সম্পর্কে ইতি টানতে চাইছিলেন তরুণী। রাজি ছিলেন না প্রেমিক। তাই সম্পর্ক থেকে মুক্তি পেতে প্রেমিককে বিষ খাইয়ে খুন! অভিযোগ উঠল তরুণী প্রেমিকার বিরুদ্ধে। কেরলের তিরুঅনন্তপুরমের ঘটনা।
অভিযুক্ত তরুণীকে ইতিমধ্যেই গ্রেফতার করেছে পুলিশ। অভিযুক্ত তরুণীর নাম গ্রীষ্মা।
পুলিশ সূত্রে খবর, মৃত প্রেমিক শ্যারন রাজ (২৩) এক জন কলেজ পড়ুয়া। স্থানীয় কলেজে তিনি রেডিয়োলজি নিয়ে পড়াশোনা করতেন। অভিযুক্ত গ্রীষ্মাও তাঁর সঙ্গে একই কলেজে পড়াশোনা করতেন।
বেশ কিছু দিন ধরেই শ্যারনের সঙ্গে প্রণয়ের সম্পর্কে বিচ্ছেদ চাইছিলেন গ্রীষ্মা। সেই নিয়ে ওই যুগলের মধ্যে অনেক বার কথাও হয়েছিল।
গ্রীষ্মা এই সম্পর্ক থেকে বেরিয়ে আসতে চাইলেও সম্পর্ক ছেড়ে বেরিয়ে আসতে রাজি হননি শ্যারন। এর পরই ‘পথের কাঁটা’ সরানোর সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন গ্রীষ্মা।
কিন্তু কী ভাবে প্রেমিককে মারার পরিকল্পনা করলেন প্রেমিকা? ১৪ অক্টোবর শ্যারনকে বাড়িতে ঢেকে পাঠান গ্রীষ্মা। এই সময় তাঁর বাড়িতে গ্রীষ্মা একাই ছিলেন।
শ্যারন বাড়িতে এলে গ্রীষ্মা তাঁকে এক গ্লাস আয়ুর্বেদিক সরবত খেতে দেন। কিন্তু এই পানীয়ের মধ্যে গ্রীষ্মা কীটনাশক মিশিয়ে দিয়েছিলেন।
কীটনাশক মেশানো সরবত খাওয়ার পরই বমি করতে শুরু করেন শ্যারন। এর পর এক বন্ধুকে ফোন করে ডেকে পাঠিয়ে সেই বন্ধুর সঙ্গে বাড়ির উদ্দেশে রওনা দেন তিনি। পরে শ্যারনের অবস্থার অবনতি হলে তাঁকে স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়।
এর পর স্থানীয় হাসপাতালে ১১ দিন ভর্তি থাকার পর ২৫ অক্টোবর মারা যান শ্যারন। তাঁর পরিবারের দাবি ছিল, শ্যারনের মৃত্যু স্বাভাবিক নয়। খুন করা হয়েছে শ্যারনকে।
শ্যারনের ভাইয়ের প্রথম থেকেই গ্রীষ্মার উপর সন্দেহ জাগে। শ্যারনকে হাসপাতালে ভর্তি করানোর পর থেকেই তাঁর ভাই গ্রীষ্মাকে ফোন করে জানতে চান যে, তিনি শ্যারনকে কিছু খাইয়েছেন কি না।
আর যদি কিছু বিষাক্ত খাওয়ানো হয়ে থাকে, তা হলে কী খাওয়ানো হয়েছে তা যেন তিনি জানান। তবে গ্রীষ্মা কোনও উত্তর দেননি।
শ্যারনের মৃত্যুর পর তদন্তে নামে তিরুঅনন্তপুরমের পুলিশ। গ্রেফতার করা হয় গ্রীষ্মাকে। রবিবার ৩০ অক্টোবর পুলিশ গ্রীষ্মাকে টানা আট ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদের পর তিনি নিজের দোষ স্বীকার করেন।
পুলিশকে গ্রীষ্মা জানান, তিনি এবং শ্যারন এক বছর ধরে সম্পর্কে ছিলেন। চলতি বছরের গোড়ার দিকে তাঁদের মধ্যে কিছু সমস্যা দেখা দিয়েছিল।
এরই মধ্যে গ্রীষ্মার বিয়ে অন্য এক জনের সঙ্গে ঠিক করে তাঁর পরিবার। সম্প্রতি শ্যারনকে এই সম্পর্ক ভেঙে দেওয়ার কথা বলেন গ্রীষ্মা। অনেক বোঝানোর পরও শ্যারন রাজি হননি। শ্যারনকে বোঝাতে গ্রীষ্মা যুক্তি দিয়েছিলেন যে, জন্মপত্রিকা অনুসারে তাঁর প্রথম স্বামী মারা যাবে। আর সেই কারণেই তিনি শ্যারনকে ছাড়তে চান।
এর পরেও শ্যারন রাজি না হওয়ায় তাঁকে খুন করার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন গ্রীষ্মা। আর সেই মতোই শ্যারনকে বাড়িতে ডেকে কীটনাশক মেশানো সরবত খাওয়ান তিনি।
তিরুঅনন্তপুরমের অতিরিক্ত ডিজিপি অজিত কুমার জানিয়েছেন যে, প্রেমিকাকে খুন করার অভিযোগে ইতিমধ্যেই অভিযুক্ত গ্রীষ্মাকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
জেলাশাসকের কাছে গ্রীষ্মার স্বীকারোক্তি রেকর্ড করা হয়েছে বলেও অতিরিক্ত ডিজিপি জানান।