দু’বছর বলিপাড়ায় কাজ করেও বিশেষ লাভ হয়নি। হঠাৎ তারকাবহুল ছবিতে কাজ করার সুযোগ পেয়ে রাজি হয়ে গিয়েছিলেন নায়িকা। কিন্তু ঘনিষ্ঠ দৃশ্যে অভিনয় করতে হবে সে কথা আগে থেকে জানানো হয়নি তাঁকে। শুটিং শুরুর আগে তা জানতে পেরে মানসিক ভাবে ভেঙে পড়েছিলেন বলি অভিনেত্রী অঞ্জনা সুখানী।
১৯৭৮ সালের ডিসেম্বর মাসে রাজস্থানের জয়পুরে জন্ম অঞ্জনার। তার পর জয়পুর ছেড়ে মহারাষ্ট্রের মুম্বইয়ে চলে যান তিনি। বাবা-মা এবং ভাইবোনের সঙ্গে সেখানেই থাকতেন তিনি। মুম্বই থেকে স্কুলের পড়াশোনা শেষ করে উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশে পাড়ি দেন অঞ্জনা।
ব্রিটেনের একটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আন্তর্জাতিক ব্যবসা নিয়ে পড়াশোনা করে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন অঞ্জনা। কিন্তু তাঁর অভিনয়ের প্রতি আগ্রহ ছিল। অভিনয় নিয়ে কেরিয়ার গড়বেন বলে মুম্বই ফিরে যান তিনি।
মডেলিংয়ের মাধ্যমে কেরিয়ার শুরু করেন অঞ্জনা। নামী সংস্থার বিজ্ঞাপনী প্রচারে অভিনয় করতে শুরু করেন তিনি। বলিউডের ‘শাহেনশা’ অমিতাভ বচ্চনের সঙ্গেও বিজ্ঞাপনে অভিনয়ের সুযোগ পান অঞ্জনা।
মিউজ়িক ভিডিয়োতেও অভিনয় করেন অঞ্জনা। ২০০৫ সালে মুক্তি পাওয়া ‘হম দম’ নামের একটি হিন্দি ছবিতে মুখ্যচরিত্রে অভিনয়ের সুযোগ পান তিনি। কিন্তু ছবিটি কবে প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেল, আর কবে বা বিদায় নিল তা দর্শক জানতেই পারেননি।
২০০৫ সালে তেলুগু ভাষার একটি ছবিতে অভিনয় করেন অঞ্জনা। এর পর একাধিক হিন্দি ছবিতে অভিনয় করেও বিশেষ লাভ হয়নি নায়িকার। কানাঘুষো শোনা যায়, বলিউডের কারও সঙ্গে যোগাযোগ না থাকার কারণে নাকি ভাল কাজ পাচ্ছিলেন না তিনি।
অনিল কপূর, জুহি চাওলা, গোবিন্দ, সলমন খান, প্রিয়ঙ্কা চোপড়া জোনাস, অক্ষয় খন্না, আয়েশা টাকিয়া, জন আব্রাহম, বিদ্যা বালনের মতো একাধিক জনপ্রিয় বলি তারকার সঙ্গে একই ছবিতে অভিনয়ের প্রস্তাব পান অঞ্জনা। এই প্রস্তাব কোনও ভাবেই ফেরাতে চাননি তিনি।
২০০৭ সালে প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায় তারকাবহুল ছবি ‘সালাম-এ-ইশ্ক’। এই ছবিতে অনিলের বিপরীতে অভিনয় করতে দেখা যায় অঞ্জনাকে। কিন্তু নায়িকা কল্পনা করতে পারেননি যে এই ছবির শুটিংয়ের সময় খারাপ অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হতে হবে তাঁকে।
সম্প্রতি ‘বলিউড হাঙ্গামা’কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকার অঞ্জলি জানান যে, তাঁকে যে ছবিতে ঘনিষ্ঠ দৃশ্যে অভিনয় করতে হবে সে কথা চিত্রনাট্যের খসড়া পাঠের সময় জানাননি ছবিনির্মাতারা। সেটে পৌঁছে সেই দৃশ্য শুট করার কয়েক মিনিট আগে তা জানতে পারেন নায়িকা।
অঞ্জনা বলেন, ‘‘আমায় আগে বলাই হয়নি যে সহ-অভিনেতাকে চুমু খাওয়ার দৃশ্যে অভিনয় করতে হবে। ওখানে গিয়ে জানতে পারি আমি। তখন সকলেই প্রস্তুত হয়ে রয়েছে। সব জানার পর কী করব বুঝতে পারছিলাম না। সেটে আমার কোনও বন্ধু ছিল না। প্রিয়ঙ্কা চোপড়া জোনাসও সে দিন সেটে উপস্থিত ছিলেন না। আমার বুক ফেটে কান্না আসছিল।’’
অঞ্জনার কথায়, ‘‘খসড়া পাঠের সময় জানাতে না পারলেও আমায় যদি ঘনিষ্ঠ দৃশ্যটি শুট করার ঘণ্টাখানেক আগেও জানানো হত তবুও আমি মানসিক প্রস্তুতি নিতে পারতাম। আমি তো নিজেকে সময় দিতেই পারলাম না। সরাসরি শুট করে ফেললাম।’’
অঞ্জনা বলেন, ‘‘আমি ইন্ডাস্ট্রিতে নতুন। কোনও প্রশ্ন করা উচিত হবে কি না বুঝতে পারছিলাম না। ভাবছিলাম আমায় যদি কেউ বলেন যে, দৃশ্যটি ছবির জন্য গুরুত্বপূর্ণ। আমি তা নিয়ে প্রশ্ন করছি শুনে যদি আমায় বার করে দেন কেউ, আমি যদি ছবিতে অভিনয় করতে না পারি— মাথায় এমন নানা ধরনের চিন্তা ঘুরপাক খাচ্ছিল। তাই চুপচাপ ওই দৃশ্যে অভিনয় করে আমি চলে গিয়েছিলাম।’’
‘গোলমাল রিটার্নস’, ‘জয় বীরু’, ‘শানদার’, ‘গুড নিউজ়’, ‘মুম্বই সাগা’র মতো একাধিক ছবিতে অভিনয় করতে দেখা গিয়েছে অঞ্জনাকে। হিন্দি ছবির পাশাপাশি তামিল, তেলুগু, পঞ্জাবি এবং মরাঠি ভাষার ছবিতেও অভিনয় করেছেন তিনি।
২০২২ সালে ‘সাস বহু আচার প্রাইভেট লিমিটেড’ নামের সিরিজ়ে অভিনয় করতে দেখা গিয়েছে অঞ্জনাকে। চলতি বছরে ‘বড়া নাম করেঙ্গে’ নামের একটি হিন্দি ধারাবাহিকে অভিনয় করছেন তিনি।
বলিপাড়ায় কানাঘুষো শোনা যায়, রেহান খান নামের এক অভিনেতার সঙ্গে নাকি সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েছিলেন অঞ্জনা। তবে সেই সম্পর্ক বেশি দিন টেকেনি।
সমাজমাধ্যমে নিজস্ব অনুরাগীমহল তৈরি করে ফেলেছেন অঞ্জনা। ইতিমধ্যেই ইনস্টাগ্রামের পাতায় তাঁর অনুগামীর সংখ্যা দু’লক্ষের গণ্ডি পার করে গিয়েছে।