নিজের বাড়ির সামনে অজ্ঞাতপরিচয় বন্দুকবাজদের গুলিতে ঝাঁঝরা হয়ে গিয়েছিলেন রূপান্তরকামী সম্প্রদায়ের সদস্য তথা সমাজকর্মী একতা জোশী। দিল্লির জিটিবি এনক্লেভ এলাকায় ওই হামলায় খুন হন তিনি। অভিযোগ, বিরুদ্ধ গোষ্ঠীর লোকজনই তাঁকে সরাতে ৫৫ লক্ষ টাকার সুপারি দিয়েছিলেন ওই বন্দুকবাজদের। ঘটনার সাত মাস পর পুলিশের পাতা ফাঁদে ধরা পড়েছিলেন দুই অভিযুক্ত।
২০২০ সালের ৫ সেপ্টেম্বর। রাত সাড়ে ৮টা নাগাদ নিজের বাড়ির বাইরে গাড়ি থেকে নামতেই একতার উপর প্রাণঘাতী হামলা হয়। একতার সৎমা অনিতা জোশী এবং তাঁর ছেলে আশিস জোশী সে দিন লক্ষ্মীনগর থেকে উত্তর দিল্লির জিটিবি এনক্লেভ এলাকায় একতার বাড়িতে এসেছিলেন।
জিটিবি এনক্লেভ এলাকার সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়েছিল, একতা গাড়ি থেকে নামতেই দু’জন স্কুটার-আরোহী তাঁর কাছে এসে পর পর গুলি চালাচ্ছেন। অনিতার চেষ্টা সত্ত্বেও একতার গায়ে গুলি লাগে। বছর দু-এক আগেকার ওই খুনের ঘটনা সংবাদপত্রের শিরোনামে জায়গা করে নিয়েছিল।
ওই ঘটনার প্রায় সাত মাস পর ২০২১ সালের ১০ এপ্রিল দুই কুখ্যাত বন্দুকবাজকে গ্রেফতার করে দিল্লি পুলিশের স্পেশাল সেলের আধিকারিকেরা। পুলিশ জানিয়েছিল, ধৃতেরা হলেন গগন ভরদ্বাজ ওরফে গগন পণ্ডিত এবং বরুণ।
সংবাদমাধ্যমে দিল্লি পুলিশের ডিসিপি (স্পেশাল সেল) প্রমোদ কুশওয়াহার দাবি ছিল, একতাকে খুনের জন্য গগনদের ৫৫ লক্ষ টাকার সুপারি দিয়েছিল তাঁর বিরোধী গোষ্ঠী।
পুলিশের খাতায় আগে থেকেই নাম ছিল দিল্লির পশ্চিম পুরীর বাসিন্দা গগনের। ৩৩ বছরের ওই অপরাধীর বিরুদ্ধে দিল্লি এবং উত্তরপ্রদেশ মিলিয়ে মোট ১৪টি মামলা ঝুলছিল। তার মধ্যে রয়েছে খুন, খুনের চেষ্টা, ডাকাতির মতো অপরাধ। গগনকে ধরার জন্য এক লক্ষ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করেছিল দিল্লি পুলিশ।
তদন্তকারীদের দাবি, সেপ্টেম্বরের সেই রাতে একতার উপর হামলাকারীদের মধ্যে ছিলেন ১৯ বছরের বরুণ। তাঁর সঙ্গী ছিলেন আমির নামে আরও এক দুষ্কৃতী। অভিযোগ, স্কুটারে চড়ে ওই দু’জনই একতাকে লক্ষ্য করে গুলি চালিয়েছিলেন।
সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত রিপোর্ট অনুযায়ী, উত্তরাখণ্ডের বাসিন্দা একতা ও তাঁর সৎমা নিজেদের এলাকায় একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন চালাতেন। এলাকার রূপান্তরকামী তথা নিম্নবিত্তদের নানা ভাবে অর্থসাহায্য করাই ছিল ওই সংগঠনের কাজ।
এই খুনের কারণ হিসাবে অন্য তত্ত্ব তুলে ধরে দিল্লি পুলিশ। তাদের দাবি, দিল্লির ট্রান্স-যমুনা এলাকায় বিভিন্ন অনুষ্ঠানে টাকা তোলা নিয়ে রেষারেষি শুরু হয়েছিল একতা এবং তাঁর বিরুদ্ধ গোষ্ঠীর মধ্যে। তার জেরেই এই খুন।
রূপান্তরকামীদের ওই গোষ্ঠীর মধ্যে ছিলেন ফরিদাবাদের সোনম এবং বর্ষা নামে দু’জন। এ ছাড়া, জিটিবি এনক্লেভ এলাকার মনজুর ইলাহি এবং কমল নামের আরও দু’জনের সঙ্গে রেষারেষি ছিল একতার।
পুলিশের দাবি, কোটিপতি একতা এবং তাঁর সৎমা অনিতাকে খুনের সুপারি দিয়েছিলেন মঞ্জুর নামে এক রূপান্তরকামী। সে কাজে গগনকে ৫৫ লক্ষ টাকা দেওয়ার প্রতিশ্রুতিও দেন তিনি। অগ্রিম হিসাবে গগনকে তিন কিস্তিতে ১৫ লক্ষ টাকা দিয়েছিলেন মঞ্জুর।
দু’জনকে গ্রেফতারির পর দিল্লি পুলিশের স্পেশাল সেলের ডিসিপি জানিয়েছিলেন, মাস তিনেক ধরে একতার খুনিদের খোঁজ চালানো হয়েছিল। অবশেষে গোপন সূত্রে খবর পেয়ে তাঁদের ধরার জন্য ফাঁদ পাতে পুলিশ।
১০ এপ্রিল গগন এবং বরুণের গ্রেফতারির আগে পুলিশ খবর পেয়েছিল যে দিল্লির নিরঙ্কারী সমাগম মাঠে আসবেন ওই অভিযুক্তরা। ভোরের আলো ফোটারে আগেই ইনস্পেক্টর শিব কুমারের নেতৃত্বে দিল্লি পুলিশের স্পেশাল সেলের আধিকারিকেরা সেখানে পৌঁছে যান।
ভোর ৫টা নাগাদ পুলিশের নজরে পড়ে, মজলিস পার্ক মেট্রো স্টেশনের দিক থেকে একটি গাড়ি আসছে। পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, ওই গাড়িতে ছিলেন গগনরা।
গগনদের গাড়িকে হাত দেখিয়ে থামার নির্দেশ দিলেও পুলিশের কথায় কর্ণপাত করেননি তাঁরা। উল্টে পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি চালাতে থাকেন বলে দাবি।
গুলির লড়াইয়ের পর গ্রেফতার করা হয় গগন এবং বরুণকে। তাঁদের কাছ থেকে দু’টি পিস্তল-সহ পাঁচটি কার্তুজ বাজেয়াপ্ত করা হয়েছিল বলে জানিয়েছিলেন ডিসিপি কুশওয়াহা।
কুশওয়াহার দাবি, ‘‘একতার স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার জনপ্রিয়তায় হিংসে করতেন মঞ্জুর। ট্রান্স-যমুনা এলাকাটি ছিল মঞ্জুরের। যেখানে স্থানীয়দের থেকে টাকা তুলতেন একতারা। তবে মঞ্জুর চাইতেন না যে ওই এলাকায় একতারা টাকা তুলুন। সে কারণেই তাঁকে সরানোর ছক কষেছিলেন।’’ ওই ঘটনায় গগনরা ছাড়াও আরও চার জনকে গ্রেফতার করা হয়েছিল।