গুগ্ল এবং অ্যালফাবেটের সিইও সুন্দর পিচাই। ভারতীয় বংশোদ্ভূত এই আমেরিকান বিশ্বের ধনীতম ব্যক্তিদের তালিকায় রয়েছেন। তাঁর সংস্থা গুগ্ল মানুষের দৈনন্দিন জীবনের সঙ্গে ওতপ্রোত ভাবে জড়িয়ে।
২ লক্ষ ১৪ হাজার কোটি ডলারের সংস্থা চালান পিচাই। ভারতীয় সিইওদের মধ্যে সারা বিশ্বে তাঁর আয়ই সবচেয়ে বেশি। ভারতের অন্যতম সফল ব্যক্তিদের মধ্যে প্রথম সারিতে রয়েছেন পিচাই।
এ হেন পিচাইয়ের এক কর্মচারী কিন্তু তাঁর চেয়েও বেশি ধনী! তিনিও পিচাইয়ের মতো ভারতের এক আইআইটির ছাত্র ছিলেন। বর্তমানে গুগ্ল ক্লাউড সংস্থার সঙ্গে যুক্ত।
কথা হচ্ছে থমাস কুরিয়ানকে নিয়ে। গুগ্লের অন্তর্গত একটি পৃথক সংস্থা গুগ্ল ক্লাউড। যা মানুষকে ক্লাউড কম্পিউটিং পরিষেবা প্রদান করে থাকে। সেই গুগ্ল ক্লাউডের সিইও কুরিয়ান।
কেরলের প্যামপাডি গ্রামে জন্মেছিলেন কুরিয়ান। পিচাইয়ের মতো তিনিও এখন ভারতীয় বংশোদ্ভূত আমেরিকান নাগরিক। তাঁর সম্পত্তির পরিমাণ পিচাইয়ের চেয়েও বেশি।
পরিসংখ্যান বলছে, ২০২২ সালে পিচাইয়ের আয়ের পরিমাণ ছিল ১,৮৮৬ কোটি টাকা। ওই বছর তাঁর মোট সম্পত্তি পেরিয়ে গিয়েছিল ১০ হাজার কোটি টাকার গণ্ডিও। কিন্তু কুরিয়ান আয় করেছেন তাঁর চেয়েও বেশি।
বর্তমানে পিচাই ১৩ হাজার কোটির সম্পত্তির মালিক। তাঁর মোট সম্পত্তির পরিমাণ ১৩,৮৫৯ কোটি টাকা। কিন্তু তাঁরই অধীনে গুগ্ল ক্লাউডে কর্মরত কুরিয়ানের সম্পত্তির পরিমাণ ১৫ হাজার কোটি টাকা।
কেরলের গ্রামেই জন্ম, সেখানেই বেড়ে ওঠেন কুরিয়ান। তাঁর বাবা ছিলেন কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার। মা পেশায় শিক্ষিকা। সুতরাং, ছোট থেকেই পরিবারে উচ্চশিক্ষার আবহ পেয়েছিলেন তিনি।
কুরিয়ানের এক যমজ ভাই রয়েছেন। তাঁর নাম জর্জ কুরিয়ান। তথ্যপ্রযুক্তির দুনিয়ায় তিনিও দাদার মতোই সফল। জর্জ এখন নেটঅ্যাপ নামক একটি বহুজাতিক সংস্থার সিইও পদে রয়েছেন।
বেঙ্গালুরুর স্কুলে পড়াশোনা করেছিলেন কুরিয়ানেরা। পরে দুই ভাই আইআইটি মাদ্রাজে পড়ার সুযোগ পান। থমাস সেখানে কয়েক বছর পড়লেও কোর্স সম্পূর্ণ হওয়ার আগেই বেরিয়ে গিয়েছিলেন। আইআইটির পড়া সম্পূর্ণ করেননি।
থমাস এবং তাঁর ভাই দু’জনেই এর পর উচ্চশিক্ষার জন্য আমেরিকা পাড়ি দিয়েছিলেন। নিউ জার্সির প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ে শুরু হয় তাঁদের পড়াশোনা।
প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে স্নাতক পাশ করেন কুরিয়ান। এর পর স্ট্যানফোর্ড গ্র্যাজুয়েট স্কুল অফ বিজ়নেস থেকে এমবিএ সম্পূর্ণ করেন।
ম্যাক্কিনসে সংস্থা থেকে নিজের পেশাগত কেরিয়ার শুরু করেছিলেন কুরিয়ান। ১৯৯৬ সালে সেই চাকরি ছেড়ে যোগ দেন ওরাক্ল নামক সংস্থায়। সেখানেই কাটিয়ে দেন দীর্ঘ ২২ বছর।
তথ্যপ্রযুক্তির জগতে এই ২২ বছরে কার্যত রকেটের গতিতে উত্থান হয় কুরিয়ানের। আমেরিকায় আর তাঁকে পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। সংস্থাকে একাধিক সাফল্য এনে দিয়েছিলেন তিনি। পদোন্নতিও হয়েছে পাল্লা দিয়ে।
ওরাক্লে বিশ্বের অন্তত ৩২টি দেশের ৩৫ হাজারের বেশি কর্মচারী কুরিয়ানের অধীনে কাজ করেছেন। কিন্তু এক সময়ে সংস্থার অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ল্যারি এলিসনের সঙ্গে মতানৈক্যের কারণে তাঁকে পদত্যাগ করতে হয়।
২০১৮ সালে ওরাক্ল ছাড়েন কুরিয়ান। পরিবর্তে যোগ দেন গুগ্লে। গুগ্ল ক্লাউডের সিইও পদে থমাসের একাধিক সাফল্য গত ছ’বছরে নজর কেড়েছে। সংস্থাকে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়ে সাফল্যের সিঁড়িতে তুলে দিয়েছেন কুরিয়ান।
কুরিয়ানের কেরিয়ারের দিকে নজর দিলে একটি জায়গাতেই খটকা লাগে। তা হল, তাঁর আইআইটি ছেড়ে মাঝপথে বেরিয়ে যাওয়া। অনেকেই প্রশ্ন তোলেন, আইআইটির মতো প্রতিষ্ঠানে পড়ার সুযোগ পেয়েও কেন তা সম্পূর্ণ কাজে লাগালেন না কুরিয়ান?
কুরিয়ান নিজেই এই প্রশ্নের উত্তর একাধিক জায়গায় দিয়েছেন। তিনি জানিয়েছেন, এর নেপথ্যে তেমন বড় কোনও কারণ নেই। সে সময়ে প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডাক পেয়েছিলেন কুরিয়ান। সেখানে একটি কোর্সে ভর্তি হওয়ার সুযোগ এসেছিল। সেই কারণেই আইআইটি মাঝপথে ছেড়ে ছুটেছিলেন সুদূর আমেরিকায়।
ভারতীয় বংশোদ্ভূত যে সমস্ত ধনী ব্যবসায়ী এবং শিল্পপতিরা এখন সারা বিশ্বে ছড়ি ঘোরাচ্ছেন, কুরিয়ান তাঁদের মধ্যে অন্যতম। শেষ ছ’বছর ধরে তিনি গুগ্ল ক্লাউডের সিইও। আগামী দিনে এই সংস্থাতে থেকেই আরও উজ্জ্বল হয়ে উঠতে চান নিজের কাজের মাধ্যমে, একাধিক সাক্ষাৎকারে তেমনটাই জানিয়েছেন।