UK’S Biggest Cash Robbery

টাকার গুদাম থেকে ৫২৭ কোটি নিয়ে চম্পট! গাড়ি ছিল না বলে দেড় হাজার কোটি ফেলে পালান ডাকাতরা

চুরি যাওয়ার পর ধরা পড়েছিলেন অনেকে। অনেকে ফেরার আজও। চুরি যাওয়া টাকার অনেকাংশের হদিস আজও মেলেনি। আজও রহস্য হয়েই রয়ে গিয়েছে টনব্রিজে সিকিউরিটাস ডিপোর চুরি।

Advertisement
শেষ আপডেট: ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ১৩:০৩
Share:
০১ ১৬

বাস্তবের ‘মানি হাইস্ট’ বললে ভুল হবে না! ২০০৬ সালে ইংল্যান্ডের টনব্রিজে হয়েছিল সেই চুরি। চুরি গিয়েছিল ৫৩ মিলিয়ন পাউন্ড। ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় ৫২৭ কোটি ৫০ লক্ষ ১৫ হাজার। যত মুদ্রা চুরি হয়েছিল, তার তিন গুণ মুদ্রা চোরেরা নিয়েই যেতে পারেননি। কারণ নোট পরিবহণের জন্য যান ছিল না।

০২ ১৬

এত বড় চুরি এর আগে বা পরে হয়নি ইংল্যান্ডে। চুরি যাওয়ার পর ধরা পড়েছিলেন অনেকে। অনেকে ফেরার আজও। চুরি যাওয়া টাকার অনেকাংশের হদিস আজও মেলেনি। আজও রহস্য হয়েই রয়ে গিয়েছে টনব্রিজে সিকিউরিটাস ডিপোর চুরি।

Advertisement
০৩ ১৬

ডেবডেনের টাঁকশালে নোট ছাপায় ব্যাঙ্ক অব ইংল্যান্ড। ২০০৬ সালে সেই নোট বিলির জন্য পাঁচটি সংস্থাকে দায়িত্ব দেয় তারা। পাঁচটি সংস্থার মধ্যে একটি ছিল সিকিউরিটাস। নতুন তৈরি হওয়া নোটগুলি টাঁকশাল থেকে এনে টনব্রিজের ডিপোতে রাখত সংস্থাটি। সেই ডিপো থেকেই চুরি গিয়েছিল বিপুল পরিমাণ নোট, যার বেশির ভাগের হদিস আজও মেলেনি।

০৪ ১৬

ওই ডিপোর ম্যানেজার ছিলেন কলিন ডিক্সন। স্ত্রী এবং এক শিশুসন্তানকে নিয়ে হার্ন বেতে থাকতেন তিনি। চাকরির খাতিরেই কোথায় থাকতেন, তা কাউকে বলা বারণ ছিল কলিনের। এক এক দিন এক এক রাস্তা দিয়ে কাজে যেতেন, যাতে কেউ ধাওয়া করতে না পারেন। দফতরের তরফে নির্দেশ ছিল, কাজে যাওয়ার সময় কখনও পুলিশ তাঁর পথ আটকালে যেন গাড়ি থেকে না নামেন কলিন। বদলে একটি চিরকুটে নিজের কাজের বর্ণনা দিয়ে যেন তা তুলে দেন পুলিশের হাতে। এর পরেও কিছু প্রয়োজন হলে তিনি যেন সরাসরি হাজিরা দেন থানায়।

০৫ ১৬

এত কিছুর পরেও তাঁর হালহকিকত জেনে যান দুষ্কৃতীরা। ২০০৬ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি দফতরে যাচ্ছিলেন কলিন। পুলিশের পোশাক পরে তাঁর পথ আটকান কয়েক জন। কলিন বাধা দিলেও শোনেননি পুলিশের পোশাক পরা ওই দুষ্কৃতীরা। তাঁকে জোর করে গাড়ি থেকে নামতে বলেন। এর পর অপহরণ করেন কলিনকে।

০৬ ১৬

শুধু কলিন নন, তাঁর স্ত্রী এবং সন্তানকেও অপহরণ করেন দুষ্কৃতীরা। কলিনের স্ত্রীকে গিয়ে তাঁরা জানিয়েছিলেন, তাঁর স্বামী দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন। হাসপাতালে ভর্তি। তরুণীকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার নাম করে অপহরণ করেন দুষ্কৃতীরা।

০৭ ১৬

তখন কলিনের সামনে অন্য কোনও পথ ছিল না। তাঁকে দুষ্কৃতীরা ভয় দেখিয়েছিলেন, কথা না মানলে স্ত্রী এবং সন্তানকে খুন করবেন। পরের দিন, ২০০৬ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি কলিনকে নিয়ে সিকিউরিটাস ডিপোতে যান এক দুষ্কৃতী। পরেছিলেন পুলিশের উর্দি। কলিনের সঙ্গে ওই ‘পুলিশ আধিকারিক’-কে দেখে আপত্তি জানাননি নিরাপত্তা রক্ষীরা। এর পর দুষ্কৃতীরা সদলবলে ঢুকে পড়েন ডিপোতে।

০৮ ১৬

কলিনদের পিছু পিছু ডিপোতে ঢুকে পড়েন দুষ্কৃতী দলের বাকিরাও। তাঁদের সঙ্গে ছিল একে-৪৭ রাইফেল, হ্যান্ডগান, শটগান। কলিন, তাঁর পরিবার আর বাকি কর্মীদের ভয় দেখিয়ে টাকা রাখার খাঁচায় ঢুকিয়ে দিয়েছিলেন দুষ্কৃতীরা। দু’ঘণ্টা ধরে চলেছিল লুট। এত নোট লুট করেছিলেন দুষ্কৃতীরা যে, তা শেষ পর্যন্ত নিয়ে যেতে পারেননি। ১৫৪ মিলিয়ন পাউন্ড ফেলে রেখেছিলেন তাঁরা। ভারতীয় মুদ্রায় যার মূল্য ১,৫২৭ কোটি ৯৪ লক্ষ টাকারও বেশি।

০৯ ১৬

এক কর্মীর কাছে খাঁচার চাবি ছিল। তিনি সেই খাঁচা খুলে বার হন। এর পর বাকিদের মুক্ত করেন। খবর দেন থানায়। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে এসে পৌঁছয় পুলিশ। শুরু হয় তদন্ত। অভিযুক্তদের বিষয়ে তথ্য দিতে পারলে ২০ লক্ষ পাউন্ড পুরস্কার দেওয়া হবে, ঘোষণা করেছিল পুলিশ। ডিপোর কর্মীদের জেরা শুরু হয়। ঘটনাস্থল থেকে ফরেন্সিক নমুনা সংগ্রহ করা হয়।

১০ ১৬

চুরির পর বেশ কিছু ট্রানজিট ভ্যানে টাকা বোঝাই করে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। বেশির ভাগেরই পরের দিন সন্ধান পায় পুলিশ। একটির মধ্যে পরিত্যক্ত অবস্থায় তখনও পড়ে ছিল ১০ লক্ষ পাউন্ড। ভারতীয় মুদ্রায় ৯ কোটি ৯৩ লক্ষ ৪৩ হাজার ৭৫২ টাকা।

১১ ১৬

বিভিন্ন সূত্রে খবর পেয়ে তল্লাশি অভিযান চালায় কেন্ট পুলিশ। ওয়েলিংয়ের একটি বাড়ি থেকে মিলেছিল ৯০ লক্ষ পাউন্ড। ভারতীয় মুদ্রায় ৭৫ কোটি টাকার কাছাকাছি। লি রুসা নামে এক ব্যক্তির আত্মীয়ের গ্যারাজে তল্লাশি চালিয়ে মিলেছিল ৮০ লক্ষ পাউন্ড। ভারতীয় মুদ্রায় যা ৬৬ কোটি টাকার কাছাকাছি। এই লি রুসাও অন্যতম অভিযুক্ত। বাকি টাকা কোথায়, সেই হিসাব আজও মেলেনি।

১২ ১৬

২০০৭ সাল পর্যন্ত এই চুরিতে অভিযুক্ত ৩৬ জনকে গ্রেফতার করেছিল পুলিশ। তাদের ধারণা, গোটা ঘটনার নেপথ্যে ছিলেন লি মুরে। তিনি পেশায় মার্শাল আর্ট বিশেষজ্ঞ ছিলেন। দক্ষিণ লন্ডনের বাসিন্দা ছিলেন। চুরির পর মরক্কো পালিয়ে যান। চার মাস পর সেখানে মাদক চোরাচালানের ঘটনায় গ্রেফতার হন।

১৩ ১৬

মার্শাল আর্টে দক্ষ লি-কে ধরতে ৫০ জনকে প্রশিক্ষণ দিয়েছিল মরক্কো পুলিশ। মাদক চোরাচালানের অপরাধে ১০ বছর সাজা হয়েছিল লি-র। পরে টনব্রিজের ডিপোয় চুরির সঙ্গে যোগ মেলায় ২৫ বছরের সাজা হয়েছিল। মরক্কোতেই জেলে রয়েছেন তিনি।

১৪ ১৬

লি মুরের অন্যতম সহযোগী পল অ্যালেনকে ১৮ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছিল কেন্টের আদালত। চুরি যাওয়া টাকা তছরুপে সাহায্য করেছিলেন ইংল্যান্ডের ব্যবসায়ী ইয়ান বাওরেম। তিন বছরে ৯ মাসের সাজা হয়েছিল তাঁরা।

১৫ ১৬

পুলিশ প্রথমে মনে করেছিল, ডিপোর ম্যানেজার কলিনও এই ষড়যন্ত্রের পিছনে রয়েছেন। পরে তদন্তে সবটা স্পষ্ট হয়। কলিন এবং তাঁর পরিবারকে অপহরণের নেপথ্যে ছিলেন এমির হায়সেনাজ। তাঁর ২০ বছরের সাজা হয়েছিল।

১৬ ১৬

হায়সেনাজের বন্ধু জেটমির বাকপাপা বহু মাস ধরে রেইকি করেছিলেন ডিপোর ম্যানেজার কলিনকে। তাঁর বাড়ির উপরও নজর রাখতেন। এই বাকপাপা আদতে আলবানিয়ান। টনব্রিজেই থাকতেন। দরজা সারাতেন। গাঁজা বিক্রি করে বাড়তি রোজগারও করতেন। তবে ওই ষড়যন্ত্রে অংশগ্রহণকারী অনেকের খোঁজ আজও মেলেনি। ধৃতদের জেরা করেও লাভ হয়নি। ফলে এই ঘটনার অনেকাংশই এখনও রহস্যাবৃত।

সব ছবি সংগৃহীত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on:
আরও গ্যালারি
Advertisement