা যাচ্ছে। ছোট হয়ে আসছে বনাঞ্চলের আকারও। ফলে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে লড়াইও দুর্বল হয়ে পড়ছে।
জলবায়ু পরিবর্তনের গতিতে রাশ টানতে কী করতে হবে? এই প্রশ্নের উত্তরে গবেষকরা জানাচ্ছেন, প্রথম কাজ হল কার্বন নির্গমনে নিয়ন্ত্রণ আনা।
কিন্তু সেখানেই শেষ নয়। তাতে এক দশকের জন্য কিছুটা স্বস্তি পাওয়া যেতে পারে। কিন্তু তার চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ কাজ হল, কিছুটা যান্ত্রিক ভাবে বনাঞ্চলের পরিমাণ বাড়াতে হবে। যে বনাঞ্চলে প্রাচীন গাছ থাকবে।
আবার কিছু জায়গায় নিয়ন্ত্রিত ভাবে আগুন জ্বালিয়ে গাছে সংখ্যা কমাতে হবে। প্রতি একর জমিতে ৮০০ থেকে ১০০০টি গাছ থাকা মানে জলের জন্য প্রতিযোগিতা বেড়ে যাওয়া।
একটি স্বাস্থ্যকর বনাঞ্চলে ওই সংখ্যার এক দশমাংশ গাছ থাকবে। কিছু ক্ষেত্রে প্রয়োজনে সেচের ব্যবস্থা করতে হবে।
কয়েকটি সংস্থা আবার বিকল্প পদ্ধতি হিসাবে প্রাচীন গাছগুলোর ক্লোন করাও শুরু করেছে। আর্চঅ্যাঞ্জেল ‘অ্যানসিয়েন্ট ট্রি আর্কাইভ’ নামে একটি সংস্থা ৭৫টি প্রাচীন রেডউডের ক্লোন করেছে।
সংস্থাটির যুক্তি হল, ২০০০ বছরের একটি গাছকে অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। কিন্তু জিন প্রযুক্তিতে তার ক্লোন করা সম্ভব। সে রকমই কিছু গাছের ক্লোন থেকে সংস্থাটি নিজেদের গ্রিন হাউজে চারা তৈরি করেছে।
দাবানলের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত বনাঞ্চলে সেই ক্লোন করা গাছের চারাগুলি বসানো হয়েছে।
গত দুই দশক ধরে ক্লোনিং করার পর সম্প্রতি সংস্থাটি একটি গবেষণাপত্র প্রকাশ করেছে। তাতে বলা হয়েছে, এই ভাবে প্রাচীন গাছগুলির সংরক্ষণ করার পাশাপাশি বিশ্ব উষ্ণায়নের বিরুদ্ধে লড়াই করা সম্ভব।