দীর্ঘ অসুস্থতার পর ৯৬ বছর বয়েসে মারা গেলেন রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ। তাঁর দীর্ঘ জীবনে রয়েছে নানা ঘটনার ঘনঘটা। এমন অনেক তথ্য রয়েছে, যা জানলে অবাক হবেন।
ব্রিটিশ ঐতিহ্য অনুসারে রেশন কুপন ব্যবহার করে তাঁর বিয়ের পোশাকের সামগ্রী কিনেছিলেন এলিজাবেথ। পরে তা অন্য মহিলাদের দিয়ে দেন।
খুব ছোটবেলায় দাদু পঞ্চম জর্জ রানিকে প্রথম একটি ঘোড়া উপহার দেন। যার নাম ছিল পেগি। তখন থেকে তিনি ঘোড়ায় চড়া শুরু করেন।
কর্গি প্রজাতির কুকুর রানি বড়ই প্রিয় ছিল। সারা জীবনে তিরিশটিরও বেশি কর্গির মালিক হয়েছিলেন। তাদের জন্য বিশেষ প্রশিক্ষকের ব্যবস্থা ছিল। তবে সেই প্রশিক্ষকই জানাচ্ছেন, এলিজাবেথ নিজেই একজন দক্ষ কুকুর প্রশিক্ষক ছিলেন।
ব্রিটেনে রানিই হলেন একমাত্র ব্যক্তি, যাঁর গাড়ি চালানোর জন্য কোনও লাইসেন্স লাগত না।
১৯৩৬ সালে তাঁর বাবা যখন রাজা হন, সেই সময় থেকে সংবিধানের ইতিহাস এবং আইন নিয়ে পড়াশুনা শুরু করেন এলিজাবেথ।
বাড়িতেই চলত পড়াশুনা। তিনি ফরাসি এবং জার্মান ভাষার পাশাপাশি সঙ্গীত নিয়েও পড়াশুনা করেন।
ঝরঝরে ফরাসি বলতেন পারতেন রানি। খুব ছোট থেকে ভাষাটি শিখতে শুরু করেন গৃহশিক্ষক মেরিয়ন ক্রফোর্ডের কাছে। তিনি যখন ফ্রান্স সফরে গিয়েছিলেন, তখন সব সময় ফরাসিতেই কথা বলেছেন।
রাজপরিবারের সরকারি ওয়েবসাইট থেকে জানা যাচ্ছে, ব্রিটেনের যে কোনও রাজার চেয়ে সবচেয়ে বেশি বার তিনি বিদেশ ভ্রমণ করছেন।
শুধুমাত্র কমনওয়েলথ দেশগুলির মধ্যে তিনি দেড়শও বেশি বার সফর করেছেন।
রানি এলিজাবেথ হওয়ার আগে রাজকুমারী থাকাকালীন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ট্রাকচালক এবং মেকানিক হিসাবে স্বেচ্ছায় কাজ করেছিলেন।
এলিজাবেথ হলেন রাজ পরিবারের প্রথম মহিলা, যিনি সেনাবাহিনীতে কাজ করেছেন।
রানি তাঁর ৭০ বছরের রাজত্বকালে ২১ হাজারেরও বেশি অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছেন।
জীবদ্দশায় ২০০টি সরকারি পোর্ট্রেটের জন্য শিল্পীদের সামনে বসেছিলেন। এর প্রথমটি ছিল ১৯৩৩ সালে। যখন তাঁর বয়স মাত্র সাত বছর।
রাজ পরিবারের সদস্য হিসাবে তিনিই প্রথম রেডিয়ো ও টিভি অনুষ্ঠানে অংশ নেন।
রানির দেশ ভ্রমণের তালিকাও বেশ লম্বা। তাঁর সময়কালে এলিজাবেথ ১০০টি দেশ সফর করেন। এর মধ্যে কানাডা ২২ বার এবং ফ্রান্স ১৩ বার ভ্রমণ করেছেন।
রানি হিসাবে দায়িত্ব নেওয়ার পর ১৯৫২ সালে ৬ ফেব্রুয়ারি তিনি রেডিয়োতে ভাষণ দেন। সেটাই রেডিয়োর মাধ্যমে তাঁর দেওয়া প্রথম বার্তা।
১৯৭৩ সালের ২০ অক্টোবর তিনি অস্ট্রেলিয়ার দর্শনীয় সভাকক্ষ সিডনি অপেরা হাউজের উদ্বোধন করেন।
নগদের প্রয়োজন হতে পারে তাই রানির নিজস্ব এটিএম ছিল বাকিংহ্যাম প্যালেসের নীচতলায়। যেখানে থেকে শুধুমাত্র রাজ পরিবারের সদস্যরাই টাকা তুলতে পারেন।
খাওয়ার পর রানি নিজের ডিশ নিজেই ধুতেন। এক সাক্ষাৎকারে রাজপরিবারের বিশেষজ্ঞ এবং লেখক হ্যারি মাউন্ট বলেন, ‘‘রাজপরিবারে খাওয়াদাওয়া শুটিং চলছিল। খাওয়া শেষে রানি বলেন, ‘আমি বাসন ধুতে যাচ্ছি।’ ঘুরে দেখি হলুদ গ্লাভস পরে রানি বাসন ধুচ্ছেন।’’
চাঁদের মাটিতে পা রাখবেন অ্যাপেলো ১১-র নভোচারীরা, এমনটা ধরে নিয়ে রানি আগে থেকে রেকর্ড করা একটি অডিয়ো শুভেচ্ছাবার্তা পাঠিয়েছিলেন। সেই বার্তাটি একটি ধাতব পাত্রের মধ্যে চাঁদের মাটিতে রেখে আসেন নভোচারীরা।