‘হাল ছেড়ো নো’। ছোটবেলা থেকে এই পরামর্শ কমবেশি সকলেই শুনে থাকেন। কিন্তু মেনে চলতে পারেন ক’জন? ভেলুমানি পেরেছিলেন। তাই এই কৃষকের সন্তান এখন পৃথিবীর অন্যতম বড় থাইরয়েড পরীক্ষা সংস্থার মালিক।
এক সময় দু’বেলা খাবার জুটত না। গায়ে পরার জামা, পায়ের চটি ছিল না। সেই আরিকিয়াস্বামী ভেলুমানি এখন হাজার কোটি টাকার মালিক। নেপথ্যে শুধুই তাঁর কঠোর পরিশ্রম। তিনি নিজেই একটি সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন, এক সময় পিরামিডের ১০ ধাপ নীচের স্তরে ছিলেন। এখন সেই পিরামিডের শীর্ষে। রাস্তাটা যদিও সহজ ছিল না।
কোয়ম্বত্তূরের কাছে একটি গ্রামে জন্ম ভেলুমানির। তাঁর বাবা ছিলেন গরিব কৃষক। ভেলুমানি এবং তাঁর ভাইবোনেদের এক জোড়া প্যান্ট বা চটি কিনে দেওয়ারও ক্ষমতা ছিল না তাঁদের বাবার।
সেই ভেলুমানি পরবর্তী কালে তৈরি করে ফেলেন নিজের সংস্থা। সেই সংস্থার এখন ভারত, নেপাল, বাংলাদেশ, পশ্চিম এশিয়ার বিভিন্ন দেশে ১,১২২টি বিপণি রয়েছে।
ভেলুমানির মায়ের মহিষ ছিল। সেই দুধ দুইয়ে তিনি সামান্য রোজগার করতেন। সেই দিয়ে ভেলুমানি এবং তাঁর তিন ভাইবোনের পেট চলত। ১০ বছর এ ভাবেই চলেছিল।
১৯ বছর বয়সে বিজ্ঞানে স্নাতক পাশ করেন ভেলুমানি। তার পর কোয়ম্বত্তূরের একটি সংস্থায় চাকরি নেন। সেখানে তাঁর বেতন ছিল ১৫০ টাকা। সেই আমলে শহরের নিরাপত্তারক্ষীরাও তাঁর থেকে বেশি বেতন পেতেন।
নিজের বেতন থেকে প্রতি মাসে ১০০ টাকা বাড়িতে পাঠাতেন ভেলুমানি। বাকি ৫০ টাকায় নিজে সারা মাস চালাতেন। এ ভাবে ৪ বছর কেটে যায়।
তার পর এক দিন সেই ওষুধ প্রস্তুতকারী সংস্থাও বন্ধ হয়ে যায়। পকেটে ৪০০ টাকা নিয়ে মুম্বই পাড়ি দেন ভেলুমানি।
মুম্বইতে ভাবা পরমাণু গবেষণা কেন্দ্রে চাকরি পান ভেলুমানি। ১৪ বছর সেখানে চাকরি করেন। তার পর থাইরয়েড জীবরসায়ন নিয়ে গবেষণার জন্য সেই চাকরি ছেড়ে দেন।
প্রভিডেন্ট ফান্ডের এক লক্ষ টাকা দিয়ে মুম্বইয়ের বাইকুল্লায় থাইরয়েড পরীক্ষা সংস্থার গড়ে তোলেন। পাশে ছিলেন স্ত্রী সুমতি। তাঁর মনে হয়েছিল, থাইরয়েড চিকিৎসার প্রসার সম্ভব ভারতে।
সুমতি স্টেট ব্যাঙ্কে চাকরি করতেন। সেই চাকরি ছেড়ে স্বামীর সংস্থায় যোগ দেন। তিনিই ভেলুমানির সংস্থার প্রথম কর্মী। ভেলুমানি এই প্রসঙ্গে বলেছিলেন, ‘‘বিবাহিত জীবনের মতো ব্যবসাও অনন্য। রোজ নতুন কিছু শেখা যায়।’’
ভেলুমানির উদ্দেশ্য ছিল থাইরয়েড পরীক্ষার খরচ সকলের সাধ্যের মধ্যে রাখা। সেই ভেবেই ১৯৯৬ সালে সংস্থার পথচলা শুরু।
এর পর ব্যবসা মডেলেও পরিবর্তন করেন ভেলুমানি। তিনি জানান, আগে দিনে একটি গবেষণাগারে দিনে দু’টির বেশি নমুনা পরীক্ষা হত না। তিনি তাই ফ্র্যাঞ্চাইজ়ি ব্যবস্থা চালু করেন। এর ফলে ভেলুমানির সংস্থার অধীনে আরও অনেক বিপণি নমুনা পরীক্ষা করতে সমর্থ হয়। ফলে রোগীদের অপেক্ষার সময় কমে যায়।
থাইরয়েডের পাশাপাশি ক্যানসার, ডায়বেটিস, বন্ধ্যত্বের পরীক্ষা চালু করে ভেলুমানির সংস্থা।
প্রতিষ্ঠার ২০ বছর পর ২০১৬ সালে ভেলুমানির সংস্থার মোট সম্পত্তির পরিমাণ ছিল ৩,৩৭৭ কোটি টাকা।
২০২০ সালে ভেলুমানির সংস্থার রাজস্বের পরিমাণ ছিল ৪৭৪ কোটি। লাভের পরিমাণ ছিল ১১৯.৭ কোটি টাকা।
ভেলুমানি নিজেই জানান, ঝুঁকি নিয়েছিলেন, নিজের প্রভিডেন্ট ফান্ডের টাকা বিনিয়োগ করেছিলেন বলেই এই সাফল্য পেয়েছেন। নিজের পথচলা নিয়ে প্রায়ই একটা কথা বলেন ভেলুমানি। তিনি বলেন, ‘‘দু’ধরনের গরিব মানুষ দেখা যায়। এক, যাঁরা নিজেদের দারিদ্র উপভোগ করেন। দুই, যাঁরা এর জন্য ভোগেন। প্রথম ধরনের মানুষ খুব তাড়াতাড়ি দারিদ্র কাটিয়ে উঠতে পারেন। দ্বিতীয় ধরনের মানুষ দরিদ্রই থেকে যান।’’