সোমবার সকাল ৭টা ৫১ মিনিট থেকে মেট্রো পরিষেবা হঠাৎ থেমে যায়। তবে আংশিক ভাবে। রেমাল ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে তখন রাস্তায় হাঁটুজল। শহর জুড়ে যত্রতত্র গাছও পড়ে রয়েছে। সেই সময় অফিসযাত্রীদের ভরসা মেট্রো। তবে মাটির তলার পথেই তখন জল জমে গিয়েছে।
রবিবার ঘূর্ণিঝড় রেমালের জেরে রাতভর বৃষ্টির ফলে সোমবার সকাল থেকেই বিপর্যস্ত কলকাতার মেট্রো পরিষেবা। পার্ক স্ট্রিট এবং এসপ্ল্যানেড মেট্রো স্টেশনের মাঝের ট্র্যাকে বৃষ্টির কারণে জল ঢুকে পড়েছে। স্টেশনের একাংশ-সহ পার্ক স্ট্রিট স্টেশন জলের তলায়। তাই সোমবার সাতসকাল থেকেই ব্যাহত মেট্রো পরিষেবা।
জল জমে যাওয়ার কারণে গিরিশ পার্ক থেকে মহানায়ক উত্তমকুমার (টালিগঞ্জ) পর্যন্ত মেট্রো পরিষেবা পুরোপুরি বন্ধ। আপ এবং ডাউন কোনও দিকেই মেট্রো চলছে না ওই অংশে। সকাল ৭টা ৫১ মিনিট থেকে মেট্রো পরিষেবা ব্যাহত হয়েছে বলে মেট্রো সূত্রে খবর। ফলে বিপদে পড়েছেন নিত্যযাত্রীরা।
মেট্রো সূত্রে খবর, পার্ক স্ট্রিট এবং এসপ্ল্যানেডের মধ্যবর্তী ট্র্যাকে জল জমে থাকার কারণে ট্রেন চলাচলে সমস্যা দেখা দিয়েছে। তবে মহানায়ক উত্তমকুমার থেকে কবি সুভাষ এবং গিরিশ পার্ক থেকে দক্ষিণেশ্বর স্টেশন পর্যন্ত মেট্রো চলাচল করছে।
দ্রুত মেট্রো পরিষেবা স্বাভাবিক করার কাজ চলছে। ট্র্যাক থেকে জল বার করার কাজে নেমে পড়েছেন মেট্রো কর্মীরা। ঘটনাস্থলে রয়েছেন মেট্রোর উচ্চপদস্থ আধিকারিকেরাও।
কলকাতার বিভিন্ন এলাকা-সহ পার্ক স্ট্রিট সংলগ্ন রাস্তাঘাটেও সোমবার সকাল থেকে জল জমে রয়েছে। রাস্তাঘাটে বাস, ট্যাক্সির সংখ্যাও খুবই কম। তাই অনেকেই মেট্রোর উপর ভরসা করেছিলেন। কিন্তু ট্রেন না চলায় দুর্ভোগের শিকার হয়েছেন তাঁরা। হাতেগোনা কয়েকটি বাস চলায় সেগুলিতে ভিড়ও প্রচুর। ট্যাক্সির দেখা মেলা ভার। অ্যাপ ক্যাবগুলির ভাড়াও আকাশছোঁয়া। এই প্রতিবেদন প্রকাশের সময় পর্যন্তও মেট্রো পরিষেবা স্বাভাবিক হয়নি।
তবে এই প্রসঙ্গে মেট্রোর মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক কৌশিক মিত্র বলেন, “আপাতত কবি সুভাষ থেকে ময়দান এবং দক্ষিণেশ্বর থেকে গিরিশ পার্ক পর্যন্ত মেট্রো চলছে। কিছু ক্ষণের মধ্যেই সম্পূর্ণ পরিষেবা চালু করা যাবে বলে আমরা আশা রাখছি।”
পার্ক স্ট্রিট মেট্রো স্টেশনের সিঁড়ি দিয়ে জল মেট্রো স্টেশনের ভিতরে প্রবেশ করেছে। এমনকি দেওয়ালের ফাটল দিয়েও জল চুঁইয়ে পড়তে দেখা যাচ্ছে। যাত্রীরা যাতে মেট্রো স্টেশনে প্রবেশ করতে না পারেন, সেই কারণে প্রবেশপথও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
রেমাল ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা করে কলকাতা মেট্রোর সব স্টেশনের দায়িত্বে থাকা সুপার এবং শিফ্ট ইন-চার্জদের রবিবার স্টেশনে হাজির থাকার নির্দেশ দিয়েছিলেন মেট্রো কর্তৃপক্ষ।
কিন্তু ঝড় উপকূলে আছড়ে পড়ার অনেক আগেই কবি নজরুল স্টেশনে শেডের একাংশ উড়ে যাওয়ায় রবিবার সন্ধ্যায় প্রায় দু’ঘণ্টা মেট্রো পরিষেবা ব্যাহত হয়।
রবিবার বিকেল সাড়ে ৫টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা ২০ মিনিট পর্যন্ত নিউ গড়িয়া সংলগ্ন কবি সুভাষ থেকে টালিগঞ্জ সংলগ্ন মহানায়ক উত্তমকুমার স্টেশন পর্যন্ত মেট্রো পরিষেবা সাময়িক বন্ধ রাখা হয়। ওই সময়ের মধ্যে মহানায়ক উত্তমকুমার স্টেশন থেকে দক্ষিণেশ্বরের মধ্যে মেট্রো চলাচল করে।
মেট্রো সূত্রের খবর, রবিবার দুপুরের দিকে গড়িয়া সংলগ্ন কবি নজরুল স্টেশনে ভাঙা শেডের একাংশ ফের ঝোড়ো হাওয়ার দাপটে খুলে যায় বলে অভিযোগ। প্রসঙ্গত, সপ্তাহ তিনেক আগে, গত ৭ মে সন্ধ্যার ঝড়বৃষ্টিতে ওই স্টেশনেরই শেডের একাংশ উড়ে গিয়েছিল। তার পরে কাগজেকলমে ওই শেডের মেরামতির কাজ শুরু হলেও বাস্তবে সেই কাজ প্রায় কিছুই এগোয়নি বলে অভিযোগ।
ঝড়ে শেডের একটি অংশ ফের ভেঙে যাওয়ার পরে সমস্যা মেটাতে খবর দেওয়া হয় সংশ্লিষ্ট বিভাগকে। তারা বিকেলের পরে কাজ শুরু করায় ওই পথে মেট্রো পরিষেবা বন্ধ রাখা হয়।
অবশ্য ঝড়ের সতর্কতার কথা জানিয়ে পরিষেবা বন্ধ রাখা হয়েছে বলে জানান মেট্রো কর্তৃপক্ষ। তাতে অনেকেই মনে করেন, মেট্রোর উড়ালপথে বিপত্তির আশঙ্কায় হয়তো পরিষেবা বন্ধ রাখা হচ্ছে। পরে সমস্যা মিটে গেলে পরিষেবা আবার স্বাভাবিক হওয়ার কথা জানানো হয়।
মেট্রো কর্তৃপক্ষের তরফে জানানো হয়েছে যে, সোমবার সকালে কলকাতার রাস্তাঘাটে জল জমে যাওয়ার কারণে এই ঘটনা ঘটেছে। মাটি জল শুষে নেওয়ার কারণে পার্ক স্ট্রিট মেট্রো স্টেশনের ভিতরে জল নেমে এসেছে। তার ফলে প্ল্যাটফর্ম থেকে ট্র্যাকেও জল জমে গিয়েছে। যাত্রীদের সুরক্ষার খাতিরে মেট্রো চলাচল আংশিক বন্ধ রাখা হয়েছে। জল সরানোর কাজ দ্রুত সম্পূর্ণ হলে মেট্রো পরিষেবা স্বাভাবিক হয়ে যাবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন মেট্রো কর্তৃপক্ষ।