ইডেনে দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে খেলতে নেমে ৪৯তম সেঞ্চুরি করে সচিন তেন্ডুলকরের রেকর্ড ছুঁয়েছিলেন বিরাট। ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে নিউ জ়িল্যান্ডের বিরুদ্ধে সেমিফাইনাল খেলতে নেমে সেই রেকর্ডও ভেঙে দিয়েছেন তিনি।
নিউ জ়িল্যান্ডের বিরুদ্ধে সেমিফাইনালে এক দিনের ক্রিকেটে পঞ্চাশতম সেঞ্চুরিটি করে বিশ্বরেকর্ড গড়েছেন বিরাট। এই রেকর্ড আর কোনও ক্রিকেটারের নেই।
কিন্তু বিরাট যে এক দিন সচিনের সেঞ্চুরির রেকর্ড ঠিক ভাঙবেন, তা আগাম জানিয়েছিলেন এক ব্যক্তি। তিনি ছিলেন বিরাটেরই অনুরাগী। ছিলেন, কারণ তিনি নাকি আর বেঁচে নেই।
বিরাটের সেই অনুরাগীর নাম শিজু বালানন্দন। কেরলের বাসিন্দা। শিজু যখন সেই ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন, তখনও বিরাট ‘চারাগাছ’ থেকে ‘মহীরুহ’ হয়ে ওঠেননি।
২০১২ সালে ভারতের হয়ে শ্রীলঙ্কায় খেলতে গিয়েছিলেন বিরাট। ২১ জুলাই হাম্বানটোটায় শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে খেলতে নেমে এক দিনের ক্রিকেটে নিজের জীবনের ১২তম শতরানটি করেন তিনি। সেই ম্যাচে ১০৬ করে আউট হন বিরাট। ম্যাচও জেতে ভারত।
বিরাটের সেঞ্চুরি দেখে এর পর দিনই অর্থাৎ, ২২ জুলাই ফেসবুকে একটি পোস্ট করেন শিজু।
১১ বছর আগের সেই পোস্টে শিজু লিখেছিলেন, ‘‘সচিনের এক দিনের ক্রিকেটে সব থেকে বেশি সেঞ্চুরি করার রেকর্ড ভেঙে দেবে বিরাট।’’
এই পোস্ট করে অনেকের কটাক্ষের শিকার হন শিজু। ‘দুঃসাহস’ দেখানোর জন্য অনেকের বাঁকা কথাও শুনতে হয় তাঁকে।
তবে দমে যাননি শিজু। এর পর থেকে যখনই এক দিনের ক্রিকেটে বিরাট ছক্কা হাঁকাতেন, তখনই ওই পোস্টের নীচে তিনি ‘+১’ লিখে দিয়ে আসতেন।
২০১৮ সালের ১ ফেব্রুয়ারি দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে খেলতে নেমে এক দিনের ক্রিকেটে ৩৩তম সেঞ্চুরিটি করেছিলেন বিরাট। তার পর আবারও শিজু তাঁর সেই ফেসবুক পোস্টের তলায় কমেন্ট করে দিয়ে আসেন। সেটিই ছিল ওই পোস্টে শিজুর শেষ কমেন্ট। এর পর থেকে তিনি আর কোনও কমেন্ট করেননি।
বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী ২০১৮ সালেই মৃত্যু হয় শিজুর। বিরাট যে সচিনের রেকর্ড ভাঙলেন, তা চোখে দেখে যাওয়া হয়নি তাঁর।
তবে শিজুর মৃত্যুর পরও তাঁর ওই পোস্টে কমেন্ট পড়ত। এক দিনের ক্রিকেটে বিরাট সেঞ্চুরি করলেই তাঁর ওই পোস্টে নিয়ম করে কমেন্ট করতেন তাঁর বন্ধুরা।
বিশ্বকাপের ফাইনালে নিউ জ়িল্যান্ডের বিরুদ্ধে ৫০তম সেঞ্চুরিটি করার পর শিজুর ওই পোস্ট কমেন্টে ভরে যায়। শিজু সেই রেকর্ড দেখে যেতে পারেননি বলে তাঁর বন্ধুরা এসে দুঃখপ্রকাশও করে যান।
শিজুর পোস্ট সমাজমাধ্যমে ভাইরাল হওয়ার পরেই পুরো বিষয়টি নজরে আসে ক্রিকেটপ্রেমীদের। শিজুর সেই পোস্ট এখনও তাঁর ফেসবুকের পাতায় গেলে দেখতে পাওয়া যাবে।
প্রসঙ্গত, চলতি বিশ্বকাপে বিরাটের ব্যাটে রান আসছে। প্রায় প্রত্যেক ম্যাচে তিনি যেন অপ্রতিরোধ্য।
পরিসংখ্যান বলছে দেশের মাটিতে হোক, বা বিদেশে— এক দিনের ক্রিকেটে সব জায়গাতেই অপ্রতিরোধ্য বিরাট। কখনও কখনও এর ব্যতিক্রম হলেও তা ছিল ক্ষণস্থায়ী।
প্রসঙ্গত, ২০১৯ থেকে তিন বছরের খরা কাটিয়ে আবার ২০২২ থেকে সেঞ্চুরি আসতে শুরু করেছে বিরাটের ব্যাটে। ২০২২ সালের ডিসেম্বর থেকে সেমিফাইনালের দিন পর্যন্ত মোট ৭টি সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছেন বিরাট।