অপ্রত্যাশিত জায়গায় গুপ্তধন বা মূল্যবান সম্পদ খুঁজে পাওয়া চাট্টিখানি কথা নয়। কিন্তু কখনও কখনও খুব কসরত না করেও হাতে চলে আসে গুপ্তধন!
২০১৮ সালে টেক্সাসের এক দোকান থেকে মাত্র ৩৫ ডলারের বিনিময়ে একটি আবক্ষ মূর্তি কেনেন লরা ইয়ং। সেটির নামকরণও করেন তিনি। নাম রাখেন ‘ডেনিস’। কিন্তু লরা জানতেন না, আবক্ষ মূর্তিটি দু’হাজার বছরের পুরনো।
নিলাম সংস্থা ‘সদবি’র এক বিশেষজ্ঞ পরে মূর্তিটি দেখে বলেন, সেটি গ্রিসের ‘পাগল রাজা’ কালিগুলার বাবা জার্মানিকাসের। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় মূর্তিটি জার্মানি থেকে চুরি হয়ে যায়।
সব শোনার পর আবক্ষ মূর্তিটিকে জার্মানি ফেরত পাঠাতে উদ্যোগ নেন লরা। বর্তমানে সেটি ‘সান অ্যান্টোনিও মিউজিয়াম অব আর্টস’-এ রয়েছে। ২০২৩ সালে মূর্তিটিকে জার্মানি ফেরত পাঠানো হবে।
হেলেন ফিওরাত্তির কোনও ধারণাই ছিল না যে, তাঁর ঘরের প্রশংসনীয় কফি টেবিলটি ‘পাগল রাজা’ কালিগুলার নৌকার মার্বেল দিয়ে তৈরি।
ইউরোপ থেকে মোজাইকটি কিনেছিলেন হেলেন। বেশ কিছু কড়ি খরচ করে সেটিকে নিজের আমেরিকার বাড়িতে নিয়ে আসেন। কিন্তু সেটির ইতিহাস সম্পর্কে অবহিত ছিলেন না।
পরে ইটালি সেনা, পুলিশের বিশেষ বিভাগ এবং নিউ ইয়র্ক ডিস্ট্রিক্ট অ্যাটর্নির সহযোগিতায় সেটিকে ইটালিতে ফেরত পাঠানো হয়।
ইংল্যান্ডের ব্রাইটনে একটি দোকানের নীচে খোঁড়াখুঁড়ি করার সময় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ের পাউন্ডের বান্ডিল উদ্ধার হয়।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় নাৎসি জার্মানি যদি ইংল্যান্ড আক্রমণ করে বসে, তখন তাঁদের হাত থেকে নিজের পরিবারের লোকজনকে বাঁচাতে দুই ইহুদি ভাই এরিক এবং ভিক্টর ব্র্যাডলি নিজেদের দোকানের নীচে বেশ কিছু পাউন্ড লুকিয়ে রাখেন।
পাঁচ এবং এক পাউন্ডের নোটের প্রায় ৩০টি বান্ডিলে মোট এক লক্ষ তিরিশ হাজার পাউণ্ড তাঁরা লুকিয়ে রেখেছিলেন। বর্তমানে যার আনুমানিক মূল্য কুড়ি লক্ষ ডলারেরও বেশি।
ছোটবেলায় কাকিমা নোরার পিয়ানো নিয়ে খেলা বারণ ছিল এলেন কেলির। ১৯৯২ সালে যখন তাঁদের পরিবার বাড়ি বেচে দেন সব আসবাবপত্র মধ্যে থেকে পিয়ানোটিকে মাত্র ২৫ ডলারে কিনে নেন এলেন।
পিয়ানো হাতে পাওয়ার ২৫ বছর পর এক দিন সেটির সুর শুনে কেলির সন্দেহ হয়। পিয়ানোটিকে খোলার পর সেটির মধ্যে থেকে বিখ্যাত বেসবল খোলায়াড় বেব রুথ-এর ২০টি দুষ্প্রাপ্য ছবি পান।
২০১৯ সালে ওই ২০টি কার্ড নিলামে তোলেন কেলি। নিলামে কার্ডগুলির দাম উঠেছিল প্রায় এক লক্ষ তিরিশ হাজার ডলার।
ব্রাসেলসের শাসক ইনফ্যান্টা ইসাবেলা ক্লারা ইউজিনের মোট ২০টি চিত্র রয়েছে সারা পৃথিবীতে। সবক’টিই এঁকেছেন চিত্রশিল্পী অ্যান্থনি ভ্যান ডাইক।
এ রকমই একটি চিত্র মাত্র ৮৮ ডলারের বিনিময়ে কিনেছিলেন লাইব্রেরিয়ান ক্রিস রাইট। তিনি সেটিকে একটি উচ্চমানের নকল চিত্র হিসেবেই কিনেছিলেন। প্রায় ৫০ বছর পর বিশেষজ্ঞরা চিত্রটি দেখে ধারণা করছেন, চিত্রটি হয়তো অ্যান্থনি ভ্যান ডাইক নিজেই এঁকেছিলেন।
২০২০ সালের নভেম্বরে বাল্টিক সাগরে রুটিনমাফিক ডাইভিং করছিলেন মাইকেল সোয়াট। তখন আচমকা সমুদ্র-তলদেশে তিনি টাইপরাইটার জাতীয় একটি যন্ত্র দেখতে পান।
সেটি উপরে তুলে নিয়ে আসার পর ভাল করে পরীক্ষা করে দেখা যায়, সেটি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়কার বিখ্যাত জার্মান এনিগমা যন্ত্র। এই যন্ত্র যুদ্ধের সময় গোপন বার্তা পাঠাতে কাজে লাগানো হত।
যুদ্ধের পর কয়েকশো এনিগমা যন্ত্র সমুদ্রে ফেলে দেওয়া হয়। বর্তমানে সেটিকে ঠিক করার কাজ চলছে। ঠিক হয়ে গেলে যন্ত্রটিকে জার্মানিতে প্রদর্শনীর জন্য পাঠানো হবে।
১৩০০ খ্রিস্টাব্দ নাগাদ উত্তরপূর্ব ফ্রান্সের বাসিন্দা এক ইহুদি বিবাহিত মহিলা তাঁর সুরক্ষার জন্য বাড়ির পাঁচিলের মধ্যে নিজের বিয়ের আংটি, ১৩টি সোনার আংটি এবং ৩৮৪টি রুপোর কয়েন লুকিয়ে রেখেছিলেন। ১৮৬৩ সালে বাড়িটি সারানোর সময় একটি পোর্সেলিনের পাত্রে রত্নগুলি খুঁজে পাওয়া যায়।
একটি পাঁচিলের মধ্যে ৫০০ বছর লুকিয়ে থাকার পরে, ১৮৬৩ সালে রত্নগুলি খুঁজে পাওয়া গিয়েছিল এবং সম্প্রতি সেগুলিকে প্রদর্শন করার জন্য প্রকাশ্যে আনা হয়েছে। এই রত্নগুলি দেখে মধ্যযুগীয় ইহুদি মহিলাদের জীবনযাপন সম্পর্কে সম্যক ধারণা করা যায়।