ইটালির বন্দরে নোঙর করা একটি সুপারইয়টের মালিকানা নিয়ে ধোঁয়াশা চরমে। সেটির মালিক কি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন? প্রশ্ন তুলেছে ব্রিটেন-সহ বেশ কয়েকটি দেশের ট্যাবলয়েড। এ নিয়ে রহস্য থাকলেও ওই সুপারইয়টটি বাজেয়াপ্ত করেছে ইটালি প্রশাসন।
চলতি বছরের মার্চে পিসা শহরের কাছে মারিনা দি কারারা বন্দরে ওই বিলাসবহুল সুপারইয়টটি নোঙর করেছিল। কোটি কোটি ডলার খরচ করে তার অন্দরের যন্ত্রপাতি মেরামতি এবং সংস্কারের কাজ চলছিল। তবে মাসের পর মাস কেটে গেলেও সুপারইয়টটির আসল মালিকানা নিয়ে কিছুই স্পষ্ট করে জানা যায়নি।
কাগজেকলমে ওই সুপারইয়টের মালিক হিসাবে গাই বেনেট-পিয়ার্স নামে এক ব্রিটিশের নাম রয়েছে। তবে ইটালির দাবি, ‘দ্য শেহরাজাদে’ নামে ওই সুপারইয়টটির বেশির ভাগ কর্মী আসলে রাশিয়ার গুপ্তচর সংস্থার কর্মী। যদিও এ নিয়ে টুঁ শব্দও করেনি রাশিয়া।
শেষমেশ মে মাসে ওই সুপারইয়টটি বাজেয়াপ্ত করেছে ইটালি প্রশাসন। সেই সঙ্গে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, আপাতত ইটালির বন্দর ছেড়ে যেতে পারবে না সেটি।
কেন এ ধরনের পদক্ষেপ করল ইটালি প্রশাসন? একটি বিবৃতি জারি করে ইটালির পুলিশের দাবি, ‘সুপারইয়টের কাগজপত্র খতিয়ে দেখার পর জানা গিয়েছে, দ্য শেহরাজাদের মালিকের সঙ্গে রুশ সরকারের অর্থনৈতিক সম্পর্ক রয়েছে।’
সুপারইয়টি বাজেয়াপ্ত করার পদক্ষেপ যে ইউক্রেনীয় যুদ্ধের ফলে রাশিয়ার বিরুদ্ধে ইউরোপীয় ইউনিয়নের নিষেধাজ্ঞার অঙ্গ, তা-ও জানিয়েছে ইটালির পুলিশ। এই পদক্ষেপে সিলমোহর দিয়েছে রোমের অর্থ মন্ত্রকও।
যে সুপারইয়টটি ঘিরে প্রশ্ন উঠছে, সেটি নাকি পুতিনের ‘বান্ধবী’ তথা অলিম্পিক্সে সোনাজয়ী রিদ্যমিক জিমন্যাস্ট আলিনা কাবায়েভার অত্যন্ত প্রিয়। সেটি নাকি আলিনার ‘খেলাঘর’। এমন দাবি করে গুচ্ছ গুচ্ছ প্রতিবেদনও প্রকাশিত হতে শুরু করেছে বিভিন্ন ট্যাবলয়েড।
পুতিন-বিরোধী বলে পরিচিত সংবাদমাধ্যম ডসিয়ের সেন্টারের দাবি, রাশিয়ার প্রেসিডেন্টকে ওই সুপারইয়টটি উপহার দিয়েছিলেন তাঁরই প্রাণের বন্ধুরা। এবং এই উপহারের জন্য ৫৮.৩ কোটি ইউরো ঢালা হয়েছে অ্যালেরা অ্যাসেটস, দিয়াম ওভারসিস, হাই ডেফিনিশন, ইম্পেরিয়াল ইয়টস এবং ওন্দা মেয়ার নামে পাঁচটি বিদেশি সংস্থার মাধ্যমে।
ওই সংবাদমাধ্যমের আরও দাবি, রাশিয়ার জ্বালানী সংস্থা রসনেফ্টের প্রাক্তন প্রেসি়ডেন্ট এডওয়ার্ড খুদাইনাতোভের নামে সুপারইয়টটি নথিভুক্ত রয়েছে। সেই সঙ্গে আরও একটি পরিচয় রয়েছে খুদাইনাতোভের। তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের গুপ্তচর সংস্থা কেজিবির প্রাক্তন এজেন্টও ছিলেন তিনি।
ডসিয়ের সেন্টারের রিপোর্ট জানিয়েছে, পুতিন এবং তাঁর ঘনিষ্ঠ বৃত্তে একেবারে সামনের সারিতে রয়েছেন খুদাইনাতোভ। রিপোর্টে আরও দাবি, ২০১৪ সালের ৩০ ডিসেম্বর পুতিনকে নতুন বছরের উপহার হিসাবে এই সুপারইয়টটি দেওয়া হয়েছিল।
এই দামি উপহার কেনার ভাবনা নাকি এসেছিল গেনাডি টিমচেঙ্কো নামে এক ধনকুবেরের মনে। তবে তিনি একা নন, এই উপহারের পিছনে আরও অনেকে ধনকুবেরের অবদান রয়েছে বলে দাবি। এই উপহার কিনতে তাঁরা নাকি ৫০ কোটি পাউন্ড অর্থ ঢেলেছেন।
সুপারইয়টটি কেনার পর তার বিলাসী অন্দরসজ্জা-সহ নানা যন্ত্রপাতি জুড়তে আরও কয়েক কোটি পাউন্ড খসেছে ধনকুবেরদের। সব মিলিয়ে সেই অর্থের পরিমাণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮৫ কোটি পাউন্ডের কাছাকাছি।
যে সুপারইয়টটি নিয়ে হইচই শুরু হয়েছে, তার অন্দরে উঁকি দিলে চোখ কপালে উঠতে পারে অনেকের। ছ’টি ডেকযুক্ত তলা রয়েছে এতে। দু’টি অভিজাত ব্লকের ফ্ল্যাট পর পর জুড়লে যেমন দেখায়, এই সুপারইয়টটি নাকি তেমন দেখতে।
ইটালির যে সমস্ত স্থানীয় কর্মী এই সুপারইয়টে মেরামতির কাজ করেছেন, তাঁরাও এর অন্দরের সাজসজ্জা নিয়ে নানা দাবি করেছেন। তাঁরা জানিয়েছেন, সুপারইয়টটিতে রয়েছে একাধিক সুইমিং পুল।
এতে রয়েছে সনা বাথ নেওয়ার বন্দোবস্ত। অত্যাধুনিক স্পা কমপ্লেক্স, একটি বিশালাকার থিয়েটার, একাধিক বলরুম এবং একটি জুডো জিম। প্রসঙ্গত, পুতিন নিজে জুডোয় ব্ল্যাক বেল্টের অধিকারী। ফলে অনেকেই এখানে রাশিয়ার সর্বময় নেতার ব্যক্তিগত পছন্দের প্রসঙ্গও তুলে ধরেছেন। এ ছাড়া, এই সুপারইয়টে একটি হাসপাতালও রয়েছে।
অতিথিদের মন মজাতে ন’টি অভিজাত কেবিনও রয়েছে এতে। সেই সঙ্গে সুপারইয়টের ৪০ জন কর্মীর থাকার জন্য আরও ২০টি কেবিনও রয়েছে এই সুপারইয়টে। রয়েছে দু’টি হেলিপ্যাড।
শুধু কি বিলাসবহুল কেবিন! এর বাথরুমেও নাকি রয়েছে আভিজাত্যের ছাপ। সেখানে টয়লেট রোল রাখার জন্য হোল্ডারগুলি সবই নাকি সোনার। ঠিক ট্রাম্প টাওয়ারে যেমনটা দেখতে পাওয়া যায়, তার মতো। এ সবই দাবি করেছেন ইটালিরা কর্মীরা।
পুতিনের ৩৯ বছরের ‘বান্ধবী’ এই সুপারইয়টটি ব্যবহার করেছেন বলে দাবি উঠেছে। তবে খোদ রুশ প্রেসিডেন্ট কি এতে পা রেখেছেন? সে নিয়ে নাকি কিছুই জানা যায়নি।