US Hypersonic Aircraft

গতির ঝড় তুলে পলক ফেলার আগেই গন্তব্যে! ‘শব্দভেদী’ যাত্রিবাহী বিমান বানাচ্ছে আমেরিকা

হাইপারসোনিক যাত্রিবাহী বিমান তৈরির পথে কয়েক ধাপ এগিয়ে গিয়েছে মার্কিন স্টার্ট আপ সংস্থা ‘হার্মিয়াস’। উড়োজাহাজটির প্রোটোটাইপের সফল পরীক্ষা চালিয়েছে সংশ্লিষ্ট কোম্পানি।

Advertisement
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ২৮ মার্চ ২০২৫ ১০:৩৩
Share:
০১ ১৯
US Hypersonic Aircraft

পলক ফেলার আগেই গন্তব্যে পৌঁছে যাবে বিমান। এ বার তেমনই যাত্রিবাহী উড়োজাহাজ তৈরি করে যোগাযোগ ব্যবস্থায় বিপ্লব আনতে চলেছে মার্কিন স্টার্ট আপ সংস্থা ‘হার্মিয়াস’। এই কাজে বেশ অনেকটা এগিয়েছে সংস্থা। প্রকল্প সফল হলে যুক্তরাষ্ট্রের বিখ্যাত প্রতিরক্ষা সংস্থা ‘লকহিড মার্টিন’কে পিছনে ফেলা যাবে বলে দাবি করেছে তারা।

০২ ১৯
US Hypersonic Aircraft

চলতি বছরের জানুয়ারিতে আমেরিকার এডওয়ার্ড বায়ুসেনা ঘাঁটিতে হাইপারসোনিক (শব্দের চেয়ে পাঁচ গুণ গতি সম্পন্ন) যাত্রিবাহী বিমানের পরীক্ষা চালায় ‘হার্মিয়াস’। মার্কিন স্টার্ট আপ সংস্থাটির দাবি, এতে ১০০ শতাংশ সাফল্য পেয়েছেন তাঁরা। এর জন্য ‘কোয়ার্টারহর্স এমকে ১’ নামের উড়োজাহাজটির একটি প্রোটোটাইপ তৈরি করেছে সংশ্লিষ্ট কোম্পানি।

Advertisement
০৩ ১৯
US Hypersonic Aircraft

কেন এই পরীক্ষাকে মাইলফলক বলে দাবি করছে ‘হার্মিয়াস’? প্রাথমিক সাফল্যের পর এর ব্যাখ্যা দিয়েছেন মার্কিন স্টার্ট আপ সংস্থাটির সহ-প্রতিষ্ঠাতা তথা সিইও এজ়ে পিপলিকা। তাঁর কথায়, ‘‘এত দিন হাইপারসোনিক শব্দটি শুধুমাত্র প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে ব্যবহার হয়েছে। উচ্চ গতির ক্ষেপণাস্ত্র বা যুদ্ধবিমানের সঙ্গে এটি মিশে ছিল। আমরা সেখান থেকে একে আমজনতার হাতের মুঠোয় আনার স্বপ্ন দেখা শুরু করেছি।’’

০৪ ১৯

তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হল, মাত্র ২০৪ দিনের মধ্যে হাইপারসোনিক যাত্রিবাহী বিমানের নকশা তৈরি করেছে ‘হার্মিয়াস’। উচ্চ গতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রাখতে একে কিছুটা ইংরেজি ‘ইউ’ অক্ষরের মতো করে বানিয়েছেন তাঁরা। তবে ‘কোয়ার্টারহর্স’-এর আরও পরীক্ষামূলক উড়ানের প্রয়োজন রয়েছে। দ্রুত সেই অনুমতি পেতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রশাসনের কাছে আর্জি জানিয়েছে নির্মাণকারী স্টার্ট আপ।

০৫ ১৯

এডোয়ার্ড বায়ুসেনা ঘাঁটিতে শুধুমাত্র ট্যাক্সি টেস্টের অনুমতি পেয়েছিল ‘হার্মিয়াস’। এই পরীক্ষায় ‘কোয়ার্টারহর্স’ নির্ধারিত গতি নিতে পেরেছে বলে জানা গিয়েছে। তবে একে পুরোপুরি যাত্রিবাহী উড়োজাহাজে পরিণত করার ক্ষেত্রে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল বিমানের অবতরণ।

০৬ ১৯

‘হার্মিয়াস’-এর সভাপতি স্কাইলার শুফোর্ড জানিয়েছেন, ‘কোয়ার্টারহর্স’ যে ভাবে গতি নিতে পেরেছে, তাতে মাটি ছেড়ে আকাশে ওঠার সময় সমস্যা হবে না। কিন্তু, অবতরণের সময়ে উচ্চ গতির কারণে ঘর্ষণে দুর্ঘটনার আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। আর তাই প্রয়োজনে এর নকশায় কিছু বদল আনতে পারে সংশ্লিষ্ট মার্কিন স্টার্ট আপ সংস্থা।

০৭ ১৯

দ্বিতীয়ত, যাত্রিবাহী বিমানে ‘কোয়ার্টারহর্স’কে বদলাতে গেলে এর মালবহন ক্ষমতা পরীক্ষা করতে হবে। উড়োজাহাজটির এই প্রোটোটাইপে সেটা সম্ভব নয়। আর তাই আটলান্টার কারখানায় এর দ্বিতীয় সংস্করণ নির্মাণের কাজ শুরু করেছে ‘হার্মিয়াস’। এ বছরের মাঝামাঝি সেই কাজ শেষ হবে বলে আশাবাদী সংস্থার কর্তারা।

০৮ ১৯

শুফোর্ড বলেছেন, ‘‘জানুয়ারির পরীক্ষায় সাফল্য পাওয়ার পর আমাদের দল বাড়তি অক্সিজ়েন পেয়েছে। টিমের প্রত্যেক সদস্যই আত্মবিশ্বাসে ভরপুর। আর তাই ফি বছর একটা করে এই ধরনের হাইপারসোনিক বিমান তৈরির চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করতে তাঁরা প্রস্তুত।’’

০৯ ১৯

এই প্রকল্পে ‘হার্মিয়াস’-এর কোনও প্রতিদ্বন্দ্বী নেই, তা ভাবলে ভুল হবে। গত বছর একই ধরনের বিমান তৈরির কথা ঘোষণা করে আর একটি স্টার্ট আপ ‘ভেনাস অ্যারোস্পেস’। ২০২৫ সালে সংশ্লিষ্ট উড়োজাহাজের পরীক্ষা হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু, এখনও তা সম্পন্ন হয়নি। ফলে ‘ভেনাস’কে এ ব্যাপারে যে ‘হার্মিয়াস’ কিছুটা টেক্কা দিল, তা বলাই যায়।

১০ ১৯

স্টার্ট আপ সংস্থা ‘ভেনাস অ্যারোস্পেস’ অবশ্য দাবি করেছে, শব্দের ছ’গুণ বেশি গতিতে ছুটতে পারবে তাঁদের হাইপারসোনিক বিমান। এর গতিবেগ দাঁড়াবে ঘণ্টায় ৩,৬০০ কিলোমিটার। ফলে মাত্র এক ঘণ্টার মধ্যে লন্ডন থেকে আটলান্টিক পেরিয়ে নিউ ইয়র্ক শহরে পৌঁছে যাবে ওই উড়োজাহাজ।

১১ ১৯

অন্য দিকে ২০৩০ সালের মধ্যে বিশ্বের দ্রুততম লড়াকু জেট উড়িয়ে গোটা দুনিয়াকে চমকে দিতে চাইছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। আমেরিকার বিখ্যাত প্রতিরক্ষা সংস্থা ‘লকহিড মার্টিন’ তৈরি করছে ওই যুদ্ধবিমান। এর পোশাকি নাম রাখা হয়েছে ‘এসআর-৭২ ডার্কস্টার’।

১২ ১৯

২০২২ সাল থেকে হাইপারসোনিক যুদ্ধবিমান তৈরির চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন মার্কিন প্রতিরক্ষা গবেষকেরা। সূত্রের খবর, এতে ইতিমধ্যেই খরচ হয়ে গিয়েছে ৩৩.৫০ কোটি ডলার। গত বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে প্রকল্পটি চালিয়ে যেতে আরও সাড়ে চার কোটি ডলার বরাদ্দ করে যুক্তরাষ্ট্রের সরকার।

১৩ ১৯

‘লকহিড মার্টিন’ সূত্রে খবর, ‘এসআর-৭২ ডার্কস্টার’-এর সর্বোচ্চ গতিবেগ দাঁড়াবে ঘণ্টায় ৬,৪৩৭ কিলোমিটার। একে পৃথিবীর দ্রুততম লড়াকু জেট হিসাবে তৈরি করার পণ করেছে সংশ্লিষ্ট প্রতিরক্ষা কোম্পানি। তবে সে ক্ষেত্রে দু’জায়গায় চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছেন মার্কিন প্রতিরক্ষা গবেষকেরা।

১৪ ১৯

প্রথমত, গতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ‘এসআর-৭২ ডার্কস্টার’ নকশা তৈরিতে সমস্যা হচ্ছে। দ্বিতীয়ত, লড়াকু জেটটি থেকে হাইপারসোনিক ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ার ব্যাপারে প্রযুক্তিগত সমস্যা হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। আর তাই এর নির্মাণকাজে সময় লাগছে বলে জানা গিয়েছে।

১৫ ১৯

গত শতাব্দীর ৬০-এর দশকে ‘এসআর-৭১ ব্ল্যাকবার্ড’ নামের একটি যুদ্ধবিমান তৈরি করে ‘লকহিড মার্টিন’। এখনও পর্যন্ত এটি বিশ্বের দ্রুততম লড়াকু জেটের স্বীকৃতি পেয়ে এসেছে। ১৯৭৪ সালে ৮৫ হাজার ফুট উচ্চতায় ওড়ার সময়ে এর গতিবেগ ছিল ৩.২ ম্যাক (পড়ুন শব্দের ৩.২ গুণ বেশি)। ১৯৯৮ সালে মার্কিন বায়ুসেনা থেকে অবসর নেয় তাঁদের আদরের ‘কালোপাখি’।

১৬ ১৯

‘এসআর-৭১’কে মূলত গুপ্তচর বিমান হিসাবে ব্যবহার করত আমেরিকার বায়ুসেনা। ‘স্নায়ু যুদ্ধ’র সময়ে সোভিয়েত রাশিয়ার উপর নজরদারি চালাতে ওয়াশিংটনের ভরসা ছিল ‘কালোপাখি’। কিন্তু পরবর্তী কালে কৃত্রিম উপগ্রহভিত্তিক গুপ্তচরবৃত্তি শুরু হলে ধীরে ধীরে এর ফুরিয়ে যায় প্রয়োজনীয়তা।

১৭ ১৯

সাউথ চায়না মর্নিং পোস্টের প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত বছর গোবি মরুভূমিতে হাইপারসোনিক বিমানের একটি প্রটোটাইপ পরীক্ষা করে চিন। উড়োজাহাজটির গতিবেগ শব্দের চেয়ে ছ’গুণ বেশি ছিল বলে দাবি করেছে বেজিং। অর্থাৎ, মাত্র দু’ঘণ্টার মধ্যে ড্রাগনভূমি থেকে ১,১০০ কিলোমিটার পাড়ি দিয়ে সেটি নিউ ইয়র্ক পৌঁছে যাবে বলে জানা গিয়েছে।

১৮ ১৯

চিনের তৈরি হাইপারসোনিক বিমানটির উদ্দেশ্য স্পষ্ট নয়। এটি যাত্রী পরিবহণ না কি যুদ্ধের কাজে ড্রাগন ফৌজ ব্যবহার করবে, তা জানা যায়নি। দ্য ইউরেশিয়ান টাইমস জানিয়েছে, আমেরিকার সঙ্গে সম্পর্ক খারাপ হওয়ায় লড়াকু জেটের জন্য হাইপারসোনিক ইঞ্জিন তৈরিতে মনোনিবেশ করেছেন বেজিঙের প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞেরা।

১৯ ১৯

এই পরিস্থিতিতে বিশ্বের দ্রুততম বিমানের প্রোটোটাইপের পরীক্ষা চালিয়ে মার্কিন প্রশাসনকে কিছুটা স্বস্তি দিয়েছে ‘হার্মিয়াস’। এতে সাফল্য মেলায় যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা সংস্থাগুলি প্রয়োজনে লড়াকু জেটের জন্য ‘কোয়ার্টারহর্স’-এর ইঞ্জিন ব্যবহারের কথা চিন্তাভাবনা করতে পারবে। আকাশ দখলের লড়াইয়ে চিনকে হারাতে ওয়াশিংটন সেই পথে হাঁটে কি না, সেটাই এখন দেখার।

সব ছবি: সংগৃহীত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on:
আরও গ্যালারি
Advertisement