১৯১২ সালে ইংল্যান্ড থেকে নিউ ইয়র্কের উদ্দেশে যাত্রা শুরু করেছিল ‘টাইটানিক’ জাহাজটি। উত্তর আটলান্টিক মহাসাগরে হিমশৈলের সঙ্গে ধাক্কা লাগার পর মাঝসমুদ্রে ডুবে যায় জাহাজটি।
এই ঘটনার উপর ভিত্তি করে ১৯৯৭ সালে জেমস ক্যামেরনের পরিচালনায় বড় পর্দায় মুক্তি পেয়েছিল ‘টাইটানিক’ ছবিটি। কিন্তু টাইটানিকের এই কাহিনি নাকি বহু বছর আগে থেকেই উপন্যাসের পাতায় লেখা হয়ে গিয়েছে। এমনটাই দাবি করেন কনস্পিরেসি থিয়োরিস্টরা।
১৮৮৬ সালে ‘দ্য সিংকিং অফ আ মডার্ন লাইনার’ নামে একটি উপন্যাস প্রকাশিত হয়। ডব্লিউটি স্টিড নামের এক সাংবাদিক এই বইটি লিখেছিলেন।
এই উপন্যাসের সঙ্গে টাইটানিকের দুর্ঘটনার প্রচুর সাদৃশ্য খুঁজে পাওয়া যায়। এই উপন্যাসে স্টিড লিখেছিলেন যে, লিভারপুল থেকে একটি জাহাজ নিউ ইয়র্কের উদ্দেশে রওনা দিয়েছিল।
কিন্তু যাত্রাপথেই সেই জাহাজটি ডুবে যায়। লাইফবোট কম থাকার কারণে জাহাজে উপস্থিত সব যাত্রীকে বাঁচানো সম্ভব হয়নি। অদ্ভুত ভাবে এই সব কিছুই ঘটেছিল টাইটানিকের সঙ্গে।
উপন্যাস অনুযায়ী, লাইফবোটে উঠবেন বলে জাহাজের ডেকে যাত্রীদের ভিড় উপচে পড়েছিল। সকলকে সেখান থেকে সরাতে জাহাজের ক্যাপ্টেন বন্দুক বার করেন। হাওয়ায় গুলি চালান ক্যাপ্টেন। যাত্রীরা ভয়ে সরে যান। মনে করা হয় এমন ঘটনা বাস্তবেও ঘটেছিল। একই রকম দৃশ্য দেখানো হয়েছিল ‘টাইটানিক’ ছবিতেও।
শুধু স্টিডের লেখা বইতেই নয়, ১৮৯৬ সালে প্রকাশিত আরও একটি উপন্যাস ‘দ্য রেক অফ দ্য টাইটান’-এও উল্লেখ রয়েছে ‘টাইটানিক’-এর মতো এক ভয়াবহ ঘটনার। আমেরিকার লেখক মরগ্যান রবার্টসন এই উপন্যাসে জাহাজডুবি প্রসঙ্গে লিখেছেন।
মরগ্যান তাঁর বইতে যে জাহাজের কথা উল্লেখ করেছিলেন, তার নাম ‘টাইটান’। নিউ ফাউন্ডল্যান্ড এলাকার উপকূলের কাছে জাহাজটি ডুবে যায়। হিমশৈলের সঙ্গে সংঘর্ষের পর জাহাজের ক্ষতি হয়। সেই কারণেই জাহাজটি ডুবে যায়।
১৯০৮ সালের ঘটনা। এম ম্যাকডোনেল বদকিন তাঁর লেখা ‘দ্য শিপ রান’ উপন্যাসেও একটি জাহাজডুবির কথা উল্লেখ করেছেন। সেই জাহাজের নাম ছিল ‘টাইটানিক’।
বইয়ের পাতায় লেখা রয়েছে, ওই জাহাজটি আকারে সবচেয়ে বড়। এমনকি সবচেয়ে বেশি যাত্রী ধারণ করতেও সক্ষম এই জাহাজটি।
বদকিনের লেখা বইটি পড়লে মনে হবে, তিনি যেন বাস্তবে টাইটানিক জাহাজটি সম্পর্কে আগে থেকেই জানতেন। ঘটনার ৪ বছর আগে বইটি লেখা হয়েছিল। কিন্তু জাহাজের গঠনের বর্ণনা তিনি এমন ভাবে দিয়েছেন যে, পড়ে মনে হয় তিনি টাইটানিক জাহাজটি দেখেই বইটি লিখেছেন।
১৯১২ সালে টাইটানিক যাত্রা শুরুর আগে ‘দ্য হোয়াইট ঘোস্ট অফ ডিজ়াস্টার’ নামের একটি ছোট গল্প লেখা হয়েছিল। মেইন ক্লিউ গার্নেট ছদ্মনাম ব্যবহার করে বইটি লিখেছিলেন থর্নটন জেনকিন্স হেইনস।
হেইনসের গল্পে জাহাজের নাম ছিল ‘অ্যাডমিরাল’। প্রতি ঘণ্টায় ৪২ কিলোমিটার গতিবেগে যাওয়া জাহাজটিও হিমশৈলে ধাক্কা মারে।
টাইটানিকের মতো উত্তর আটলান্টিক মহাসাগরের মাঝেই ডুবে যায় ‘অ্যাডমিরাল’। সেই জাহাজেও পর্যাপ্ত লাইফবোট না থাকার কারণে যাত্রীদের অনেকেই বেঁচে ফিরতে পারেননি বলে গল্পে লিখেছেন থর্নটন।
টাইটানিক জাহাজ ডোবার আগে এই ঘটনার উল্লেখ এতগুলি উপন্যাসে হয়েছে, যা কাকতালীয় হলেও বাস্তবে মেনে নেওয়া কঠিন। লেখকের কল্পনার সঙ্গে বাস্তবের এমন মিল দেখে অনেক কনস্পিরেসি থিয়োরিস্ট দাবি করেন, ‘টাইটানিক’ ডোবার ঘটনা আগে থেকেই নির্ধারিত ছিল। তবে বেশির ভাগেরই মতে, ঘটনাগুলি একেবারেই কাকতালীয়।