অ্যাপেক্স আর সিয়ান। ৩২ তলা আর ৩০ তলা। নয়ডার এই বেআইনি যমজ অট্টালিকার রন্ধ্রে রন্ধ্রে ৩৫০০ কেজিরও বেশি বিস্ফোরক গুঁজে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে রবিবার। নিরাপদে এই ধ্বংসলীলার নেপথ্যে যিনি, তাঁর নাম উৎকর্ষ মেহতা। তাঁর দায়িত্ব নিয়ে ১১ সেকেন্ডে ধ্বংস করেছে জোড়া ইমারত।
‘বোমা লাগাও আর ওড়াও’, কাজটা কিন্তু এতটাও সহজ ছিল না। জানিয়েছেন উৎকর্ষ। শল্য চিকিৎসকের মতোই তাঁর কাজ, সে কথাও মনে করিয়ে দিয়েছেন তিনি।
২০১২ সালে নিজের সংস্থা প্রতিষ্ঠা করেন উৎকর্ষ। সঙ্গে ছিলেন আর এক অংশীদার জিগর ছেদা।
নয়ডার যমজ অট্টালিকা ধ্বংসে তাঁদের সহায়তা করেছে দক্ষিণ আফ্রিকার একটি সংস্থা। এই সংস্থাও উৎকর্ষের সংস্থার অংশীদার।
উৎকর্ষের সংস্থার কাজটা আসলে কী? কারখানা, বাঁধ, স্টেডিয়াম, বহুতল ভাঙাই এদের কাজ। কিন্তু তা বলে নিজেকে ‘ধ্বংসকারী মানব’ ভাবতে রাজি নন তিনি। তাঁর কথায়, ‘‘ধ্বংস হল নেতিবাচক বিষয়। সে কারণে আমার সংস্থার নামের অর্থও অট্টালিকা।
উৎকর্ষ বুঝিয়ে বলেন, ‘‘আমরা ইমারত ধ্বংস করলেও তা করি গঠনমূলক কারণে। তাই এই কাজ নেতিবাচক হতে পারে না।’’ তাঁর কথায়, ‘‘কাজটা রোহিত শেট্টির ছবির মতোও নয়, যেখানে এক গুচ্ছ গাড়ি আর বহুতল উড়ে গেল। এই কাজ কিন্তু অনেক কঠিন।’’
নয়ডার যমজ অট্টালিকার আগে ২০২০ সালে কোচিনের একটি ১৯ তলা বহুতল গুঁড়িয়ে দিয়েছিল উৎকর্ষের সংস্থা। তবে প্রত্যেকটা কাজই তাঁর কাছে সমান গুরুত্বপূর্ণ। তাঁর কথায়, ‘‘প্রত্যেকটা কাজ খুব সূক্ষ্ম ভাবে করতে হয়। দেখতে হয় ধ্বংসের সময় যেন ন্যূনতম ক্ষতি হয়।’’
মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করেছেন উৎকর্ষ। বাবার যন্ত্রাংশের ব্যবসা ছিল। কিন্তু সে দিকে কোনও আগ্রহ ছিল না তাঁর। ছোট থেকে ইচ্ছা ছিল ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার। বরাবর অনুপ্রেরণা দিয়ে গিয়েছেন পেশায় স্কুল শিক্ষিকা মা। চেয়েছিলেন, ছেলে যা চায়, তা নিয়েই পড়াশোনা করুক।
ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করে সকলে যখন গড়ার দিকে এগিয়েছেন, উৎকর্ষ কেন এই ভাঙার খেলায়? উৎকর্ষের কথায়, ‘‘আমি গুজরাতি। আমি জানি, টাকা আর সুযোগ কোথায়।’’
২০১২ সালে সংস্থা প্রতিষ্ঠার পর জোর ধাক্কা খেয়েছিলেন উৎকর্ষ। প্রথম বছর ৫০ লক্ষ টাকা ক্ষতি হয়েছিল। তবে তিনি হাল ছাড়েননি। ধীরে ধীরে লোকমুখেই প্রচার হয়েছিল তাঁর সংস্থার কথা। ‘ধ্বংস’ করতে সংস্থা! প্রথমে সকলে বেশ অবাক হয়েছিলেন। পরে একের পর এক বরাত পেতে থাকেন উৎকর্ষ।
গত ১০ বছরে একের পর এক চ্যালেঞ্জিং কাজ করেছে উৎকর্ষের সংস্থা। পটনায় ১১ কিলোমিটার দীর্ঘ সেতু ভেঙেছে। তার পর তেলঙ্গানার সচিবালয়, পুরনো মোতেরা স্টেডিয়াম ভেঙে দিয়েছেন উৎকর্ষরা। এখন সংস্থার মূলধন ১৫০ কোটি টাকা।
নয়ডার যমজ ইমারত ভাঙার কাজ উৎকর্ষের সংস্থা শুরু করেছিল ফেব্রুয়ারি থেকে। দক্ষিণ আফ্রিকার জোসেফ রবার্ট ব্রিঙ্কম্যান, তাঁর দল এবং সংস্থার কর্মীরা ছ’মাস আগে থেকে শুরু করেছিলেন মাপের কাজ।
পাশাপাশি নজরে রাখা হয়েছিল বায়ুপ্রবাহের দিক, গতি, ভূকম্পনের মাত্রা।
জোড়া ইমারতে ৯,৪০০টি গর্তে ৩,৫০০ কোজিরও বেশি বিস্ফোরক ভরা হয়েছিল। আর এই কাজটা করেছিলেন ৩০০ কর্মী।
একের পর এক ধ্বংস দেখে খারাপ লাগে না? প্রশ্নের জবাবে উৎকর্ষের জবাব, ‘‘ধ্বংস ছাড়া তো সৃষ্টি হয় না।’’