বছরে এক লক্ষ কোটি টাকা উপার্জন করে তাঁর হাতে তৈরি সংস্থা। অথচ এই মানুষটিরই প্রথম ব্যবসা মুখ থুবড়ে পড়েছিল। তিনি যদিও হার মানেননি। বরং হার থেকে শিক্ষা নিয়েছিলেন।
নাম বিবেক চাঁদ সহগল। ভারতের এই শিল্পপতি এখন অস্ট্রেলিয়ার ধনীশ্রেষ্ঠ। সম্পত্তির পরিমাণ ৪৮০ কোটি ডলার, ভারতীয় মুদ্রায় যা প্রায় ৩৯ হাজার কোটি টাকা। অথচ এই বিবেকই এক সময় মাসে আড়াই হাজার টাকা বেতনের চাকরি করতেন।
বিবেকের জন্ম দিল্লিতে, ১৯৫৬ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর। পড়াশোনা করেছেন রাজস্থানের পিলানির বেসরকারি স্কুলে। বয়স যখন ১৮, তখন দিল্লির এক রুপো কেনাবেচা করার সংস্থার হয়ে কাজ শুরু করেন বিবেক।
কাজটা ছিল কেজি কেজি রুপো বিমানবন্দরে পৌঁছে দেওয়ার। আবার বিমানবন্দরে এসে পৌঁছনো রুপো নিয়েও আসতে হত বিবেককে।
এই কাজে প্রতি কেজি রুপো এক টাকা করে আয় হত বিবেকের। এ ভাবেই এক মাসে হাতে আসত কমবেশি আড়াই হাজার টাকা।
মধ্যবিত্ত পরিবারে সে সময়ে সেই টাকাই ছিল যথেষ্ট! এক সাক্ষাৎকার বিবেক জানিয়েছেন, সরকারি কাজ করে তাঁর বাবা যা আয় করতেন, তার থেকে বেশি উপার্জন করতেন তিনি।
সময়টা সত্তরের দশক। তরুণ বিবেক সেই সময়েই সিদ্ধান্ত নেন চাকরি ছেড়ে ব্যবসা করার।
দাদু ছিলেন গয়নার কারিগর। বিবেক ঠিক করেন, যে রুপোর ব্যবসার কাজ তিনি এত দিন করে এসেছেন, সেই ব্যবসাই নিজে শুরু করবেন।
মা স্মরণলতা সহগালকে সঙ্গে নিয়ে রুপো কেনাবেচার ব্যবসা শুরু করেন বিবেক। ১৯৭৫ সালে চালু হয় তার সংস্থা। কিন্তু কয়েক বছরের মধ্যেই বিবেকের সংস্থার ব্যবসা পড়তে শুরু করে।
দেশে সেই সময় গোটা রুপো কেনাবেচার ব্যবসায় মন্দা চলছে। এই পরিস্থিতিতে দেউলিয়া হওয়ার অবস্থায় পৌঁছয় বিবেকের সংস্থা। কিন্তু বিবেক হাল ছাড়েননি।
বিবেক তাঁর ব্যবসার অভিমুখই বদলে ফেলেন। রুপো ছেড়ে গাড়ির যন্ত্রাংশের ব্যবসা শুরু করেন একই সংস্থার নামে। ক্রমে সুফল মিলতে শুরু করে।
লাভের মুখ দেখতে পেয়ে ধীরে ধীরে গাড়ির যন্ত্রাংশ তৈরি করাও শুরু করে তাঁর সংস্থা। বিবেক হাত মেলান জাপানের সংস্থার সঙ্গে। তার পরে আর পিছু ফিরে তাকাতে হয়নি সহগলকে।
মা বহু দিন প্রয়াত হয়েছেন বিবেকের। তাঁর নিজের বয়স এখন ৬৭। তবে তাঁর সংস্থা এখন আরও বড় হয়েছে। তাঁর পুত্র ভামন সহগলও দায়িত্ব নিয়েছেন ব্যবসার।
বর্তমানে অস্ট্রেলিয়ার বাসিন্দা বিবেক। ১৮ মার্চের বিদেশি অর্থনীতি সংক্রান্ত পত্রিকা ফোর্বসের বিচারে, মোট সম্পত্তির হিসাবে গোটা বিশ্বের ধনী তালিকায় ৬৬৬তম এই ভারতীয় ব্যবসায়ী। আর অস্ট্রেলিয়ায় তিনিই ধনীশ্রেষ্ঠ।
কিন্তু কোন হিসাবে, কোন রণকৌশলে ব্যর্থতাকে পিছনে ফেলে সাফল্যের চূড়োয় পৌঁছলেন বিবেক? কোন পথে তাঁর এই উত্তরণ? ধনীশ্রেষ্ঠের তকমা পাওয়ার পর এই প্রশ্ন করা হয়েছিল বিবেককে। জবাবে তিনি জানিয়েছেন, তাঁর সবচেয়ে বড় রণকৌশল এই যে, কখনও কোনও কৌশল স্থির না করা। তাঁর মতে কোনও কৌশল না থাকাটাই তাঁর সবচেয়ে বড় কৌশল।