প্রেসিডেন্টের আত্মীয় থেকে শুরু করে পদস্থ আমলাদের স্ত্রী। প্রত্যেকের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ অবস্থায় রয়েছেন আর্থিক দুর্নীতি দমন শাখার ডিরেক্টর স্বয়ং! সেই ধরনের একগুচ্ছ ভিডিয়ো ফাঁস হওয়ায় দেশ জুড়ে পড়ে গিয়েছে হুলস্থুল। এ হেন যৌন কেলেঙ্কারি কাণ্ডের তদন্তে নেমেছে সরকার।
সম্প্রতি বেশ কিছু যৌন টেপ সমাজমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ায় খবরের শিরোনামে এসেছে নিরক্ষীয় গিনি। সেখানে মধ্য আফ্রিকার দেশটির জাতীয় আর্থিক তদন্তকারী সংস্থার (ন্যাশনাল ফিন্যান্সিয়াল ইনভেস্টিগেশন এজেন্সি বা এএনআইএফ) অধিকর্তা বালতাসার ইবাং এনগোঙ্গাকে একাধিক নারীর সঙ্গে সঙ্গমরত অবস্থায় দেখা গিয়েছে।
বিষয়টি নজরে আসার পর এ হেন যৌন কেলেঙ্কারির ভিডিয়ো সমাজমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া আটকাতে চেষ্টার ত্রুটি রাখেনি নিরক্ষীয় গিনির সরকার। বেশ কয়েকটি জালিয়াতি মামলার তদন্তভার ছিল এনগোঙ্গার হাতে। ফলে এতে চক্রান্তের গন্ধ পাচ্ছে মধ্য আফ্রিকার দেশটির প্রশাসন।
যৌন কেলেঙ্কারির টেপ প্রকাশ্যে আসতেই এনগোঙ্গার বিরুদ্ধে তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তাঁকে কয়েক ঘণ্টা ধরে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। ফাঁস হওয়া ভিডিয়োয় প্রেসিডেন্টের এক আত্মীয়াকেও তাঁর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ অবস্থায় দেখা গিয়েছে। এ ছাড়া পুলিশের এক শীর্ষ আধিকারিকের স্ত্রী এবং ভ্রাতৃবধূর সঙ্গে এনগোঙ্গাকে যৌন সম্পর্কে লিপ্ত হতে দেখা গিয়েছে।
গিনি প্রশাসনের দাবি, ২০-র বেশি মন্ত্রীদের স্ত্রীর সঙ্গে সঙ্গমরত অবস্থায় থাকা আর্থিক জালিয়াতি দমন শাখার অধিকর্তার ভিডিয়ো ফাঁস হয়েছে। চার শতাধিক যৌন টেপ সমাজমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে বলে জানা গিয়েছে। যা অর্থ মন্ত্রক, এনগোঙ্গার দফতর, সরকারি বিশ্রামাগার এবং হোটেলে শুট করা হয়েছিল বলে প্রাথমিক ভাবে প্রমাণ মিলেছে।
এই ইস্যুতে ইতিমধ্যেই মুখ খুলেছেন নিরক্ষীয় গিনির ভাইস প্রেসিডেন্ট তেওডোরো এনগুয়েমা ওবিয়াং মাঙ্গু। এক্স হ্যান্ডলে (সাবেক টুইটার) করা একটি পোস্টে তিনি লিখেছেন, ‘‘ঘটনার সঙ্গে যে সমস্ত সরকারি কর্মচারী জড়িত, তাঁদের প্রত্যেককে অবিলম্বে বরখাস্ত করা হবে। কারণ, এটা তাঁদের আচরণবিধির পরিপন্থী। জনগণের নৈতিকতার আইনকে সরাসরি লঙ্ঘন করেছেন তাঁরা।’’
তদন্তকারীদের দাবি, প্রথমে এনগোঙ্গার যৌন ভিডিয়ো হোয়াটস্অ্যাপ গ্রুপে ছড়িয়েছিল। পরে তা ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম এবং টিকটকের মতো প্ল্যাটফর্মগুলিতে পোস্ট করা হয়। ভিডিয়োগুলি ভাইরাল করার নেপথ্যে কোনও চক্র কাজ করেছে কিনা, তা-ও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
দেশের শীর্ষ গোয়েন্দাকর্তার যৌন কেলেঙ্কারির ভিডিয়ো সারা দুনিয়ায় ছড়িয়ে পড়া আটকাতে টেলি যোগাযোগ মন্ত্রককে বিশেষ নির্দেশ দিয়েছে গিনি সরকার। সূত্রের খবর, এ ব্যাপারে সমাজমাধ্যম পরিচালন সংস্থাগুলির সঙ্গেও যোগাযোগ করছে মধ্য আফ্রিকার দেশটির প্রশাসন।
‘‘এই ঘটনায় বহু পরিবার চোখের সামনে ধ্বংস হওয়ার উপক্রম হয়েছে। এটা আমরা সরকারে থেকে দেখতে পারি না।’’ এই ইস্যুতে বলেছেন গিনির ভাইস প্রেসিডেন্ট তেওডোরো এনগুয়েমা ওবিয়াং।
এনগোঙ্গার বাবা বালতাসার এনগোঙ্গা আদজো বর্তমানে ‘সেন্ট্রাল আফ্রিকান ইকোনমিক অ্যান্ড মিলিটারি কমিউনিটি কমিশন’-এর চেয়ারম্যান পদে রয়েছেন। সুদর্শন চেহারার জন্য গিনির আর্থিক তদন্ত সংস্থার অধিকর্তাকে সকলে আদর করে ‘বেলো’ বলে ডাকেন। কী ভাবে এত জনের সঙ্গে তিনি যৌন সম্পর্কে জড়িয়ে পড়লেন, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
এনগোঙ্গার যৌন কেলেঙ্কারির তদন্তে নেমেছে মধ্য আফ্রিকার দেশটির অ্যাটর্নি জেনারেলের দফতর। যার নেতৃত্বে রয়েছেন আনাতোলিয়ো এনজাং এনগুয়েমার। অ্যাটর্নি জেনারেলের দফতরের মুখপাত্র বলেছেন, ‘‘এনগোঙ্গার ক্রিয়াকলাপ শুধু যে নৈতিকতার দিক থেকে প্রশ্ন তুলেছে তাই নয়, মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকির দিকেও তা ইঙ্গিত করছে।’’
সাম্প্রতিক অতীতে এএনআইএফের অধিকর্তা কোন কোন আর্থিক জালিয়াতির তদন্ত করছিলেন তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। মন্ত্রী বা মন্ত্রী-পত্নীরা তাঁরা আওতায় ছিলেন কিনা, সেটাও বোঝার চেষ্টা হচ্ছে। যার উপর ভিত্তি করে এনগোঙ্গা তাঁদের ব্ল্যাকমেল করেন বলে মনে করা হচ্ছে।
গিনি প্রশাসন সূত্রে খবর, অভিযোগ প্রমাণিত হলে গোয়েন্দাকর্তাকে বাকি জীবন জেলে কাটতে হতে পারে। তাঁর দফতরের কম্পিউটার-সহ যাবতীয় নথি পরীক্ষার কাজ চালাচ্ছেন তদন্তকারীরা।
যৌন কেলেঙ্কারির পাশাপাশি এই ঘটনায় আর্থিক লেনদেনের সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। ফলে এনগোঙ্গার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট ও সম্পত্তির হিসাব কষা শুরু হয়েছে। বিদেশের ব্যাঙ্কে তাঁর কোনও সম্পদ জমা রয়েছে কিনা, তাও জানার চেষ্টা হচ্ছে।
নিরক্ষীয় গিনির আমজনতার একাংশ আর্থিক দুর্নীতি দমন শাখার শীর্ষ গোয়েন্দা কর্তার পদত্যাগ দাবি করেছেন। এই ঘটনায় গোপনীয়তার যাবতীয় অধিকর্তা ভঙ্গ হয়েছে বলেও আওয়াজ তুলেছেন তাঁরা।