Trump's Reciprocal Tariffs By Country

চৈত্র সেলের কায়দায় পারস্পরিক শুল্কে ছাড়! কোন দেশের উপর কত কর? ‘বন্ধু’ ভারতকে দিতে হবে কত?

চৈত্র সেলের কায়দায় মেগা ছাড়ের ঘোষণা-সহ পারস্পরিক শুল্কনীতি চালু করলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। নতুন নিয়মে পাকিস্তান, বাংলাদেশ বা শ্রীলঙ্কার চেয়ে ভারতীয় পণ্যে কম কর নেবে যুক্তরাষ্ট্র।

Advertisement
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ০৩ এপ্রিল ২০২৫ ১০:০৪
Share:
০১ ২০

অবশেষে পারস্পরিক শুল্ক (রেসিপ্রোকাল ট্যারিফ) নীতি ঘোষণা করলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। সেখানে প্রতিটা দেশকে কিছুটা ছাড় দেওয়া হয়েছে বলে দাবি করেছেন তিনি। তাই একে ‘ছাড়যুক্ত পারস্পরিক শুল্ক’ বলে উল্লেখ করেছেন এই বর্ষীয়ান রিপাবলিকান নেতা। নতুন নিয়ম চালু করার ক্ষেত্রে আলাদা করে ভারতের কথা বলতে শোনা গিয়েছে তাঁকে, যা অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছেন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞেরা।

০২ ২০

‘ছাড়যুক্ত পারস্পরিক শুল্ক’ নীতি মেনে ট্রাম্প প্রশাসন নয়াদিল্লির পণ্যের উপর ২৬ শতাংশ কর চাপানোর কথা ঘোষণা করেছে। মার্কিন প্রেসিডেন্টের দাবি, ভারত ও চিন আমেরিকার পণ্যে যতটা শুল্ক নিয়ে থাকে ওয়াশিংটন নেবে, তার অর্ধেক। এই দুই দেশের পণ্যের উপর শুল্কের ক্ষেত্রে ২৬ এবং ৩৪ শতাংশ ছাড় দেবে যুক্তরাষ্ট্র।

Advertisement
০৩ ২০

নতুন নিয়ম চালু করার মুহূর্তে ট্রাম্প বলেন, ‘‘দিল্লির নীতি খুবই কঠিন। কিছু দিন আগে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এখানে এসেছিলেন। তিনি আমার দুর্দান্ত বন্ধু। আমি তাঁকে বলি, বন্ধু হওয়া সত্ত্বেও আপনি আমাদের সঙ্গে সঠিক ব্যবহার করছেন না। মার্কিন পণ্যের উপর ভারত ৫২ শতাংশ শুল্ক নিয়ে থাকে। আমরা সেখানে ২৬ শতাংশ নেব, যা এক কথায় অর্ধেক।’’

০৪ ২০

চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে প্রথম বার পারস্পরিক শুল্কনীতি চালু করার কথা বলেন ট্রাম্প। এর পর মার্কিন পার্লামেন্ট ‘কংগ্রেস’-এ ভাষণ দেওয়ার সময়ে ২ এপ্রিল থেকে সেটি চালু করা হবে বলে জানিয়ে দেন তিনি। সেই লক্ষ্যে কাজ শুরু করে দেয় তাঁর প্রশাসন। কিন্তু বাস্তবে সরাসরি পারস্পরিক শুল্ক চালু না করে ছাড়যুক্ত পারস্পরিক শুল্ক চালু করল যুক্তরাষ্ট্র। ভারত-সহ সমস্ত দেশের শুল্ক এবং তার ছাড়ের তালিকা অবশ্য ইতিমধ্যেই প্রকাশ করেছে ওয়াশিংটন।

০৫ ২০

মার্কিন পণ্যে চিন ৬৭ শতাংশ শুল্ক নিয়ে থাকে। সেখানে আমেরিকা বেজিঙের সামগ্রীর উপর ছাড় দিয়ে নেবে ৩৪ শতাংশ শুল্ক। যুক্তরাষ্ট্রের মূল তিনটি বাণিজ্যিক সহযোগী দেশ হল ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ), ব্রিটেন এবং জাপান। তাঁদের ক্ষেত্রে ছাড়যুক্ত পারস্পরিক শুল্ক দাঁড়াচ্ছে যথাক্রমে ২০ শতাংশ, ১০ শতাংশ এবং ২৪ শতাংশ।

০৬ ২০

ওয়াশিংটন জানিয়েছেন, এই শুল্কগুলি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আমদানি করা সমস্ত পণ্যের উপর ১০ শতাংশ বেস করের অতিরিক্ত হিসাবে ধার্য করা হয়েছে। তবে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প আলাদা আলাদা শিল্পের ক্ষেত্রে কী ভাবে ছাড়যুক্ত পারস্পরিক শুল্ক নীতি কার্যকর করবেন, তা স্পষ্ট করেননি।

০৭ ২০

ভারতের পাশাপাশি বাংলাদেশি পণ্যের উপর ৭৪ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে মার্কিন প্রশাসন। এ ক্ষেত্রে ছাড় দিয়ে ওয়াশিংটন নেবে ৩৭ শতাংশ শুল্ক। পাকিস্তানের পণ্যের উপরেও শুল্ক ভারতের চেয়ে বেশি। ইসলামাবাদের ক্ষেত্রে শুল্ক ৫৮ শতাংশ, যেটা ছাড় দিয়ে দাঁড়াচ্ছে ২৯ শতাংশ। একই ভাবে নতুন নিয়মে শ্রীলঙ্কার পণ্যে ৪৪ শতাংশ শুল্ক নেবে যুক্তরাষ্ট্রের সরকার।

০৮ ২০

ব্রিটেনকে বাদ দিলে ব্রাজিল, সিঙ্গাপুর, চিলি, অস্ট্রেলিয়া, তুরস্ক ও কলম্বিয়া— এই ছ’টি দেশের ক্ষেত্রেও ছাড়যুক্ত পারস্পরিক শুল্ক ১০ শতাংশ ধার্য করেছে ট্রাম্প প্রশাসন, যা সর্বনিম্ন। আমেরিকার ‘অভিন্নহৃদয় বন্ধু’ ইজ়রায়েলের ক্ষেত্রে ছাড় দিয়ে শুল্ক দাঁড়িয়েছে ১৭ শতাংশ। সম পরিমাণ শুল্ক দিতে হবে ফিলিপিন্সকেও। তাইওয়ান এবং ভিয়েতনামের ক্ষেত্রে এটি যথাক্রমে ৪৬ ও ৩২ শতাংশ।

০৯ ২০

দক্ষিণ কোরিয়া, তাইল্যান্ড এবং সুইৎজ়ারল্যান্ড থেকে আসা পণ্যের উপর নতুন নিয়মে ২৫, ৩৬ এবং ৩১ শতাংশ শুল্ক নেবে আমেরিকা। ৩২ শতাংশ শুল্ক দিতে হবে ইন্দোনেশিয়াকে। মালয়েশিয়া ও কম্বোডিয়ার পণ্যে ট্রাম্প প্রশাসন নেবে ২৪ ও ৪৯ শতাংশ শুল্ক। কম্বোডিয়ার ক্ষেত্রেই শুল্কের হার সর্বাধিক বলে জানা গিয়েছে।

১০ ২০

ওয়াশিংটনের ঐতিহ্যশালী ‘শ্বেত প্রাসাদ’-এর (পড়ুন হোয়াইট হাউস) গোলাপ বাগানে নতুন শুল্কনীতি ঘোষণা করেন ট্রাম্প। এটি চালু করার সময়ে তিনি বলেন, ‘‘অনেক দিক ধরে অন্যান্য দেশ আমাদের দুর্বল নিয়মকানুনের সুযোগ নিয়ে আমেরিকাকে লুট করে চলেছে। কিন্তু আর নয়। ২ এপ্রিল চিরকাল মুক্তি দিবস হিসাবে পরিচিত হয়ে থাকবে। আমরা এখন সেই দেশগুলির উপর পারস্পরিক শুল্ক আরোপ করব।’’

১১ ২০

ট্রাম্পের এই ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে চিৎকারে গোটা এলাকা ফেটে পড়ে। ‘‘এর মাধ্যমে আমরা চাকরি, শিল্প এবং ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসাগুলিকে পুনরুজ্জীবিত করে তুলব। আমেরিকাকে ফের ধনী করাই আমাদের লক্ষ্য। এ দেশে ফের চাকরির জোয়ার আসবে’’— ছাড়যুক্ত শুল্কনীতি ঘোষণার সময়ে বলেন ট্রাম্প।

১২ ২০

আমেরিকার অর্থনীতিবিদ ব্রায়ান কুলটন বলেন, “মার্কিন বাণিজ্যনীতিতে শুল্ক সংক্রান্ত এই পরিবর্তন দ্রুত কার্যকর হবে। যেখানে বিশ্বব্যাপী আর্থিক বৃদ্ধির হার ২.৬ শতাংশ থেকে কমে ২.৩ শতাংশ হয়েছে, সেখানে আমেরিকার মূল্যবৃদ্ধির হার কমেছে ১.৫ শতাংশ।”

১৩ ২০

সিটি রিসার্চের অনুমান, ট্রাম্প ‘পারস্পরিক শুল্ক’ নীতিতে ভারতের সম্ভাব্য বার্ষিক লোকসানের পরিমাণ দাঁড়াবে ৭০০ কোটি ডলার। সবচেয়ে ক্ষতি হতে পারে গাড়ি নির্মাণকারী সংস্থা এবং কৃষিক্ষেত্রে। আর সেটা অনুমান করে হাত গুটিয়ে বসে নেই নয়াদিল্লি। শুল্কের হিসাব কী ভাবে মার্কিন প্রশাসন করবে, সেই সংক্রান্ত সরকারি নির্দেশিকার অপেক্ষায় রয়েছে নরেন্দ্র মোদী সরকার। সূত্রের খবর, সেই অনুযায়ী লোকসান এড়াতে পরবর্তী পদক্ষেপ করবে কেন্দ্র।

১৪ ২০

সমীক্ষকেরা জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্রের নতুন শুল্কনীতিতে ঝুঁকির মুখে পড়তে পারে রাসায়নিক, সংকর ধাতুর তৈরি পণ্য, অলঙ্কার, ওষুধ, গাড়ি এবং খাদ্যপণ্য। সরকারি তথ্য অনুযায়ী, গত বছর যুক্তরাষ্ট্রে ৭,৪০০ কোটি ডলারের পণ্য রফতানি করে ভারত। এর মধ্যে মুক্তা, অন্য রত্ন এবং গয়নাই ছিল ৮৫০ কোটি ডলারের।

১৫ ২০

এ ছাড়া গত বছর ৮০০ কোটি ডলারের ওষুধ এবং ৪০০ কোটি ডলারের পেট্রোপণ্য আমেরিকায় রফতানি করে একাধিক ভারতীয় সংস্থা। ২০২৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রের থেকে আমদানি করা পণ্যের উপর ১১ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছিল নয়াদিল্লি। এই অঙ্ক ছিল ভারতীয় পণ্যের উপর মার্কিন শুল্কের চেয়ে প্রায় ৮.২ শতাংশ বেশি।

১৬ ২০

অন্য দিকে, গত বছর ৪,২০০ কোটি ডলার মূল্যের সামগ্রী আমেরিকা থেকে আমদানি করেছিল ভারত। এর মধ্যে কারুশিল্পজাত পণ্য এবং যন্ত্রপাতির উপর সাত শতাংশ, জুতো এবং পরিবহণ সরঞ্জামের উপর ১৫ থেকে ২০ শতাংশ এবং খাদ্যদ্রব্যের উপর ৬৮ শতাংশ শুল্ক আরোপ করে নয়াদিল্লি। ফলে ঘরোয়া বাজারে এই সামগ্রীগুলির দাম যথেষ্টই চড়া ছিল।

১৭ ২০

নয়াদিল্লির শুল্কনীতি নিয়ে এর আগেও ক্ষোভ প্রকাশ করেছে ওয়াশিংটন। গত বছর আমেরিকার প্রেসিডেন্টের কার্যালয় হোয়াইট হাউস থেকে এ ব্যাপারে জারি করা বিবৃতিতে বলা হয়, মার্কিন কৃষিপণ্যের উপর ‘সর্বাধিক পছন্দের দেশ’গুলি (মোস্ট ফেভার্ড নেশন্‌স) গড়ে পাঁচ শতাংশ শুল্ক নিয়ে থাকে। সেখানে ভারতে ওই শুল্কের পরিমাণ ৩৯ শতাংশ। যুক্তরাষ্ট্রের মোটরবাইকের উপর রয়েছে ১০০ শতাংশ শুল্ক। সেখানে ভারতীয় গাড়ি নির্মাণকারী সংস্থাগুলি মাত্র ২.৪ শতাংশ শুল্ক দিয়ে আমেরিকার বাজারে বাইক বিক্রি করতে পারে।

১৮ ২০

সিটি রিসার্চের সমীক্ষকদের দাবি, ট্রাম্প প্রশাসন কৃষিপণ্যের উপর পারস্পরিক শুল্ক আরোপ করলে আখেরে লোকসান হবে ভারতের। কারণ, যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে কৃষি ও খাদ্যশস্য কম পরিমাণে রফতানি করে নয়াদিল্লি। শুল্কের পার্থক্য বেশি হওয়ার কারণেই এত দিন এতে লাভের মুখ দেখা যাচ্ছিল।

১৯ ২০

সংবাদ সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদন অনুযায়ী, কম শুল্ক-পার্থক্যের কারণে ভারত-মার্কিন বাণিজ্যে কাপড়, চামড়া এবং কারুশিল্প বা কাঠের তৈরি পণ্যের ক্ষেত্রে ঝুঁকি তুলনামূলক ভাবে কম। বহু মার্কিন সংস্থা এই পণ্যগুলি দক্ষিণ এশিয়াতেই তৈরি করে। যুক্তরাষ্ট্রের ঘরোয়া বাজারে কম শুল্ক থাকায় সেখানে এই পণ্যগুলি বিক্রি করে বেশি লাভ করতে পারেন তাঁরা।

২০ ২০

২০২৪ সালে দু’দেশের বাণিজ্যের বহর ছিল ১৩,০০০ কোটি ডলারের কাছাকাছি। এর মধ্যে ভারতের উদ্বৃত্ত ৪৫০০ কোটি। অর্থাৎ, চুক্তি কার্যকর হলে বাণিজ্যের অঙ্ক চার গুণ হতে পারে। তাতে বিপুল লাভ দেখছে রফতানি সংস্থাগুলি। বিশেষত প্রযুক্তি, প্রতিরক্ষা এবং বিকল্প বিদ্যুতের যন্ত্রাংশ উৎপাদনের সঙ্গে জড়িত সংস্থাগুলির লাভ হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।

সব ছবি: সংগৃহীত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on:
আরও গ্যালারি
Advertisement