Typhoid marry

ছিলেন রাঁধুনি, নিঃশব্দে মেরেছিলেন অনেককে! নির্জন দ্বীপে ২৮ বছর কাটিয়ে মারা যান ‘টাইফয়েড মেরি’

উনিশ শতকের শুরুতে এক বাহককে নিয়ে রাতের ঘুম উড়ে গিয়েছিল আমেরিকার। ১৯০৬ সালে শুধু নিউ ইয়র্ক শহরে সরকারি হিসাবে ৩৪৬৭ জন টাইফয়েডে আক্রান্ত হয়েছিলেন।

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৭ নভেম্বর ২০২৪ ১৬:৩৮
Share:
০১ ১৪

শরীরে মারণরোগের জীবাণু নিয়ে ঘুরে বেড়াতেন। টের পাননি কেউই। একের পর এক পরিবারে নিঃশব্দে প্রাণঘাতী রোগ ছড়িয়ে দিয়েছেন বছরের পর পর। বিন্দুমাত্র সন্দেহের উদ্রেক হয়নি কারও মনে। মারাত্মক এক রোগ ছড়ানোর ক্ষমতা নিয়ে তিনি সকলের মধ্যেই ঘুরে বেড়িয়েছেন।

০২ ১৪

তিনি মেরি ম্যালন, ইতিহাসের অন্যতম ভয়াবহ এক মহামারির উৎস ছিলেন এই নারী। টাইফয়েড ছড়িয়ে দেওয়ায় তাঁর নামই হয়ে গিয়েছিল, ‘টাইফয়েড মেরি’। অথচ নিজে এক বারও আক্রান্ত হননি এই রোগে। দেহে টাইফয়েড সৃষ্টিকারী ব্যাকটেরিয়া ‘সালমোনেলা টাইফি’ থাকা সত্ত্বেও নিজে অসুস্থ না হয়ে শুধুমাত্র বাহক হয়েই অসংখ্য মানুষের মৃত্যুর কারণ হয়েছিলেন মেরি।

Advertisement
০৩ ১৪

উনিশ শতকের শুরুতে এমনই এক বাহককে নিয়ে রাতের ঘুম উড়ে গিয়েছিল আমেরিকার। ১৯০৬ সালে শুধু নিউ ইয়র্ক শহরে সরকারি হিসাবে ৩৪৬৭ জন টাইফয়েডে আক্রান্ত হয়েছিলেন। সরকারি নথিতে মৃত্যু হয়েছিল ৬৩৯ জনের। আসল সংখ্যাটা ছিল তার চেয়েও অনেক বেশি। আশপাশে পাড়ায় বা গ্রামে এলাকাভিত্তিক সংক্রমণও ঘটেছিল, যা ইতিহাসের পাতায় নথিবদ্ধ করা হয়নি।

০৪ ১৪

১৮৬৯ সালে আয়ারল্যান্ডে জন্ম মেরির। আমেরিকায় পাড়ি জমান ১৮৮৩ অথবা ১৮৮৪ সালে। তবে তাঁর রোগ ছড়ানোর ব্যাপারটা প্রকাশ্যে আসে ১৯০৬ সালে, যখন চার্লস হেনরি ওয়ারেন নামে এক ধনী ব্যক্তির পরিবারে রাঁধুনি হয়ে আসেন মেরি।

০৫ ১৪

জর্জ টমসন নামের এক ব্যক্তির স্ত্রীর বিশাল বাড়ির একাংশ ভাড়া নিয়ে থাকতেন হেনরি। তাঁর পরিবারে স্ত্রী-সন্তান ছাড়া চাকর ছিলেন সাত জন। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন, ছবির মতো সেই বাড়িতে আচমকা টাইফয়েডের প্রাদুর্ভাব দেখা দিল। মোট ১১ জন সদস্যের মধ্যে ছ’জনই টাইফয়েডের কবলে পড়েন।

০৬ ১৪

টমসন পড়লেন মহা ফাঁপরে। রোগ ছড়ানোর কারণে তাঁর বাড়ির বদনাম শুরু হতেই ব্যবস্থা নিলেন তিনি। ঘটনার তদন্তে নামলেন জর্জ এ সোপার নামে সেই সময়ের এক খ্যাতনামী স্যানিটারি ইঞ্জিনিয়ার। গোটা বাড়ি তন্নতন্ন করে পরীক্ষা করেও মিলল না টাইফয়েডের উৎসর কোনও চিহ্ন।

০৭ ১৪

বাড়ির প্রত্যেকের সঙ্গে কথা বলে বুঝতে পারলেন, যিনি নিয়মিত রান্না করেন তাঁর থেকেই সম্ভবত রোগ ছড়িয়েছে। ডাক পড়ল বাড়ির রাঁধুনির। সোপার জানতে পারলেন, পরিবারের সদস্যেরা একে একে টাইফয়েডে আক্রান্ত হতে শুরু করা মাত্র সেই রাঁধুনি নাকি চাকরি ছেড়ে চলে গিয়েছেন।

০৮ ১৪

পরবর্তী কালে তাঁর মাস ছয়েক কেটে যায় মেরি নামের এক ৪০ বছর বয়সি অবিবাহিতা, আইরিশ নারীকে খুঁজে বার করতে। তত দিনে সোপার নিশ্চিত হয়েছিলেন যে, এই নারীই সব সমস্যার জন্য দায়ী। কারণ মেরি যেখানেই যেতেন, সেখানেই খোঁজ পাওয়া যেত নতুন রোগীর।

০৯ ১৪

মোট আটটি পরিবার খুঁজে পান সোপার, যেখানে কাজ করতেন মেরি। তাদের মধ্যে সাতটি পরিবারেই থাবা বসায় টাইফয়েড। মোট ২২ জন রোগাক্রান্ত হন এবং তাঁদের মধ্যে কয়েক জন মারাও যান। অবশেষে সোপার খুঁজে পান মেরিকে, নিউ ইয়র্কের পার্ক অ্যাভিনিউয়ের এক সম্ভ্রান্ত পরিবারের রান্নাঘরে।

১০ ১৪

দশাশই চেহারা, মেজাজি, চাপা স্বভাবের ছিলেন মেরি। কুকীর্তি ধরা পড়তেই ধারালো অস্ত্র নিয়ে সোপারকে তাড়া করেন মেরি। পরে নিউ ইয়র্ক শহরের স্বাস্থ্য দফতরকে এ বিষয়ে অবগত করে তাদের একাধিক কর্মীকে নিয়ে সোপার মেরিকে ধরে আনতে যান। তখনও রান্নাঘরের জানলা গলে পালিয়ে যেতে চেয়েছিলেন তিনি। কয়েক ঘণ্টার চেষ্টায় তাঁকে ধরা সম্ভব হয়।

১১ ১৪

কী ভাবে রোগ ছড়়াতেন মেরি? সোপারের প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, বাড়ি বাড়ি রান্নার কাজ করতেন মেরি। ভাল করে রান্না করা গরম খাবারের মধ্য দিয়ে ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ সহজ নয়। এটা বুঝে ঠান্ডা খাবারের মাধ্যমে রোগ ছড়াতেন মেরি। ওয়ারেনের বাড়িতে প্রথম অসুস্থ হওয়ার ঘটনা যে দিন ঘটেছিল, ঠিক তার আগের দিন মেরি ফল-মেশানো আইসক্রিম বানিয়েছিলেন। সকলেই তা চেটেপুটে শেষ করেন। রান্নায় মেরির দক্ষতা ছিল প্রশ্নাতীত, এমনটাই সোপারকে জানিয়েছিলেন ওয়ারেনের বাড়ির সদস্যেরা।

১২ ১৪

মেরি হাত ধুতেন না, পরিচ্ছন্ন থাকতেন না। হাত ধোওয়ায় মেরির অনীহা এবং মল-মূত্র ত্যাগের পর নিজেকে ঠিকমতো পরিষ্কার না করে রান্না করা অভ্যাস তাঁকে ‘টাইফয়েড মেরি’ বানিয়েছিল, সে কথাও লিখে গিয়েছেন সোপার।

১৩ ১৪

তাঁর হাত থেকে বাঁচতে দুই পর্যায়ে প্রায় ২৮ বছর তাঁকে মূল ভূখণ্ড থেকে দূরে, একটি দ্বীপের মধ্যে আলাদা বাড়িতে কোয়রান্টিনে রাখা হয়েছিল। প্রথমে তাঁকে রাখা হয় উইলার্ড পার্কার হাসপাতালে। তার পর নর্থ ব্রাদার দ্বীপের রিভারসাইড হাসপাতাল চত্বরে একটি বাংলোয়। তাঁর মল-মূত্র পরীক্ষা করে দেখা গিয়েছিল, শরীরে টাইফয়েডের ব্যাকটেরিয়া থিকথিক করছে। বার বার চিকিৎসাতেও তা দূর করা সম্ভব হয়নি।

১৪ ১৪

জীবনের শেষ কয়েক বছর পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে শয্যাশায়ী ছিলেন মেরি। ১৯৩৮ সালের ১১ নভেম্বর মারা যান ‘টাইফয়েড মেরি’।

সব ছবি: সংগৃহীত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on:
আরও গ্যালারি
Advertisement