বর্তমানে ভারত বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল দেশ। ভারতে জন্মহার বৃদ্ধিকে মাথায় রেখে কেন্দ্রকে একসময় ‘হাম দো হামারে দো’র মতো স্লোগানের কথাও ভাবতে হয়েছিল।
তবে ঠিক এর বিপরীতে এমন একটি দেশ রয়েছে যেখানে ৯৬ বছর ধরে কোনও শিশু জন্মগ্রহণ করেনি। এমনকি কোনও হাসপাতালও নেই সেই দেশে।
একবিংশ শতাব্দীতে এসে কোনও দেশে একটিও হাসপাতাল নেই, এ কথা কি বিশ্বাস করা যায়? অবিশ্বাস্য মনে হলেও সে কথা সত্যি। তেমনটাই উঠে এসেছে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে।
কথা হচ্ছে পৃথিবীর ক্ষুদ্রতম দেশ ‘ভ্যাটিকান সিটি’র, রোমান ক্যাথলিক গির্জার প্রধানের আবাসস্থল।
ভ্যাটিকান সিটি বিশ্বের সবচেয়ে ছোট দেশ। ভ্যাটিকান সিটি বা ভ্যাটিকান সিটি স্টেট একটি স্থলবেষ্টিত দেশ। অতীতে দেশটি ইতালির রোমের অংশ ছিল।
১৯২৯ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি ‘ল্যাটেরান চুক্তি’র মাধ্যমে ইতালি থেকে আলাদা হয়ে স্বাধীন দেশ হিসাবে আত্মপ্রকাশ করে ভ্যাটিকান সিটি। বিশ্বব্যাপী সমস্ত ক্যাথলিক গির্জা এবং ক্যাথলিক খ্রিস্ট ধর্মাবলম্বীরা মনে করেন, ভ্যাটিকান সিটিতেই তাঁদের শিকড় লুকিয়ে।
আশ্চর্যজনক বিষয় হল, স্বাধীন দেশ হিসাবে স্বীকৃতি পাওয়ার পর আজ পর্যন্ত ভ্যাটিকান সিটিতে একটিও শিশু জন্মগ্রহণ করেনি। অর্থাৎ, ১৯২৯ সালের পর সে দেশে কোনও শিশু জন্ম নেয়নি।
দেশ গঠনের পর থেকে কোনও হাসপাতালও তৈরি হয়নি ভ্যাটিকান সিটিতে। অসংখ্য আর্জি জানানো সত্ত্বেও নাকি সে দেশে হাসপাতাল নির্মাণের অনুমতি মেলে না। ফলস্বরূপ, গুরুতর অসুস্থ ব্যক্তি বা অন্তঃসত্ত্বাদের চিকিৎসার জন্য রোমে যেতে হয়।
মনে করা হয়, সীমিত ভৌগোলিক আকার এবং প্রতিবেশী রোমে উচ্চমানের চিকিৎসা ব্যবস্থা থাকার কারণেই নাকি দেশের মধ্যে হাসপাতাল না তৈরি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ভ্যাটিকান কর্তৃপক্ষ।
ভ্যাটিকান সিটি মাত্র ১১৮ একর জমি জুড়ে বিস্তৃত। এর ফলে চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় সকল রোগীকে রোমের হাসপাতাল বা চিকিৎসাকেন্দ্রে স্থানান্তরিত করতে খুব বেশি সময়ের প্রয়োজন হয় না।
অধিকন্তু, ভ্যাটিকান সিটির মধ্যে কোনও প্রসূতিবিভাগ না থাকার কারণেও সে দেশের সীমানার মধ্যে কোনও শিশু জন্ম নেয় না। এর থেকেই স্পষ্ট যে, কেন বিগত প্রায় ১০০ বছরে ভ্যাটিকান সিটিতে কোনও শিশুর জন্ম রেকর্ড করা হয়নি।
ভ্যাটিকান সিটির জনসংখ্যা সর্বসাকুল্যে ৮০০-৯০০ জন। এঁদের মধ্যে অনেকেই বর্ষীয়ান ক্যাথলিক ধর্মযাজক। ভ্যাটিকান সিটির জনসংখ্যা কম হলেও অপরাধের হার উল্লেখযোগ্য ভাবে বেশি।
সেই সব অপরাধের মধ্যে বেশির ভাগই দোকান লুট, ব্যাগ ছিনতাই এবং পকেটমারির মতো ঘটনা। তবে এই পরিস্থিতি তৈরির জন্য বিদেশি পর্যটকদেরই দায়ী করেন স্থানীয়েরা।
ভ্যাটিকান সিটিতে বিশ্বের সবচেয়ে ছোট রেলওয়ে স্টেশনও রয়েছে। ‘সিটা ভ্যাটিকানো’ নামে ওই স্টেশনে দু’টি রেললাইন রয়েছে। প্রতিটির দৈর্ঘ্য ৩০০ মিটার।
পোপ পিয়াস একাদশের শাসনকালে নির্মিত রেললাইন এবং স্টেশনটি কেবল পণ্য পরিবহনের জন্য তৈরি করা হয়েছিল। যাত্রিবাহী ট্রেন ভ্যাটিকান সিটির মধ্যে চলাচল করে না।
ব্রিটেন নিয়ন্ত্রিত দ্বীপপুঞ্জ পিটকেয়ার্নের জনসংখ্যা ৫০ জনেরও কম। ফলস্বরূপ, বেশ কয়েক বছর ধরে সেখানেও কোনও শিশুর জন্ম হয়নি। তবে পিটকেয়ার্ন কোনও দেশ নয়।