পরিবারের সদস্যদের ডিএনএ পরীক্ষার জন্য শখ করে একটি টেস্ট কিট এনেছিলেন বাবা। তবে সেই পরীক্ষার ফল প্রকাশ্যে আসতেই চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত হলেন আমেরিকার এক কর্পোরেট সংস্থায় কর্মরত তরুণী।
কেন এমন হল? এ নিয়ে ওই তরুণীকে কোনও যুক্তিগ্রাহ্য কারণ জানাতে পারেনি তাঁর সংস্থা। তরুণীর দাবি, সংস্থার চিফ এগ্জ়িকিউটিভ অফিসার (সিইও)-এর সঙ্গে তাঁর জিনগত সম্পর্কের কথা জানাজানি হতেই চাকরি খুইয়েছেন তিনি।
সমাজমাধ্যমে হইচই ফেলে দিয়েছে এই তরুণীর কাহিনি। ভাইরাল হওয়া সে কাহিনিই ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ‘দ্য মিরর’-এর কাছে জানিয়েছেন ওই কর্মী। তবে এ নিয়ে প্রকাশ্যে মন্তব্য করেননি তাঁর সংস্থা কর্তৃপক্ষ।
দেশ-বিদেশের বহু সংবাদমাধ্যমে এ কাহিনি নিয়ে শোরগোল হলেও ওই তরুণী এবং তাঁর সংস্থার নামধাম গোপন রাখা হয়েছে। ‘রেডিট’ নামে আমেরিকার এক ওয়েবসাইটে ওই তরুণী বলেন, ‘‘আমার বাবা এমন মানুষ নন যে সকলকে ডিএনএ টেস্ট কিট কিনে দেন যাতে বোঝা যায়, তাঁর একটি সন্তান রয়েছে।’’
ডিএনএ পরীক্ষার পর জানা গিয়েছে, ওই তরুণীর সংস্থার সিইও সম্পর্কে তাঁর সৎভাই। ‘রেডিট’-এর কাছে তরুণীর মন্তব্য, ‘‘আমার মনে হয়, বাবা জানতেনই না যে তাঁর আরও এক সন্তান রয়েছে।’’
তরুণীর কথায়, ‘‘আমরা সকলেই প্রাপ্তমনস্ক। তবে কখনও এমন কিছু ঘটে যায়, যা পুরোপুরি অপ্রত্যাশিত। ফলে আমার মনে হয়, এই ঘটনায় সকলেই হতবাক!’’
সংবাদমাধ্যমের কাছে তরুণী জানিয়েছেন, তাঁর মায়ের সঙ্গে বিয়ে হওয়ার বছর দশেক আগে টেক্সাসে বসবাস করতেন বাবা। এবং তাঁর সংস্থার সিইও-ও সে সময় আমেরিকার ওই রাজ্যে থাকতেন। ফলে ডিএনএ পরীক্ষার ফল নিয়ে সন্দেহের অবকাশ ছিল না।
তরুণীর দাবি, ডিএনএ পরীক্ষার ফল প্রকাশ্যে আসার পরের সপ্তাহেই স্বজনপোষণের উপর একটি প্রশিক্ষণ শিবিরে পাঠানো হয়েছিল তাঁকে। তা নিয়ে গোড়ায় খটকা না লাগলেও পরে তিনি জানতে পারেন, ওই শিবিরে অফিসে থেকে অন্য কাউকে পাঠানো হয়নি।
অফিসের তরফে ওই কোর্সে একটি নয়া নিয়মও যুক্ত করা হয়েছিল। তাতে লেখা ছিল, ‘‘ম্যানেজ়মেন্টের কোনও কর্তার সঙ্গে জিনগত বা অন্যান্য পরিচিতি থাকলে পেশাগত সুযোগসুবিধা পাবেন না অফিসের কর্মীরা।’’
কেবলমাত্র তাঁকেই কেন ওই প্রশিক্ষণ নিতে বলা হয়েছিল? এর জবাব না পেলেও কিছু দিন পরে আরও আশ্চর্যজনক ঘটনার সম্মুখীন হন বলে দাবি তরুণীর।
অফিসের সার্ভার থেকে তরুণীর কাজকর্মের ফাইলপত্র মুছে ফেলা হয়। এর নেপথ্যে অফিসের কারও অন্তর্ঘাত রয়েছে বলে দাবি করেন তরুণী। তাঁর কথায়, ‘‘দূরে থেকেই অন্য কেউ ওই সার্ভারে ঢুকে ফাইলপত্র সরিয়ে ফেলছিলেন।’’
গোটা বিষয়টি অফিস ম্যানেজারকে জানিয়েছিলেন তরুণী। তাঁর পরামর্শ মেনে একটি এক্সটার্নাল হার্ডড্রাইভে নিজের কাজকর্মের ফাইল জমা রাখতে শুরু করেছিলেন। তবে তা সত্ত্বেও কর্মক্ষেত্রে বেকায়দায় পড়েন তরুণী।
আচমকাই এক দিন তরুণীর বাবার সঙ্গে যোগাযোগ করেন তাঁর সংস্থার সিইও-র মা। ওই মহিলার দাবি, তরুণীর বাবা-ই তাঁর সন্তানের জনক।
ওই মহিলার সঙ্গে প্রেমের অথবা শারীরিক সম্পর্ক ছিল না তরুণীর বাবার। তবে কী ভাবে এ সম্ভব হয়? তরুণীর কথায়, ‘‘বহু বছর আগে শুক্রাণু দান করাতে বাবাকে বাধ্য করিয়েছিলেন এক সন্তানহীন দম্পতি।’’
তরুণীর দাবি নিয়ে প্রশ্ন উঠলেও তাঁর মন্তব্য, ‘‘বাবার প্রতি পুরো আস্থা রয়েছে আমাদের।’’ যদিও তরুণীর দাবি, মহিলার সঙ্গে বাবার কথাবার্তার পরেই তাঁকে এক সপ্তাহের জন্য সাময়িক ভাবে বরখাস্ত করা হয়েছিল। এর নেপথ্যে যে ওই সিইও-র হাত রয়েছে, সে অভিযোগ করেছেন তিনি।
কী কারণে এই ‘শাস্তি’, তা নিয়ে কারণ জানাতে পারেনি তরুণীর সংস্থা। তবে ‘শাস্তি’র মেয়াদ কাটিয়ে আর কাজে ফিরে যাননি তিনি। আপাতত ফ্রিল্যান্স কাজ করছেন তরুণী।