US Iran Nuclear Talks

শিয়া মুলুকের ‘বিষ ঝাড়তে’ মরিয়া ট্রাম্প! পশ্চিম এশিয়ায় বোমারু বিমান-ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েন আমেরিকার

পরমাণু চুক্তি নিয়ে ইরানের সঙ্গে একপ্রস্ত আলোচনা সেরেছে আমেরিকা। এর মধ্যেই পশ্চিম এশিয়ায় বোমারু বিমান এবং ব্যালেস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র পাঠাল ওয়াশিংটন।

Advertisement
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ১৪ এপ্রিল ২০২৫ ১২:৪০
Share:
০১ ১৮
US deploying B 2 Bomber and Patriot Missile in West Asia amid Nuclear talks with Iran

প্রতীক্ষার অবসান। পরমাণু চুক্তি নিয়ে শেষ পর্যন্ত আলোচনার টেবিলে মুখোমুখি আমেরিকা ও ইরান। প্রথম দফার বৈঠককে ‘গঠনমূলক’ বলে দাবি করেছে তেহরান। চলতি বছরের এপ্রিলেই এই ইস্যুতে দ্বিতীয় দফায় কথাবার্তা বলতে রাজি হয়েছে দু’পক্ষ। এ হেন পরিস্থিতিতে হঠাৎ করে পশ্চিম এশিয়ায় সৈন্য সংখ্যা বৃদ্ধি করল যুক্তরাষ্ট্র। শিয়া মুলুকটির উপর চাপ বাড়ানোর কৌশল? না কি নেপথ্যে অন্য কোনও ষড়যন্ত্রের ছক? ওয়াশিংটনের পদক্ষেপ ঘিরে উঠছে হাজারো প্রশ্ন।

০২ ১৮
US deploying B 2 Bomber and Patriot Missile in West Asia amid Nuclear talks with Iran

বিষয়টি নিয়ে ইতিমধ্যেই বিবৃতি দিয়েছে আমেরিকার প্রতিরক্ষা সদর দফতর পেন্টাগন। সেখানে বলা হয়েছে, পশ্চিম এশিয়ার পরিস্থিতি ক্রমশ জটিল হচ্ছে বুঝতে পেরে প্রতিরক্ষা সচিব পিট হেগসেথ সেখানকার সেনা ঘাঁটিগুলিতে যুদ্ধবিমানের সংখ্যা বৃদ্ধির নির্দেশ দিয়েছেন। এতে সেখানে মোতায়েন থাকা বাহিনীর সামরিক সক্ষমতা যে কয়েক গুণ বৃদ্ধি পাবে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না।

Advertisement
০৩ ১৮
US deploying B 2 Bomber and Patriot Missile in West Asia amid Nuclear talks with Iran

পেন্টাগনের বিবৃতিতে অবশ্য কত সংখ্যক যুদ্ধবিমান পশ্চিম এশিয়ায় পাঠানো হচ্ছে, তা স্পষ্ট করা হয়নি। ওই এলাকার একাধিক দেশে আমেরিকার বায়ুসেনা ঘাঁটি রয়েছে। তার কোনটিতে অতিরিক্ত যুদ্ধবিমানগুলি মোতায়েন থাকবে, তা-ও জানায়নি যুক্তরাষ্ট্রের সরকার।

০৪ ১৮

তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক মার্কিন বায়ুসেনা অফিসার জানিয়েছেন, পশ্চিম এশিয়ায় পরমাণু বোমা বহনে সক্ষম বি-২ স্পিরিট স্টেলথ বোমারু বিমান পাঠাচ্ছে পেন্টাগন। ইরান মদতপুষ্ট ইয়েমেনের বিদ্রোহী গোষ্ঠী হুথিদের গুপ্ত ঘাঁটিগুলিকে গুঁড়িয়ে দিতে গত বছর এই ‘ব্রহ্মাস্ত্র’কে ময়দানে নামায় যুক্তরাষ্ট্র। বিশ্লেষকদের অনুমান, ইরাক, কাতার, জর্ডন এবং কুয়েতে অতিরিক্ত বি-২ বোমারু বিমান মোতায়েন করবে আমেরিকা।

০৫ ১৮

সূত্রের খবর, এপ্রিলের দ্বিতীয় সপ্তাহে ভারত মহাসাগরের প্রবাল দ্বীপ দিয়েগো গার্সিয়ার সেনাঘাঁটিতে ছ’টি বি-২ স্পিরিট বোমারু বিমান অবতরণ করান মার্কিন লড়াকু পাইলটেরা। তার পর থেকে সেখানে অহরহ যুদ্ধাভ্যাস চালিয়ে যাচ্ছেন তাঁরা। পরমাণু অস্ত্রের পাশাপাশি সবচেয়ে ভারী এবং উচ্চ শক্তির বোমা নিয়ে ওড়ার অভিজ্ঞতা রয়েছে বি-২ স্পিরিটের।

০৬ ১৮

মার্কিন বায়ুসেনায় বর্তমানে মোট ২০টি বি-২ স্পিরিট বোমারু বিমান রয়েছে। ৩০ হাজার পাউন্ড ওজনের ‘জিবিইউ-৫৭ ম্যাসিভ অর্ডন্যান্স পেনিট্রেটর’ নামের অতি উচ্চ ক্ষমতার বোমায় এগুলিকে সাজিয়েছে পেন্টাগন। পরমাণু হাতিয়ার বাদ দিলে আমেরিকার হাতে এর চেয়ে শক্তিশালী আর কোনও বোমা নেই। বিশ্লেষকদের অনুমান, প্রয়োজনে ইরানের আণবিক কর্মসূচিকে উড়িয়ে দিতে এটি ব্যবহার করতে পারে যুক্তরাষ্ট্র।

০৭ ১৮

বর্তমানে সব সেনাঘাঁটি মিলিয়ে পশ্চিম এশিয়ায় মোতায়েন রয়েছে ৩০ হাজারের বেশি মার্কিন সৈন্য। এ ছাড়া লোহিত সাগরে চষে বেড়াচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের বেশ কয়েকটি রণতরী। সাবেক সেনাকর্তাদের দাবি, তার পরেও পশ্চিম এশিয়ায় বি-২ স্পিরিট পাঠানোর নেপথ্যে আমেরিকার দ্বিমুখী উদ্দেশ্য রয়েছে। প্রথমত, ইরানের উপর মানসিক চাপ বৃদ্ধি। দ্বিতীয়ত, পরমাণু চুক্তি নিয়ে সমাধানসূত্র বার না হলে তৎক্ষণাৎ প্ল্যান বিতে চলে যাওয়া। অর্থাৎ তেহরান আক্রমণ।

০৮ ১৮

চলতি বছরের জানুয়ারিতে শপথ নেওয়ার কিছু দিনের মধ্যেই ইরানকে ‘বিষাক্ত সাপ’ হিসাবে দেগে দিয়ে সুর চড়াতে থাকেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। পরমাণু চুক্তি নিয়ে আলোচনায় না বসলে শিয়া মুলুকটির উপর বোমা হামলার হুমকি দিয়ে বসেন তিনি। ফলে পশ্চিম এশিয়ায় চড়তে থাকে উত্তেজনার পারদ।

০৯ ১৮

২০১৫ সালে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক হুসেন ওবামার আমলে তিন বছরের জন্য পরমাণু নিরস্ত্রীকরণ চুক্তিতে সই করে ইরান। কিন্তু তার পরও ক্রমাগত তেহরানের বিরুদ্ধে গোপনে আণবিক হাতিয়ার নির্মাণের চেষ্টার অভিযোগ উঠতে থাকে। ফলে ২০১৮ সালে প্রথম বার ক্ষমতায় থাকাকালীন ওই চুক্তি ভেঙে বেরিয়ে যান ট্রাম্প। পাশাপাশি, শিয়া মুলুকটির উপর একগাদা নিষেধাজ্ঞা চাপিয়ে দেন তিনি।

১০ ১৮

গত বছর আমেরিকার অভিযোগে সিলমোহর দেয় রাষ্ট্রপুঞ্জের নিয়ন্ত্রণাধীন আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা (ইন্টারন্যাশনাল অ্যাটমিক এনার্জি এজেন্সি)। তাদের রিপোর্ট অনুযায়ী, ৬০ শতাংশ বিশুদ্ধ ইউরেনিয়াম মজুত করেছে ইরান। উল্লেখ্য, আণবিক অস্ত্র তৈরির অন্যতম উপাদান হল এই তেজস্ক্রিয় পদার্থ। বিশুদ্ধ ভাবে সেটিকে তৈরি করতে পারলে বোমা বানিয়ে ফেলা কঠিন নয়।

১১ ১৮

আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থার ওই রিপোর্ট প্রকাশ্যে আসার পর নড়েচড়ে বসে গোটা দুনিয়া। ইরানের উপর বাড়তে থাকে চাপ। তেহরান অবশ্য যাবতীয় অভিযোগ অস্বীকার করেছে। পারস্য উপসাগরের তীরের দেশটির দাবি, কেবলমাত্র বিদ্যুৎ উৎপাদনের কাজে ইউরেনিয়ামকে ব্যবহার করা হচ্ছে।

১২ ১৮

এই পরিস্থিতিতে হঠাৎ করেই ফের ইরানকে চুক্তিবদ্ধ করতে উঠেপড়ে লেগেছেন ট্রাম্প। তাঁর যুক্তি, ‘ঐতিহাসিক সমঝোতাপত্রে’ এক বার সই করলে আর নতুন করে আণবিক হাতিয়ার তৈরির ব্যাপারে বাড়াবাড়ি করার সাহস পাবে না তেহরান। তখন আন্তর্জাতিক ভাবে অষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ফেলা যাবে পারস্য উপসাগরের কোলের দেশটিকে।

১৩ ১৮

বিষয়টি নিয়ে অবশ্য ইতিমধ্যেই মুখ খুলেছেন হোয়াইট হাউসের প্রেস সচিব ক্যারোলিন লিভিট। তাঁর কথায়, ‘‘প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের চূড়ান্ত লক্ষ্য হল ইরানের পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি বন্ধ করা। আর সেই জন্যেই কূটনৈতিক পথ অবলম্বন করেছেন তিনি।’’

১৪ ১৮

তবে এই ইস্যুতে আগুনে ঘি ঢালার কাজটি প্রথমে করেছিলেন আমেরিকার প্রেসিডেন্টই। দু’পক্ষের মধ্যে বৈঠকের ঠিক আগে তেহরানকে বোমা-হুমকি দিয়ে বসেন তিনি। সংবাদমাধ্যমকে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেন, ‘‘ইরানকে পরমাণু অস্ত্র তৈরির দৌড় থেকে সরে আসতে হবে। নইলে নরক দর্শন করিয়ে ছাড়ব।’’

১৫ ১৮

এর পর পাল্টা হুঁশিয়ারি দিতে একেবারেই সময় নেননি ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা খামেনেই। ফলে অনেকেই ভেবেছিলেন ভেস্তে যাবে বৈঠক। কিন্তু বাস্তবে তা হয়নি। দু’পক্ষের মধ্যে এ ব্যাপারে মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকায় ছিল ওমান। পশ্চিম এশিয়ার দেশটির রাজধানী মাসকটে প্রথম দফার বৈঠকের আয়োজন করা হয়েছিল।

১৬ ১৮

কুর্সিতে বসে নতুন পারস্পরিক শুল্ক নীতি চালু করেছেন ট্রাম্প। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো এর প্রভাব পড়েছে তেহরানের উপরেও। আর তাই বিশ্লেষকদের অনুমান, এ বার মেপে পা ফেলতে চাইছে পারস্য উপসাগরের শিয়া মুলুক। পরমাণু চুক্তির বদলে আলি খামেনেইরা আমেরিকার নিষেধাজ্ঞা থেকে বেরিয়ে আসতে চাইবেন বলে মনে করনে বিশ্লেষকদের একাংশ।

১৭ ১৮

সূত্রের খবর, বি-২ স্পিরিট বোমারু বিমানের পাশাপাশি পশ্চিম এশিয়ায় দূরপাল্লার ব্যালেস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ‘এমআইএম-১০৪ প্যাট্রিয়ট’ মোতায়েন করতে যাচ্ছে পেন্টাগন। সাবেক সেনাকর্তাদের অনুমান, ইরান মদতপুষ্ট সেখানকার প্যালেস্টাইনপন্থী তিন বিদ্রোহী গোষ্ঠী হামাস, হিজ়বুল্লা ও হুথিদের থেঁতলে দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে ট্রাম্প প্রশাসনের। তবে এর মাধ্যমে ওয়াশিংটন যে অকৃত্রিম ‘বন্ধু’ ইজ়রায়েলের হাত শক্ত করল, তা বলাই বাহুল্য।

১৮ ১৮

উল্লেখ্য, ওমানে প্রথম পর্যায়ের বৈঠকের পর অবশ্য সেখানে উচ্ছ্বাস দেখায়নি যুক্তরাষ্ট্র। একে সরাসরি আলোচনা বলে বিবৃতি দিয়ে দায় সেরেছে ট্রাম্প প্রশাসন। অন্য দিকে একে ‘অপ্রত্যক্ষ’ বা ইনডিরেক্ট আলোচনা বলে দাবি করেছে ইরান। ফলে পশ্চিম এশিয়ায় বারুদে যে দেশলাই পড়বে না তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে।

সব ছবি: সংগৃহীত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on:
আরও গ্যালারি
Advertisement