বাবা-মায়ের বিচ্ছেদ হয়ে গিয়েছে। দুই কন্যার প্রচেষ্টায় আবার বিবাহবিচ্ছিন্ন বাবা-মায়ের সম্পর্ক নতুন করে গড়ে ওঠে। আবার ঘটা করে তাদের বিয়ে দেওয়া হয়। ষাটের দশকে ‘পেরেন্ট ট্র্যাপ’ নামে ইংরেজি ভাষার একটি ছবি মুক্তি পেয়েছিল। এই ছবিরই গল্প এটি। পরে অবশ্য নব্বইয়ের দশকে একই নামে, একই চিত্রনাট্য অবলম্বন করে সিনেমা তৈরি হয়। তবে বড় পর্দার বাইরে এই ঘটনা বাস্তবেও ঘটেছে।
২০২০ সালে আমেরিকার ওহায়ো প্রদেশের সিনসিনাটি এলাকার ঘটনা। কোভিড অতিমারি নিয়ে সারা বিশ্ব তখন তটস্থ। ভাইরাসের হাত থেকে রক্ষা পেতে নির্দিষ্ট এলাকায় তৈরি করা হয়েছিল সুরক্ষা বলয়। ঘটনাচক্রে একই সুরক্ষা বলয়ে ঠাঁই পান বিবাহবিচ্ছিন্ন দুই প্রবীণ জুলি শোর এবং স্কট গেইড।
জুলি এবং স্কট দু’জনেই ৫০ বছরের গণ্ডি পার করে ফেলেছেন। ১৯৯৭ সালে বিয়ে করেছিলেন দু’জন। রাচেল এবং ক্যারোলিন নামে দুই কন্যাসন্তান রয়েছে তাঁদের। ১৭ বছর সংসার করার পর বিচ্ছেদের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন তাঁরা। ২০১৪ সালে বিবাহবিচ্ছেদ হয় জুলি এবং স্কটের।
টুডেকে দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারে ২৪ বছর বয়সি রাচেল বলেন, ‘‘আমাদের বাড়িতে নিত্য অশান্তি লেগে থাকত। বাবা-মা যখন বিচ্ছেদের সিদ্ধান্ত নিলেন তখন আমরা সকলেই ভেবেছিলাম যে এটাই সঠিক সিদ্ধান্ত।’’
২০১৪ সালে বিচ্ছেদের ছ’বছর পর আবার একসঙ্গে থাকতে শুরু করেন জুলি এবং স্কট। কোভিড অতিমারির সময় একই সুরক্ষা বলয়ের ভিতর ছিলেন তাঁরা। সেই সময় দু’জনের বন্ধুত্ব গাঢ় হয়ে ওঠে।
সাক্ষাৎকারে রাচেল বলেন, ‘‘২০২০ সালের শেষের দিকে আমি লক্ষ করি যে বাবা-মা দু’জনে একসঙ্গে ভাল রয়েছেন। দুই মেয়ের জন্য ভাল থাকার নাটক করছেন না। তাঁরা সত্যিই একে অপরের সঙ্গে ভাল রয়েছেন।’’
জুলি দাবি করেন যে কোভিড অতিমারির সময় তিনি আবার নতুন করে স্কটের প্রেমে পড়েন। জুলি বলেন, ‘‘স্কটের সঙ্গে যতটুকু সময় কাটাতাম ততটুকু সময় আমি বেশ হাসিখুশি থাকতাম। ধীরে ধীরে আমি বুঝতে পারলাম স্কট ছাড়া দুনিয়ায় এমন কেউ নেই যে আমায় এতটা সুখী রাখতে পারে।’’
জুলি জানান, অতিমারির সময় স্কট তাঁর দুই প্রিয় জনকে হারিয়েছিলেন। সেই সময় স্কটের সঙ্গে সর্ব ক্ষণ ছিলেন তিনি। স্কটের সঙ্গে সময় কাটানোর পর জুলি বুঝতে পারেন যে প্রাক্তন স্বামীর প্রতি তাঁর অনুভূতি ফিরেছে।
জুলি বলেন, ‘‘অতীতের সব কিছু যেন নিমেষের মধ্যে কোথায় হারিয়ে গেল। বুঝতে পারলাম পরিবারের আগে আর কোনও কিছু আসতে পারে না। আমাদের চার জনের যে আবার একসঙ্গে থাকা প্রয়োজন তা-ও বুঝলাম।’’
২০২১ সালের শেষের দিকে জুলি এবং স্কট আবার এক ছাদের তলায় থাকা শুরু করেন। এই প্রসঙ্গে স্কট বলেন, ‘‘আমি এবং জুলি একসঙ্গে থাকা শুরু করলে আমাদের দুই মেয়ে একেবারে নাছোড়াবান্দা হয়ে গিয়েছিল। আমি যেন জুলিকে প্রেম নিবেদন করি, সে কথা বার বার আমাকে বলত রাচেল এবং ক্যারোলিন।’’
এক বছর একসঙ্গে থাকার পর জুলিকে আবার বিয়ের প্রস্তাব দেন স্কট। ২০২৩ সালের ২৮ ডিসেম্বর দ্বিতীয় বার বিয়ে করেন তাঁরা। ঘনিষ্ঠ বন্ধুবান্ধব এবং আত্মীয়দের আমন্ত্রণ জানিয়ে খুব ছিমছাম ভাবেই বিয়ে করেন তাঁরা।
জুলি এবং স্কটের বিয়ের ছবি এবং ভিডিয়ো সমাজমাধ্যমে পোস্ট করে রাচেল লেখেন, ‘‘যুদ্ধ অবশেষে শেষ হল। আমাদের বাবা-মায়ের আবার বিয়ে হল। আমরা আর বিবাহবিচ্ছিন্নদের সন্তান নই।’’
জুলি এবং স্কটের বিয়ের মুহূর্ত সমাজমাধ্যমে দেখার পর ভালবাসায় ভরিয়ে দিয়েছেন নেটব্যবহারকারীরা। বিবাহবিচ্ছেদের পর আবার বিয়ে করেছেন দেখে অনেকেই শুভেচ্ছাবার্তা জানিয়েছেন জুলি এবং স্কটকে।
রাচেল বলেন, ‘‘আমায় যদি কেউ ১০ বছর আগেও এসে এই কথা বলতেন যে বাবা-মা আবার বিয়ে করছেন তা হলে আমি হেসে উড়িয়ে দিতাম। এখন ওঁদের একসঙ্গে দেখে আমার খুব ভাল লাগছে। এই কয়েক বছরে ওঁরা ক্ষমা করতে শিখেছেন, সহনশীলতাবোধ বৃদ্ধি পেয়েছে ওঁদের।’’
স্কটের সঙ্গে আংটিবদলের পর জুলি যে ধরনের আংটি পরতেন সেই একই ধরনের আংটি পরছেন রাচেল এবং ক্যারোলিন। এই প্রসঙ্গে জুলি বলেন, ‘‘আমরা কত ঝড় কাটিয়ে আজ এই জায়গায় পৌঁছেছি আংটিটি তারই চিহ্ন বহন করে। শুধু দুটো মানুষের দ্বিতীয় বার বিয়েই হয়নি। আমরা পুরো পরিবার আবার এক হয়েছি।’’