ছকেবাঁধা ‘চকোলেট হিরো’ বলা যাবে না। বরং তাঁর চোখেমুখে বা শরীরী ভাষায় জায়গা নিয়েছে আলগা রুক্ষতা। তা নিয়েই কাল্পনিক চরিত্রগুলি বিশ্বাসযোগ্য করে ফুটিয়ে তোলেন। এক চরিত্র থেকে অন্যটিতে যাতায়াতও করেন অনায়াস ভঙ্গিতে। পুঁজি বলতে, এটুকুই! বলিউডে পা দেওয়া ইস্তক এটুকু পুঁজি নিয়ে জহুরিদের নজর কাড়ছেন বিজয় বর্মা।
চিরাচরিত হিরোসুলভ না হলে কী হবে? অভিনেতা বিজয় বর্মার দক্ষতায় অনেকেই মুগ্ধ। সে তালিকায় ছিলেন প্রয়াত ইরফান খানও।
হাতে সে রকম কাজকর্ম না থাকলে ইরফানের ম্যানেজারি করতেন বিজয়। সেই ইরফান নাকি ইন্ডাস্ট্রির বহু জনকে বিজয়ের নাম সুপারিশ করেছিলেন। সে কথা পরে জানতে পেরেছিলেন বিজয়।
ইরফানের প্রতি তাঁর মুগ্ধতা প্রকাশ্যেই বহু বার জাহির করেছেন বিজয়। বলেছেন, ‘‘বলিউডে আমার কোনও গডফাদার নেই। তবে ইরফান খানকে দেখে মুগ্ধ হয়ে যাই। পর্দায় ওঁর ম্যাজিক অনবদ্য। পর্দায় কোথা থেকে এই আবেগ নিয়ে আসেন ইরফান, অভিনেতা হিসাবে তা খুঁজতে থাকি।’’
হায়দরাবাদের এক মধ্যবিত্ত মারোয়াড়ি পরিবারে বেড়ে ওঠা বিজয়ের চোখে শুধু অভিনয়ের স্বপ্ন ছিল। তা নিয়ে পুণের ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন ইনস্টিটিউট-এ ছুটে গিয়েছিলেন। তার আগে থিয়েটারেও নিজেকে শান দিয়েছেন ৩৫ বছরের বিজয়।
বলিউডে নয়া ঘরানার ফিল্ম বা ওয়েব সিরিজে বেশ তারিফ কুড়োচ্ছেন বিজয়। ‘মির্জাপুর’, ‘পিঙ্ক’, ‘মনসুন শ্যুটআউট’, ‘আ স্যুটেবল বয়’, ‘শি’ বা ‘ওকে কম্পিউটর’ অথবা ‘গাল্লি বয়’— বিজয়ের সাবলীল ছাপ সর্বত্র।
তাঁর গুণমুগ্ধদের মধ্যে রয়েছেন আলিয়া ভট্টও। যাঁর সঙ্গে ‘ডার্লিংস’-এ এ বার দেখা যাবে বিজয়কে। তাঁর নাম সুপারিশ করেছিলেন আলিয়াও। জশমীত কে রীনের পরিচালনায় শ্যুটিংয়ের পর তার পোস্ট প্রোডাকশন চলছে।
বলিউডের অনেকেই বলেন, ‘গাল্লি বয়’-তেই নাকি আলিয়ার চোখে পড়েছিলেন বিজয়। জোয়া আখতারের ওই ফিল্মের মইন আরিফকে দেখে অনেকেরই মনে হয়েছে, বিজয় সত্যিই মুম্বইয়ের বস্তিতে বেড়ে ওঠা ছেলে। জীবনযুদ্ধের ছাপ নিয়ে লড়াই করছেন। চরিত্রের ‘আলোআঁধারি’ সত্ত্বেও তাঁকে পছন্দ করতে শুরু করেন দর্শকেরা।
প্রযোজক হিসেবে নিজের প্রথম প্রজেক্টেই শেফালি শাহ, রোশন ম্যাথিউয়ের সঙ্গে বিজয়কেও বেছে নিয়েছেন আলিয়া। তাঁর পাশে রয়েছে শাহরুখ-গৌরী খানের প্রযোজনা সংস্থাও।
কেন নজর কাড়ছেন বিজয়? অনেকের মতে, নয়া ঘরানার বলিউডে নায়ক বা খলনায়কের বদলে চরিত্ররাই মুখ্য হয়ে উঠেছেন। তাতে চরিত্রকে বিশ্বাসযোগ্য ভাবে গড়ে তুলতে দক্ষতা দেখাচ্ছেন বিজয়। ঠিক যেমনটা করেছেন ইরফান খান, নওয়াজউদ্দিন সিদ্দিকি বা রাজকুমার রাওয়েরা।
খলনায়ক হলেও তিনি গব্বর সিং নন। ‘মোগাম্বো খুশ হুয়া’ বলেও মুচকি হাসেন না। বরং আশপাশের ঘরের ছেলের মতো মাথা খাটিয়ে ‘দুষ্টু’ কাজ করেন। অনেকের মতে, বিজয়ের মতো অভিনেতারাই বলিউডের ‘হিরো’দের দিকেই চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছেন।
শুধুমাত্র পর্দায় নয়, বাস্তবেও বেশ ‘রিয়েল’ বিজয়। ইনস্টাগ্রামে তাঁর স্টোরি বা ছবিগুলি থেকেই নাকি তা স্পষ্ট। রোজগারের টাকায় প্রথম গাড়ি কিনলে তা ইনস্টা-য় ফলাও করে বলেছেন বটে। তবে তাতে নাকি আর পাঁচটা তারকার মতো হামবড়াই ভাব নেই।
তিনি ‘খলনায়ক’। তবে পর্দায় তাঁর উপর ভরসা করা যায়। এমনও বলতে শুরু করেছেন অনেকেই। ‘গাল্লি বয়’-এর মইন কি এ বার বলবেন, ‘‘আপনা টাইম আ গয়া!’’